বর্ষায় স্বরূপে ফিরছে মৃতপ্রায় ভৈরব

ভৈরব নদ।
ভৈরব নদ।

এবারের বর্ষাটা একটু আগেভাগেই এসেছে। জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রায় সময়ই বৃষ্টি দেখা গেছে। সে সময় প্রবল বৃষ্টি নিয়ে তাণ্ডব চালিয়েছিল ঘূর্ণিঝড় আম্পান। কিছুদিন হলো আষাঢ় মাস শুরু হয়েছে, সঙ্গে নিয়ে এসেছে ভারী বৃষ্টি। আষাঢ়ের বৃষ্টিতে যেন যৌবন ফিরে পেতে শুরু করেছে ভৈরব নদ।

ভৈরব দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঝিনাইদহ, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, খুলনা, কুষ্টিয়া জেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ২৪২ কিলোমিটার দৈর্ঘের এই নদ ভারত থেকে মেহেরপুর জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। নদের তীরে বেশ কয়েকটি শহর গড়ে উঠেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য শহরগুলো হচ্ছে চুয়াডাঙ্গা, মুজিবনগর, দামুড়হুদা, খুলনা। একসময় এ নদ ছিল গভীর ও খরস্রোতা। কিন্তু বর্তমানে নদটি মৃতপ্রায়।
সরকার করোনার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলে গ্রামের বাড়িতে চলে আসি। আমার বেড়ে ওঠা চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলাতে। আমাদের বাড়ির পেছনে বয়ে গেছে ভৈরব নদ। আমি নিজেই দেখেছি, এ নদে নৌকা চলত, জেলেরা ধরত মাছ, মানুষ দল বেঁধে গোসল করত। কিন্তু বিভিন্ন কারণে নদটি ধীরে ধীরে হারিয়েছে তার স্বরূপ। নদটি যেন হয়ে গেছে প্রাণহীন। নদে জলজ প্রাণী, মাছ, স্রোত, নৌ চলাচল না থাকলে তো তা প্রাণহীন হওয়ারই কথা!
সাধারণত বর্ষার সময় নদটিতে পানি থাকে, আর শুষ্ক মৌসুমে নদটি শুকিয়ে যায়। দেড় মাস আগেও নদটিতে হাঁটু পানি ছিল, আবার কোথাও কোথাও পানি শুকিয়ে গিয়েছিল, ছিল না কোনো স্রোত, ছিল ঘন কচুরিপানার স্তূপ। কিন্তু আষাঢ়ের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে নদের পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। চারদিকে থই থই পানি। জেলেদের মাছ ধরতেও দেখা গেল। একসময় জেলেদের জীবন-জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম ছিল এই নদ। কিন্তু নদটি শুকিয়ে যাওয়ায় জেলেরা এখন নানা পেশায় যুক্ত হয়েছে। কিন্তু বর্ষার মৌসুমে পানি বাড়ায় জেলেরা নদে মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত থাকে, কারণ, বাজারে নদের মাছের চাহিদা বেশি, ফলে বেশি দামে মাছ বিক্রি করতে পারেন তাঁরা।

ভৈরব নদ।
ভৈরব নদ।

নদের উপর অনেকগুলো বাঁধ, সেতু, কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। অভিযোগ আছে, নদের দুই পাড় দখল করে ফসল চাষ ও স্থাপনা নির্মাণের। ফলে প্রশস্ততা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। এ ছাড়াও বাসাবাড়ি ও কলকারখানার বর্জ্য নদের পানি দূষিত করছে। নদটিকে দখলমুক্ত ও খননের উদ্যোগ নিলে সারা বছরই নদটিতে নাব্যতা থাকবে, যা প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীবন–জীবিকার উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।