কবি নির্মলেন্দু গুণের বাড়িতে একদিন

কবির গ্রাম। ছবি: লেখক
কবির গ্রাম। ছবি: লেখক

‘জন্মেছিলাম সাত আষাঢ়ের বৃষ্টিভেজা ভোরে

আঁতুড়ঘরে তুষ ভিজেছে উশ্যিলার তরে’


ওপরের দুটি লাইন থেকে অজপাড়া গাঁয়ের কিছুটা সুবাতাস পাই। হুম, এখানে কোনো সৌন্দর্যের মহিমার তেমন দেখা মিলবে না। দেখতে পাবেন কবির বেড়ে ওঠা গ্রামের চিত্রটা।

কবি-সাহিত্যিকদের বাড়িতে যাঁদের ঘুরাঘুরি করার অভ্যাস, তারা আসতে পারেন নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলায় অবস্থিত কাশবন গ্রামে। কাশবন নামের পেছনেও ছোট্ট একটি গল্প জড়িয়ে আছে, যেটা কবির লিখা থেকে আমরা সহজে বুঝতে পারব,

‘আমার একটি ছোট্ট সুন্দর গ্রাম ছিল/ তার নামটিও ছিল ভারী সুন্দর—কাশতলা/ হয়তো এক সময় কাশফুলের খুব প্রাচুর্য ছিল ঐ গ্রামে/আমি কবিত্ব করে তার নাম পাল্টে রেখেছিলাম কাশবন/ ভালোবেসে প্রেমিক যেমন তার প্রেমিকার নাম পাল্টে রাখে/ সে-ই আমার প্রথম কবিতা...।’

কবির গ্রামটি বাংলাদেশের অন্যান্য গ্রামের মতোই সবুজ–শ্যামল, শান্ত, কোলাহলমুক্ত। মূল ভিটায় টিনশেড বসতঘর। চারপাশে রয়েছে সুপারি, আম, নারকেলসহ বিভিন্ন গাছ। সামনে রয়েছে রামসুন্দর পাঠাগার। খুব একটা বড় নয়। বিভিন্ন ধরনের বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে সেখানে।

কবি নির্মলেন্দু গুণের বাড়ির পাশেই আছে বিদ্যানিকেতন। রয়েছে নজরুল, রবীন্দ্রনাথসহ বেশ কয়েকটি ভাস্কর্য এবং মঞ্চ। ছবি: লেখক
কবি নির্মলেন্দু গুণের বাড়ির পাশেই আছে বিদ্যানিকেতন। রয়েছে নজরুল, রবীন্দ্রনাথসহ বেশ কয়েকটি ভাস্কর্য এবং মঞ্চ। ছবি: লেখক

পাঠাগারের সামনে ও পেছনে কবির নিজ উদ্যোগে শানবাঁধানো ঘাটসহ খনন করা সুখেন্দু সরোবর ও কামিনী সরোবর নামে দুটি স্বচ্ছ পানির পুকুর রয়েছে। পুকুরপাড়ে গাছের ছায়ায় বসার জন্য রয়েছে দোলনা ও পাকা বেঞ্চ, যেগুলোতে বিকেলবেলা বসে স্থিরমনে গ্রামের মাঠগুলো এবং মানুষজনের আনাগোনা দেখা যায়। হাতে খাতাকলম নিয়ে ইচ্ছে করলে লেখালেখিতেও বসে পড়তে বাধা নেই। বাড়ির পাশেই আছে বিদ্যানিকেতন। রয়েছে নজরুল, রবীন্দ্রনাথসহ বেশ কয়েকটি ভাস্কর্য এবং মঞ্চ। বাড়ির মধ্যে রয়েছে মা ও সৎমায়ের নামকরণে করা বীণাপাণি-চারুবালা সংগ্রহশালা—এটি মার্বেল পাথর আর পোড়ামাটির টাইলস দিয়ে তৈরি। সেখানে দেখা মিলবে বিভিন্ন পাণ্ডুলিপি, কবির পুরস্কারের ক্রেস্ট, সনদ, চিঠি, উপহারসামগ্রী, পরিবারের সদস্যদের নানা স্মৃতি, দেশের ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শনসহ আরও অনেক কিছু। তা ছাড়া দেখা মিলবে দাদা-বাবার নামে করা সারদা-বাসুদেব চিত্রশালা, যেখানে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েরা বিনা পয়সায় শিখছে চিত্র আঁকা। সংগীতের জন্য রয়েছে শৈলজা সংগীত ভবন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালও আছে। ছবি: লেখক
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালও আছে। ছবি: লেখক

কীভাবে আসবেন

ঢাকা থেকে ট্রেনে করে বারহাট্টা স্টেশনে এসে নামতে হবে। ভাড়া ১৭০ থেকে ৮০০ টাকা। তা ছাড়া বাসে এলে নেত্রকোনা নামতে হবে। মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে করে সরাসরি আসা যাবে। নেত্রকোনা ভাড়া পড়বে ২৫০-৩০০ টাকা। সেখান থেকে বারহাট্টা বাসে করে বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে আসা যাবে। ভাড়া পড়বে ২৫-৩৫ টাকা। এরপর বারহাট্টা থেকে রিকশা বা অটোতে করে সরাসরি কাশবন কবির বাড়িতে ভাড়া ৩০-৪০ টাকা।

ঢাকা থেকে তিনটি ট্রেন পাবেন সরাসরি বারহাট্টা আসার। হাওর এক্সপ্রেস, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস এবং মহুয়া। ইচ্ছে করলে দিনে এসে দিনেই চলে যেতে পারবেন।


*শিক্ষার্থী, সফটওয়্যার প্রকৌশল বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। [email protected]