এখন অনলাইনে সব প্রতিযোগিতা

এই লকডাউনে মানুষ ঘরে বসে থাকলেও কিন্তু বেকার বসে নেই। অনলাইনেই তাদের দৈনন্দিন জীবনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন রীতিমতো। অনলাইনে অফিস হচ্ছে, অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্স হচ্ছে, অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে আর সেই সঙ্গে হচ্ছে অনলাইনে আয়োজিত কিছু প্রতিযোগিতায় সক্রিয় অংশগ্রহণও হচ্ছে।

এই লকডাউনে ঘরে বসে বোর না হয়ে অনলাইনভিত্তিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করাই যায়। এই অনলাইন প্রতিযোগিতাগুলো খুঁজে পাওয়ার সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হচ্ছে ফেসবুক। ফেসবুকের ইভেন্ট অপশনে ক্লিক করলেই চারপাশে আয়োজিত যত প্রতিযোগিতা আছে সব আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে, সেখানে আপনি ইচ্ছেমতো পছন্দ অনুযায়ী ইভেন্টে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

আপনি যদি ছবি আঁকার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চান, তাহলে সেটা লিখে সার্চ দিলেই ফেসবুকে আপনার সামনে ভেসে উঠবে বিভিন্ন ছবি আঁকাভিত্তিক কম্পিটিশন। ফেসবুকে যদি পছন্দনীয় কোনো ইভেন্ট খুঁজে না পান, তাহলে গুগল তো আছেই। গুগলে সার্চ দিলেই হাজারো রকম প্রতিযোগিতামূলক ইভেন্ট খুঁজে পাবেন।

তবে এই লকডাউনে যেসব ইভেন্ট সচরাচর অনলাইনে আয়োজন করা হতো না, সেসব ইভেন্টও এখন অনলাইনে আয়োজন করা হচ্ছে। তার মধ্যে বিতর্কমূলক প্রতিযোগিতা ও ছায়া জাতিসংঘ বিতর্ক প্রতিযোগিতাগুলো উল্লেখযোগ্য। ভাইরাস সংক্রমণের আগে একটা জাতীয় পর্যায়ের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে একই সঙ্গে আপনাকে একটা টিম নিয়ে কোনো একটা নির্দিষ্ট এলাকায় যেতে হতো এবং আপনাকে অধিক পরিমাণের অর্থও গুনতে হতো। কিন্তু এখন যে অনলাইনভিত্তিক জাতীয় পর্যায়ের বিতর্ক প্রতিযোগিতাগুলো হচ্ছে, সেগুলোতে আপনাকে টিম নিয়ে কোথাও যেতেও হচ্ছে না আবার অধিক ক্ষেত্রে টাকাও ব্যয় করতে হচ্ছে না, কিছু ক্ষেত্রে আবার এই প্রতিযোগিতাগুলো সম্পূর্ণ ফ্রি, একজন বিতার্কিক হিসেবে আপনার দক্ষতাকে সমৃদ্ধ করার এটিই সবচেয়ে ভালো সময়।

আরেকটা ইভেন্ট যেটা সচরাচর অনলাইনে আয়োজন করা হতো না, সেটি হলো ছায়া জাতিসংঘ বা ইংরেজিতে মডেল ইউনাইটেড নেশন্স (Model United Nations)। যারা জানে না ছায়া জাতিসংঘ সম্মেলন আসলে কি তাদের জন্য বলি, এটি জাতিসংঘের একটা সিমুলেশন যেখানে যারা অংশগ্রহণ করে তারা একটা নির্দিষ্ট দেশের প্রতিনিধি হিসেবে নির্দিষ্ট একটা বিষয়ের পক্ষ বা বিপক্ষ হয়ে বিষয়ের ওপর বিতর্ক (আলোচনা) করে। বাংলাদেশে এখন ছায়া জাতিসংঘ সম্মেলন খুব জনপ্রিয় একটা ডিবেটিং প্ল্যাটফর্ম। জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ছায়া জাতিসংঘ সম্মেলনে যোগদান করতে হলে একজনকে প্রচুর পরিমাণের অর্থ ব্যয় করতে হয়। এই ডিবেটিং প্ল্যাটফর্ম খুব ব্যয়বহুল বলে সবার এখানে অংশগ্রহণ করার সামর্থ্য থাকে না। কিন্তু এখন এই ছায়া জাতিসংঘ অনলাইনে আয়োজন করা হচ্ছে এবং সেখানে অংশগ্রহণ করার জন্য কোনো প্রকার ফি লাগে না। তাই এখন মানুষ ঘরে বসেই একটা জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ছায়া জাতিসংঘ সম্মেলনের স্বাদ বিনা মূল্যে গ্রহণ করতে পারছে।

এই অনলাইন প্রতিযোগিতাগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে ফেসবুক আর গুগল তো অবদান রাখছেই, তার সঙ্গে অবদান রাখছে আরও কিছু কমিউনিকেশন অ্যাপ। যেমন ডিস্কোর্ড, জুম, ওয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি। ডিস্কোর্ড ও জুমের সাহায্যেই এই অনলাইন ইভেন্টগুলো পরিচালনা করা যাচ্ছে। জুমের ফ্রি ভার্সনে একসঙ্গে ১০০ জন মানুষ ভিডিও কনফারেন্সে যোগদান করতে পারে। ডিস্কোর্ডে একসঙ্গে ৫০০০ মানুষ অডিও কলে যোগদান করতে পারে। ভাবতে পারেন ৫০০০ মানুষ! কমিউনিকেশনের এই অ্যাপগুলো আছে বলে অনলাইনে বিতর্ক ও ছায়া জাতিসংঘ সম্মেলনের মতো ইভেন্টগুলো আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে, না হলে কোনোক্রমেই সম্ভব হতো না।


*শিক্ষার্থী, রাজশাহী ক্যান্টনম্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