কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সামনে যত চ্যালেঞ্জ

সূর্য সেন হলের নিচতলার একটি গণরুমের দৃশ্য
সূর্য সেন হলের নিচতলার একটি গণরুমের দৃশ্য

বিভিন্ন দাবির মুখে কিংবা অশান্ত রাজনীতির চাপে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা চিরাচরিত একটি দৃশ্য। কিন্তু গত ১৭ মার্চ থেকে বিশ্ব মহামারি কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে অবিরত ছুটি চলছে, আপৎকালীন পরিস্থিতির ফাঁদে পড়ে উত্তরোত্তর তা বেড়েই চলছে।

পরিবর্তনশীল বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার সর্বোচ্চ স্তরে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে গবেষণা কার্যক্রমের সঙ্গে নানা স্তরের উচ্চশিক্ষা কর্মসূচি পরিচালিত হয়ে থাকে। শিক্ষার্থীদের বিশ্ব নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অনন্য। বিশ্ববিদ্যালয় নামটি স্মরণ করার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দৃষ্টিসীমায় হাজারো শিক্ষার্থীর সমাবেশ ভেসে ওঠে। চলমান মহামারির অদূর ভবিষ্যৎ এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে তা মোকাবিলা, অন্যদিকে হাজারো শিক্ষার্থীর সমাগমে মুখরিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের সূচনা—সব মিলিয়ে অদূরে রয়েছে একটি চ্যালেঞ্জিং পরিবেশ। এসব সমস্যার স্বরূপ এবং নানা চ্যালেঞ্জ নিয়ে ইতিমধ্যে আলোচিত হচ্ছে এবং সেসব বিষয় নিয়ে ভেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। প্রথম বর্ষ থেকে শুরু করে সদ্য পাস করা সবাই এসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে আবাসন ও পরিবহন সংকট, স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য, স্বাস্থ্যবিধি, ক্লাসরুম ও লাইব্রেরি সংকট, অবাধ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ, আগের মতো প্রাণখোলা আড্ডা-গল্পে সীমাবদ্ধতা এবং সেই সঙ্গে চাকরি পাওয়া না-পাওয়ার হিসাব, মানসিক সমস্যা প্রভৃতি অন্যতম।

আবাসন
যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন সংকট বড় একটি চ্যালেঞ্জ। কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্যবিধির ফলে সামাজিক দূরত্ব রক্ষার তাগিদ থেকে সেই সংকট আরও ঘনীভূত হবে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসনিম সিরাজ মাহবুব ব্যক্তিগত সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যরক্ষার ব্যাপারটিকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। এখানে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী আবাসিক হলে অবস্থান করেন। এসব আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি অবস্থান এমনিতেই স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।উপরন্তু করোনা-পরবর্তী সময়ে তা আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভ্যাকসিনবিহীন এ ভাইরাস মোকাবিলায় বর্তমানে লকডাউন, গৃহে অবস্থান, সোশ্যাল আইসোলেশন প্রভৃতি কৌশল অবলম্বন করা হলেও করোনা-পরবর্তী সময়ে তা কতটুকু বাস্তবায়নযোগ্য, এটি ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে আবাসিক হল রয়েছে মাত্র ১৮টি। এসব হলের ১ জনের কক্ষে থাকতে হয় ৪ জন। ২ জনের কক্ষে ৮-১০ জন থাকেন। যে দৃশ্য অত্যন্ত অমানবিক এবং অস্বাস্থ্যকর। করোনা-পরবর্তী সময়ে এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ আরও বেশি সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবাসন সংকট সমাধানের জন্য নানা প্রতিশ্রুতির ধোঁয়া তুললেও আদতে তার কোনো সমাধান দৃশ্যমান হয়নি আজ অবধি। তাই শিক্ষার্থীরা করোনার পর ক্যাম্পাস খোলা হলে নিজেদের আবাসন নিয়েই বেশি দুশ্চিন্তায় ভুগছেন!

পরিবহন
করোনা-পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। যেহেতু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমান অনুযায়ী করোনাভাইরাসের একেবারেই নির্মূল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি জরিপে এ সমস্যাটি প্রকটভাবে তুলে ধরা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২০ হাজার অনাবাসিক শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ও ভাড়ায় মিলিয়ে বাস রয়েছে ৭০টির মতো। বাসগুলোতে বসে অথবা দাঁড়িয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় শিক্ষার্থীরা চলাচল করে থাকেন। পরস্পর ঘেঁষাঘেঁষি করে যাতায়াতের সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অসম্ভব। করোনা-পরবর্তী সময়ে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য এটি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা। প্রতিবছর বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থার আওতার বাইরেও থেকে যান বহু শিক্ষার্থী। এই বিষয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীর মতামতকে আমি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছি। যেমনটা বলছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজিদা ইসলাম। তাঁর মতে, ‘আবাসিক হল না থাকায় এমনিতেই আমরা অনেক ভোগান্তিতে থাকি। উপরন্তু করোনা-পরবর্তী সময়ে গণপরিবহনে যাতায়াতের ফলে আমরা আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়তে যাচ্ছি।’

