হসপিটাল ফার্মেসি কেন গুরুত্বপূর্ণ

একজন ফার্মাসিস্ট ওষুধের গুণগত মান নিশ্চিত করে ওষুধ বিক্রি করেন। ছবি: সংগৃহীত
একজন ফার্মাসিস্ট ওষুধের গুণগত মান নিশ্চিত করে ওষুধ বিক্রি করেন। ছবি: সংগৃহীত

প্রাচীন যুগে মানুষ রোগ নিরাময়ের জন্য বিভিন্ন গাছের লতাপাতা ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করত। তবে যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে ওষুধশিল্পেও এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। বর্তমানে মানুষের চাহিদা পূরণে রাসায়নিকভাবে তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন রোগের ওষুধ। আর এই ওষুধ তৈরিতে যাঁদের সবচেয়ে বেশি অবদান, সেই ফার্মাসিস্টরাই পাচ্ছেন না তাঁদের সেই অবদানের কৃতিত্ব। কিন্তু উন্নত বিশ্বে এই ফার্মাসিস্টদের অত্যন্ত সম্মান এবং শ্রদ্ধার চোখে দেখা হয়। সেসব দেশের প্রতি এলাকায় মডেল ফার্মেসি রয়েছে, যেখানে একজন ফার্মাসিস্ট ওষুধের গুণগত মান নিশ্চিত করে ওষুধ বিক্রি করেন।

একটি দেশের উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট ও নার্সদের সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাসপাতালে ফার্মাসিস্টরা চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুসারে ওষুধ সরবরাহ করে থাকেন। আমাদের দেশে চিকিৎসক এবং নার্সরা বিভিন্ন হাসপাতালে কাজ করলেও এখনো ফার্মাসিস্টদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়নি। একজন ফার্মাসিস্ট ওষুধশিল্পে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকেন। যেমন গুণগত মান নিশ্চিত করা, গবেষণা করা, উৎপাদন, রপ্তানি প্রভৃতি। অর্থাৎ ওষুধশিল্পে আমূল পরিবর্তন হয়েছে এই ফার্মাসিস্টদের হাত ধরেই। কিন্তু দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে নিয়োগের ব্যবস্থা না থাকায় স্বাস্থ্য খাত মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ, হাসপাতালগুলোতে ফার্মাসিস্ট থাকলে ভুল মাত্রার ওষুধ প্রদানের হার অনেকাংশে হ্রাস পায়। এ ছাড়া কোন রোগের জন্য কোন ওষুধ প্রয়োজন, ওষুধ কী ডোজ পরিমাণ সেবন করতে হবে, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, খাবারের সঙ্গে ওষুধের প্রতিক্রিয়া প্রভৃতি বিষয়গুলো নির্ণয় করে থাকেন। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও হসপিটাল ফার্মেসি চালু রয়েছে। এর ফলে ওষুধের ক্ষেত্রে তারা আমাদের চেয়ে অধিক সেবা প্রদান করছে।

এ ছাড়া বর্তমানে মহামারি করোনাভাইরাসের কালে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের দশা যে বেহাল, সেটা দৃশ্যমান। মূলত সঠিক পরিকল্পনা এবং অব্যবস্থাপনার কারণে এ খাতের দিন দিন ক্ষতি হচ্ছে। আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্য খাতের উন্নতি কতটুকু, সেটা জনগণ প্রত্যক্ষ করছে। আমাদের দেশের স্বাস্থ্য খাতের আইনপ্রণেতারা শুধু চিকিৎসক, নার্স আর প্যারামেডিকস দিয়েই এই খাত পরিচালনা করতে চান। কিন্তু উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ফার্মাসিস্টদের বিকল্প নেই। কারণ উন্নত দেশগুলোর হাসপাতাল, ড্রাগ সেন্টার, ফার্মেসি প্রভৃতি স্থানে উচ্চ বেতনে ফার্মাসিস্ট নিয়োগ হচ্ছে। ইউরোপ, আমেরিকা বা মধ্যপ্রাচ্যে সুনামের সঙ্গে এ দেশের ফার্মাসিস্টরা কাজ করছেন। কিন্তু দেশের স্বাস্থ্য খাতে এখনো ফার্মাসিস্টরা অবহেলিত।

ফার্মাসিস্টদের নিয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরতে গিয়ে বিসিএসআইআরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ফার্মেসি) আফরিনা আজাদ বলেন, ‘চলমান মহামারি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় যদি চিকিৎসকেরা প্রথম সারির যোদ্ধা হয়ে থাকেন, তাহলে ফার্মাসিস্টরা হলেন যুদ্ধাস্ত্র। হাসপাতাল ফার্মাসিস্ট সব সময়ের জন্যই স্বাস্থ্যসেবা খাতে অপরিহার্য আর এই বিশ্বমারিতে তাঁরা হতে পারতেন তুরুপের তাস। তাঁদের অর্জিত জ্ঞানকে ব্যবহার করে চিকিৎসকদের কোনো ওষুধ ব্যবহারের যৌক্তিকতা, যৌক্তিক পরিমাণ নির্ধারণ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রভৃতি সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান করে পাশে থাকতে পারতেন। তাই আর সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত হাসপাতাল ফার্মাসিস্ট নিয়োগ প্রদান করা জরুরি আমাদের সবার স্বার্থেই।’

উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ফার্মাসিস্টদের বিকল্প নেই। ছবি: সংগৃহীত
উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ফার্মাসিস্টদের বিকল্প নেই। ছবি: সংগৃহীত

অনেকটা আক্ষেপ নিয়েই আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের ফার্মেসি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামীমা নাসরিন বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য যে এখনো এ দেশে ফার্মাসিস্টদের কাজের পরিধি অত্যন্ত সীমিত। হাসপাতাল কিংবা কমিউনিটিতে ফার্মাসিস্টদের কাজের ক্ষেত্র এখনো তৈরি হয়ে ওঠেনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চলমান করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে উন্নত স্বাস্থ্যসেবার জন্য ফার্মাসিস্টদের নিয়োগের আসলেই বিকল্প নেই। সে জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত দেশের অন্যতম মেধাবী সন্তান ফার্মাসিস্টদের মেধা, প্রজ্ঞা বিবেচনা করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়োগ দেওয়া।’

ফার্মাসিস্টদের পরামর্শ অনুসারেই হাসপাতালে একজন নার্স রোগীকে নির্ভুল সেবা দিতে পারেন। ভুল নিয়মে ওষুধের ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে এবং জনগণের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হাসপাতালগুলোতে ফার্মাসিস্ট নিয়োগের কোনো বিকল্প নেই।


*সাবেক শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম