শেষ হলো আন্তর্জাতিক ইতিহাস-সংস্কৃতি সম্মেলন

পলাশী দিবসকে উপলক্ষ করে প্রথমবারের মতো অনলাইনে চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ইতিহাস-সংস্কৃতি সম্মেলন (আইসিএইচসি) গতকাল মঙ্গলবার রাতে সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হয়েছে।
পলাশী দিবসকে উপলক্ষ করে প্রথমবারের মতো অনলাইনে চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ইতিহাস-সংস্কৃতি সম্মেলন (আইসিএইচসি) গতকাল মঙ্গলবার রাতে সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হয়েছে।

পলাশী দিবসকে উপলক্ষ করে প্রথমবারের মতো অনলাইনে চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ইতিহাস-সংস্কৃতি সম্মেলন (আইসিএইচসি) গতকাল মঙ্গলবার রাতে সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হয়। ‘পলাশীর যুদ্ধ: সত্যের অনুসন্ধানে’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে মুক্ত আসরের উদ্যোগে এ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড ও বাংলাদেশ হেরিটেজ স্টাডি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন।

মঙ্গলবার রাতে সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড কমিটি সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইতিহাসবিদ এমরান জাহান, সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ, অর্থ সম্পাদক সংগীতা আচার্য, প্রশিক্ষক কাজী সামিও শীশ, বাংলাদেশ হেরিটেজ স্টাডি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও বিশিষ্ট অভিনেতা ইনামুল হক, প্রধান উপদেষ্টা জাকির হোসেন।

বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড কমিটি সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, পলাশী দিবসে পটভূমিতে সম্পন্ন হলো চার দিনের এই আন্তর্জাতিক ইতিহাস-সংস্কৃতি সম্মেলন। যে বিশিষ্টজনেরা আমাদের এ আয়োজনকে সাফল্যমণ্ডিত করেছেন, তাঁদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞতা জানাই এমন একটি আয়োজন সফল করতে হলে যে শ্রম, যে মেধা, যে মনন-চিন্তা একসঙ্গে রাখতে হয়, তা সবটুকু নিবেদন করে আমাদের সময়কে একদম ভরে দিয়েছেন—জ্ঞানে, প্রজ্ঞায় এবং ইতিহাসের মননচর্চায়। এই প্রজন্ম ইতিহাসের অর্জনকে বয়ে নিয়ে যাবে আগামী দিনের মানুষের কাছে এবং সেই মানুষের জায়গায় থেকে আমাদের ইতিহাসের বড় জায়গাগুলো আমরা ঠিকই তুলে ধরতে পারব। আমাদের প্রজন্ম মনে করবে ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার, ঐতিহ্যকে ধারণ করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাবে।

বাংলাদেশ হেরিটেজ স্টাডি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও বিশিষ্ট অভিনেতা ইনামুল হক বলেন, এই আয়োজনটা বিশাল একটি প্রভাব ফেলেছে, বিশেষ করে ইতিহাসের ক্ষেত্রে। সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ আয়োজনটা আসলে একটি ঐতিহাসিক আয়োজন। আমরা জানি, নাটকের মাধ্যমে অনেক ইতিহাস বেরিয়ে আসে। অনেক কিছু জানা যায়। নাটকের মাধ্যমে কাউকে বীর বলে যায়, কাউকে ভিলেন বলা হয়। সত্য কখনো চাপা থাকে না। ইতিহাসে অনেক ভুলভ্রান্তি আছে। এই আয়োজনে আসলে সত্যটা বেরিয়ে আসবে। এই সম্মেলনে নয়টি বিষয় আলোচনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই সময় এই আয়োজনটা অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। মনে করি, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। পলাশীতে নয় দিনব্যাপী যুদ্ধ হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধে নয় মাস ধরে। বিশ্বাসঘাতকতার কারণে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হয়েছিলেন এবং তাঁকে হত্যা করা হয় নিজের লোকের কারণে। আমাদের এখানে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল তাঁরই ঘনিষ্ঠজনেরা।

‘পলাশীর যুদ্ধ: সত্যের অনুসন্ধানে’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে মুক্ত আসরের উদ্যোগে এই আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড ও বাংলাদেশ হেরিটেজ স্টাডি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন।
‘পলাশীর যুদ্ধ: সত্যের অনুসন্ধানে’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে মুক্ত আসরের উদ্যোগে এই আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড ও বাংলাদেশ হেরিটেজ স্টাডি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াডের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইতিহাসবিদ এমরান জাহান বলেন, এই বিশাল কর্মকাণ্ড প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা সহজে করতে পেরেছি। করোনাকালের এই সময়ে এমন আয়োজনে মানুষের মনকে ভালো রাখার জন্য এমন বুদ্ধিদীপ্ত আয়োজন। দেশ-বিদেশের অংশ নেওয়া ইতিহাসবিদ, গবেষকদের কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করি।

বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াডের ফেসবুক পেজে প্রচারিত অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ বলেন, বাঙালির ইতিহাসে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৭৫৭ সালে আজকের দিনে নবাব সিরাউদ্দৌলা ইংরেজেদের হাতে পরাজিত হন। আরেকটি হলো ১৯৪৯ সালে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্ব আওয়ামী লীগের জন্ম হয়। দুটি ঘটনাকে আমরা গভীরভাবে স্মরণ করি। একদিন ইতিহাসের জয় হবে, এ কথা ব্যক্ত করে তিনি আয়োজনের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।

চার দিনের এই সম্মেলনে চারটি দেশ থেকে ১০ জন খ্যাতিমান গবেষক, শিক্ষক অংশ নেন। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম শাহনাওয়াজ। অন্য বক্তারা হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক গোলাম কিবরিয়া ভূঁইয়া, যুক্তরাজ্যের লেখক ও গবেষক প্রিয়জিৎ দেব সরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, ভারতের অধ্যাপক মো. খাইরুল আনাম এবং লেখক ও শিল্পী সলিল কুমার দাস। ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুমিত আল রশিদ এবং ইরানের ইয়াজদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক কাজেম কাহদুয়ি, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক আশিস কুমার দাস এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এমরান জাহান।

আন্তর্জাতিক ইতিহাস-সংস্কৃতি সম্মেলনের সহযোগিতায় রয়েছে স্বপ্ন ’৭১ প্রকাশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ ও বিজ্ঞানবিষয়ক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তা।