'লোভাছড়া', যেখানে সবুজের সঙ্গে স্বচ্ছ জলের মিতালি

ঝুলন্ত ব্রিজটি তৈরি হয় ১৯২৫ সালের এপ্রিল মাসে। ছবি: জাবেদ আহমদ
ঝুলন্ত ব্রিজটি তৈরি হয় ১৯২৫ সালের এপ্রিল মাসে। ছবি: জাবেদ আহমদ

নীল আকাশে সাদা বকের ওড়াউড়ি, ঢেউয়ের ছন্দময় দুলুনি, চোখ জুড়ানো সবুজের গালিচা, চারপাশ থেকে বয়ে আসা শীতল মৃদুমন্দ হাওয়া—এগুলো একসঙ্গে পেতে চাইলে লোভাছড়ার বিকল্প নেই বললেই চলে। সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নে এক মনোহর জায়গা লোভাছড়া। আর এ নামেই লোভাছড়া চা-বাগান।

বেড়াতে বের হলেই মনে হবে কোনো সাজানো বাগানে বেড়াতে বের হওয়ার মতো। এখানে একই সমান্তরালে নদী, দিগন্ত, পাহাড়, আকাশ আর মেঘ!

নদীতে ভেসে চলে পালতোলা নৌকা। কখনো পাথর বয়ে নিয়ে গন্তব্যে ছুটে চলা দৈত্যের মতো স্টিমার। সেই সঙ্গে স্টিমারের শ্রমিকদের জীবনযাপন। এত বড় বড় স্টিমার যখন জল কেটে ছুটে চলে, তখন পেছনে জলের আস্ফালন, বিশাল সব ঢেউ বুকের ভেতর জোরে ঝাপটা দেয়।

মেঘ আর পাহাড় একসঙ্গে। ছবি: জাবেদ আহমদ
মেঘ আর পাহাড় একসঙ্গে। ছবি: জাবেদ আহমদ

সিলেট থেকে বাস বা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় কানাইঘাট পৌঁছে সেখান থেকে সুরমা নদীর বুক চিরে নৌকায় করে যেতে হয় লোভাছড়ায়। আর নৌকায় ওঠার পর থেকেই পাওয়া যায় নাগরিক কোলাহলহীন, বিষাক্ত বাতাসমুক্ত ও যান্ত্রিক জটিলতা ছাড়া স্নিগ্ধ আর প্রাণবন্ত পথচলা।

লোভাছড়ার পথ যে কাউকে অজান্তেই টেনে নিয়ে যাবে ভাবনার অন্য এক জগতে। নদীপারের মানুষের জীবন দেখতে দেখতে পৌঁছে যাবেন কাঙ্ক্ষিত লোভাছড়ায়। লোভাছড়ার যেখানে গিয়ে নৌকা থামবে, সে জায়গাতেই নদীর পাথুরে পাড়। আর পাশেই বটবৃক্ষকে ঘিরে চা-শ্রমিকদের দুটি পাতা একটি কুঁড়ির ছন্দায়িত শিল্প। এরপর দু-তিন মিনিট হাঁটলেই হারিয়ে যাবেন সবুজ নিসর্গের মধ্যে। হাঁটতে হাঁটতেই চোখে পড়বে লোভাছড়ার বাসিন্দাদের ছোট ছোট অপূর্ব সব কুটির। কুটির থেকেই চেয়ে থাকা ছোট্ট শিশু-কিশোরদের মায়াবী চাহনি দেখে আপনার মনে হবে, এমন সরল আর নিষ্পাপ চাহনি কত দিন যেন দেখিনি!

সবুজের সমারোহ। ছবি: জাবেদ আহমদ
সবুজের সমারোহ। ছবি: জাবেদ আহমদ

বিস্ময়ের ঘোর কাটতে না কাটতেই একটি ঝুলন্ত ব্রিজ দেখে ভাবতেই পারেন রাঙামাটি চলে এলেন? আর যখন দেখবেন ব্রিজটির গায়ে খোদাই করা রয়েছে, ‘ব্রিজটি নির্মিত হয় ১৯২৫ সালের এপ্রিল মাসে!’ তখন অবাক হতেই হয় প্রায় শতবর্ষ আগের কীর্তিটি দেখে।

পথের এক জায়গায় পেয়ে যাবেন শত বছরের পুরোনো বিশাল এক বটবৃক্ষ। এমন মহিরুহের সামনে এসে দাঁড়ালে আপনা থেকেই মাথা নুইয়ে আসে। এই প্রাচীন বৃক্ষটির গা জুড়ে জন্মেছে অমূল্য সব অর্কিড। আর এই গাছেই বাসা বেঁধেছে নানা প্রজাতির পাখি।

মেঘ আর স্বচ্ছ পানি। ছবি: জাবেদ আহমদ
মেঘ আর স্বচ্ছ পানি। ছবি: জাবেদ আহমদ

কীভাবে যাবেন
দেশের যেকোনো জায়গা থেকেই সিলেট এসে বাসে চেপে ৬০ টাকা দিয়ে যাওয়া যাবে কানাইঘাট। সিলেট থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ করেও যাওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে ভাড়া নেবে ৬০০ টাকার মতো। কানাইঘাট থেকে নৌকায় করে লোভাছড়ায় যেতে জনপ্রতি ভাড়া লাগে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। চাইলে নৌকা রিজার্ভ করে যাওয়া যায়।

দল বেঁধে না চললে পথ হারানোর সম্ভাবনা আছে। সাঁতার না জানলে নদীতে না নামাটাই ভালো আর নামলেও স্থানীয় মানুষজনকে জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হতে হবে ডুবোচরের হালচাল। সীমান্তের ওপারে যেতে ইচ্ছে করলেও সে পথে পা না বাড়ানোই মঙ্গল।


*শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।