রূপসী-কাঞ্চন সড়ক কবে সংস্কার হবে

সড়কের খানাখন্দে ভরা। ছবি: লেখক
সড়কের খানাখন্দে ভরা। ছবি: লেখক

সড়কের খানাখন্দের ছবি তুলতে গেলে মঠের ঘাটের পাশের চায়ের দোকানদার আফতাবউদ্দিন দোকানে বসেই চেঁচিয়ে বলে উঠলেন, ‘ভাই, ছবি তুইল্যা লাভ নাই। এই পর্যন্ত কত্ত ছবি উঠাইল। কাম অয় না। যেই সড়ক হেই থাহে। এহান দিয়া মন্ত্রী-চেয়ারম্যান-ইউএনও আহে। কেউ মাথা ঘামায় না। একটু সামনে গেলেই উপজেলা পরিষদ, ইউএনও অফিস। তারপরেও হেগো চোহে পড়ে না। হেরা সইতে পারলে আমরাও পারুম সইতে। আমাগো কপাল খারাপ। ১০ বছর ধইরা এ অবস্থা। কোনো পরিবর্তন নাই। মরণের পরে যদি সড়ক বালা অয়।’

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের রূপসী-কাঞ্চন সড়কের ১৪ কিলোমিটার সড়কের পুরো অংশেই খানাখন্দে ভরা। কোথাও কোথাও এঁদো ডোবা। কয়েক বছর ধরে এখানকার মানুষ বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। প্রতিদিন লাখো মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যস্ত এ সড়কের দুপাশে গড়ে উঠেছে সিটি অয়েল কারখানা, নাভানা কারখানা, প্রাণ–আরএফএল কারখানা, এসিআই সল্ট কারখানাসহ প্রায় ৩৫টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এসব কারখানায় প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক কাজ করেন বলে জানান স্থানীয় ব্যক্তিরা। এ ছাড়া সরকারি মুড়াপাড়া কলেজ, গন্ধবপুর উচ্চবিদ্যালয়, রূপসী নিউ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হাটাবো আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়সহ ১১টির বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আর সড়কটি থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের দূরত্বে রয়েছে উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয়। স্থানীয় সাংসদ পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তারা এ সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। এ ছাড়া আমন্ত্রণে কিংবা সরকারি কোনো অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, উপসচিবেরা এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন। কিন্তু খানাখন্দ সবার চোখে পড়লেও নজর নেই কারও।

২০ জুন দেখা গেছে, রূপসী শহীদ বকুল চত্বর থেকে কাঞ্চন মায়ার বাড়ি পর্যন্ত সড়কের পুরো অংশেই খানাখন্দে ভরা। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে এঁদো ডোবায় পরিণত হয়। কোথাও কোথাও বড় বড় গর্ত। যানবাহন তো দূরের কথা, লোকজনের হেঁটে চলাও দায়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ সড়ক দিয়েই পণ্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী যান চলাচল করছে।

দড়িকান্দি এলাকায় কথা হয় পঞ্চাশোর্ধ্ব নুরু মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ভাই, এ সড়কের কতা কইয়েন না। ১০ বছর অইয়া গেছে এ সড়কের এমুন অবস্থা। আমাগো সইয়া গেছেগা। কত্ত আন্দোলন অইল। কিন্তু সড়ক অয় না।

উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৭ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ হিসেবে নির্মিত হলেও পরবর্তী সময়ে এটি এলজিইডির সড়ক হিসেবে অধিভুক্ত হয়। সড়কটি সংস্কারের জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে সড়টি চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে ঠিক কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে, সেটা জানেন না রূপগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী এনায়েত হোসেন। তিনি বলেন, প্রকল্পটি এডিবির অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। অনুমোদন পেলে দরপত্রপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। তবে সেটা কবে নাগাদ হবে, সেটা তিনি বলতে পারেননি।

সংস্কারের অভাবে ভোগান্তিতে পড়ে এলাকার মানুষ। ছবি: লেখক
সংস্কারের অভাবে ভোগান্তিতে পড়ে এলাকার মানুষ। ছবি: লেখক

মুড়াপাড়া ফেরিঘাট–সংলগ্ন সড়কের পাশে শাহজাহান মিয়ার হোটেল। কথা হয় শাহজাহান মিয়ার সঙ্গে। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘ভাই, এই কথা কইয়া আর কি লাভ অইব। ১০ বছর একটা রাস্তা এত খারাপ থাহে এই দেখলাম। রাস্তা খারাপ থাহনে হোটেলে বেঁচাকেনা নাই।’

অটোচালক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘ভাই, বৃষ্টি অইলে রাস্তায় হাঁটুপানি জমে। গাড়ি অনেক সময় পইড়া যায়। আর বৃষ্টি না থাকলে ধুলায় চোখ-মুখ ভইরা যায়।’

মুড়াপাড়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহআলম মিয়া বলেন, এ সড়ক এখন অভিশাপে পরিণত হয়েছে। লাখো মানুষ গত ১০ বছর ধরে বঞ্চনার শিকার হচ্ছে।

মুড়াপাড়া কলেজে শিক্ষার্থী তৌকির আহম্মেদ বলেন, সড়কের পাশেই আমাদের কলেজ। এত সুন্দর রাজবাড়ি আর আম্রকানন। এত সৌন্দর্য ম্লান করে দিয়েছে ভাঙাচোরা সড়ক।

স্থানীয়রা জানান, সড়ক সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন এলাকার লোকজন বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধন, বিক্ষোভ করেছেন। সড়কের এঁদো ডোবায় ধানের চারা লাগিয়ে প্রতিবাদ করা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তারা বলেন, সড়ক নষ্টের পেছনে শিল্পকারখানার পণ্যবাহী ট্রাকও দায়ী।

উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, সড়কের দুপাশে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানার বড় বড় ট্রাক চলাচলের কারণে সড়কটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চেষ্টা চলছে দ্রুত যেন মেরামত করা যায়। তবে বর্ষায় সেটা সম্ভব হবে না বলে মনে হয়।