বিসিএস পরীক্ষায় সফল ও বিফলদের জন্য দুছত্র

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

গত ৩০ জুন ৩৮তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। প্রায় চার লাখ প্রার্থী প্রিলিমিনারিতে অংশ নেয়; লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে মাত্র ২ হাজার ২০৪ জন বিসিএস ক্যাডার অফিসার হিসেবে নির্বাচিত হয়। সংগত কারণেই বিশালসংখ্যক প্রার্থী প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়েছে। আর যারা বিজয়ের মুকুট ছিনিয়ে এনেছে, তাদের মুখে আজ অবারিত হাসি।

যাদের বিসিএসে হয়েছে, তাদের ফেসবুক ফ্রেন্ড বেড়ে যাবে, বন্ধুবান্ধব বেড়ে যাবে, আত্মীয়স্বজন ও পরিচিত লোকজনের ফোন বেড়ে যাবে, নানামুখী সংযোগ বেড়ে যেতে থাকবে।

যাদের বিসিএসে হয়েছে তাদের বলব, বিনয়ী হও, দেশের সেবায় সুযোগ পাচ্ছো, এর মাধ্যমে সারা জীবন দেশ ও মানুষের সেবা করতে পারবে। এর মাধ্যমে জীবনকে জীবনে রূপ দিতে পারবে এবং জীবনকে সার্থক করতে পারবে। তা-ই করো। মনে রেখো, চাকরি বা পদ যা-ই হোক, তোমার হাতে থাকবে নাগরিকদের সেবা দেওয়ার ও দেশের জন্য কাজ করার অবারিত সুযোগ। কোটিপতি হওয়ার চিন্তা নিজের মাথা থেকে ও পরিবারের সবার মাথা থেকে সরিয়ে দিয়ো। দেখবে জীবনটা খুব সুন্দর হবে, চাকরির প্রতিটি দিন আনন্দে কাটবে। প্রতিদিনই মানুষের সেবা করার সুযোগ পৃথিবীতে খুব কম মানুষ পায়। তোমরা হলে সেই সৌভাগ্যবানদের একজন, যাদের হাতে মানুষকে সেবা দেওয়ার সুযোগ এল। মন-প্রাণ খুলে কাজ করে, দেশ বিনির্মাণে মানুষের কল্যাণে জীবনকে নিবেদিত করো। সফলতা ও সার্থকতা একসঙ্গে ধরা দেবে। তোমাদের জন্য দোয়া রইল।

২.
যাদের বিসিএসে হয়নি, তাদের অনেকে এড়িয়ে যাবে, কেউ কেউ তাদের ফোন রিসিভ করবে না, কাছের-দূরের অনেকে মুখ বেঁকিয়ে বলবে, ‘বিসিএস ক্যাডার হতে পারলি না, তুই আর কেমন মেধাবী ছাত্র হলি? কী করবি আর?’ অনেক নেতিবাচক কথাও হয়তো শুনতে হবে। কেউ কেউ বলতে পারে যা, ‘কোম্পানির ব্যাগ নিয়ে ঘুর!’ ইত্যাদি ইত্যাদি। তাঁদের জন্য এ সময়টা খুবই কষ্টের, বুকে চাপা ব্যথা নিয়ে সময় পার করবে, অনেকে মন খারাপ করে হতাশায় ভেঙে পড়তেও পারে।

যাদের এবার বিসিএসে হয়নি তাঁদের বলব, এ না হওয়া থেকে শিক্ষা নিয়ো, ইতিবাচক জেদ নিয়ো, ফোকাসড হও, এবং লেগে থাকো দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে। পরিকল্পনা করো এবং দিনরাত পরিশ্রম করো। গ্যারান্টি দিচ্ছি, তুমি অনেক দূর যাবে। হয় বিসিএস ক্যাডার হবে, কিংবা আরও বড় কিছু হবে। প্রাইভেট সেক্টর, করপোরেট নেতৃত্ব, গবেষণা জগৎ, লেখালেখি জগৎ, সমাজসেবা খাত, উদ্যোক্তা হওয়া তথা যে সেক্টরে যাও, তোমাকে কেউ আটকে রাখতে পারবে না।

পৃথিবী অনেক বড়। কত কিছু করার আছে! হাজার হাজার সেক্টর থেকে তোমার পছন্দ বেছে নাও। হাজার কাজে হাত না দিয়ে একটি বা দুটো কাজে ফোকাসড হও। কেমন ফোকাস? একজন মানুষ নদীতে ডুবে গেলে যখন একটি কচুরিপানা বা অন্য কিছুকে আঁকড়ে ধরে, আর কিছু না পেয়ে সেটাকে একমাত্র অবলম্বন হিসেবে ধরে রাখে। অন্য কিছুতে আর তাকায় না, ঠিক সে রকম ফোকাসড হতে হবে। ফেসবুক/আত্মীয়/বন্ধু সবাই তোমাকে তাচ্ছিল্য করে এড়িয়ে যাওয়ার আগে, তুমি নিজেই তাদের এড়িয়ে চলো। আর নিজ লক্ষ্যে ফোকাসড থাকো। আর সঙ্গে দৃঢ় প্রত্যয়, পরিকল্পনা ও প্রতিদিনের নিয়মিত পরিশ্রম লাগবে। দেখবে সাফল্য আসবেই। ক্ষণিকের মেঘ দেখে ভয় পেয়ো না, আড়ালে সূর্য হাসছে। পরিশ্রমের তাপ দিয়ে মেঘ কাটিয়ে সূর্যকে ছিনিয়ে আনো।

তোমাদের জন্য দোয়া ও শুভকামনা।

*লেখক: উপসচিব ও বিসিএস প্রশাসনের একজন সদস্য