কোনো উদ্বাস্তু শিবির নয়। জগন্নাথ হলের একসময়কার টিভি কক্ষ। এখন সেখানে থাকছেন শতাধিক ছাত্র
কোনো উদ্বাস্তু শিবির নয়। জগন্নাথ হলের একসময়কার টিভি কক্ষ। এখন সেখানে থাকছেন শতাধিক ছাত্র

শ্রেণিকক্ষ ও লাইব্রেরি
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দীর্ঘদিন ধরে শ্রেণিকক্ষ সংকটে ভুগছে। বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একেবারেই নাজুক অবস্থা। ৫০ জনের শ্রেণিকক্ষে বসতে হয় ১০০ জন, ১০০ জনের শ্রেণিকক্ষে ২০০ জন। সাধারণত আদর্শ শ্রেণিকক্ষ ৫০ জনের অধিক হওয়া উচিত নয়। এতে করে শিক্ষকের পাঠদান ব্যাহত হয়। প্রতিবছর যে হারে শিক্ষার্থী বৃদ্ধি পায়, সে হারে শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা তো বাড়েই না, বরং হ্রাস পাচ্ছে।

এর পাশাপাশি লাইব্রেরিতেও শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে সকাল সাতটায় গেলে তার প্রমাণ মেলে। লাইব্রেরিতে সিটের জন্য দীর্ঘ লাইন বসে। শিক্ষার্থীরা নিজের ব্যাগ রেখে সারি তৈরি করেন, যা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অক্ষমতা প্রমাণ করে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের একটি লাইব্রেরির এই হাল দেখলে সচেতন মাত্র নাক সিঁটকাতে বাধ্য। এই কঠিন সময়ে লাইব্রেরি এবং শ্রেণিকক্ষ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন শিক্ষার্থীরা। এসব ক্ষেত্রে দূরত্ব বজায় রাখা আদৌ কীভাবে সম্ভব, বিষয়টি এখন শিক্ষার্থীদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সুপারস্প্রেডিং সিস্টেমে করোনাভাইরাস আমাদের জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে ভাইরাসটি সংক্রমণের হারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে।

এমতাবস্থায় রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, শ্রেণিকক্ষের সংকট নিয়ে ইতিমধ্যেই তাঁদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ রয়েছে, ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা নিয়ে সামনের দিনগুলোতে তাঁদের আরও হিমশিম খেতে হবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক কাজী ফারুক হোসাইন এ বিষয়ে একটু বিস্তারিত বলতে চাইলেন। তিনি বলছেন, কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের জন্য অপেক্ষা করছে বড় চ্যালেঞ্জ। তাঁর মতে, করোনাভাইরাসকে সঙ্গে নিয়েই সামনের দিনগুলোতে এগোতে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিদ্যমান শ্রেণির আকার এবং শ্রেণিকক্ষের আয়তনকে তিনি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার অনুপযুক্ত বলে মনে করেন। এ ছাড়া একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সংস্কৃতিচর্চার (ইনডোর/আউটডোর) যে একটি বিশাল বড় প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবহার করা হয়, সে ক্ষেত্রে কিন্তু বড় একটি ধাক্কা শিক্ষার্থীদের খেতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

ঢাবির শ্রেণিকক্ষ। ফাইল ছবি ফোকাস বাংলা।
ঢাবির শ্রেণিকক্ষ। ফাইল ছবি ফোকাস বাংলা।

সেশনজট
মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, পরীক্ষাসহ সব শিক্ষা কার্যক্রম। ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে লকডাউন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনলাইন ক্লাসে চলে গেলেও বাংলাদেশে তা সম্ভব হচ্ছে না। অনলাইন ক্লাস শুরু করবে কি করবে না, সেটার জরিপ চালাতে চালাতেই এরই মধ্যে পাঁচ মাস শেষ হয়ে যাচ্ছে। গতিহীন ইন্টারনেট, ইন্টারনেটের উচ্চমূল্যের প্যাকেজ, বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর গ্রামে অবস্থান, আর্থিক সংকটের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মানসিক নাজুক অবস্থার কারণে অনলাইন ক্লাস এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি বলে বলছেন অনেকে।

তবে মধ্যে কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে অনলাইনে পাঠদান শুরু হলেও বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের জন্য তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য, তা বিবেচনার বিষয়—এমন প্রশ্ন উঠে আসছে। এ ছাড়া দেশের সর্ববৃহৎ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গতকাল বুধবার (১ জুলাই) থেকে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর ঘোষণা দিয়েছে। এখানকার বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর মতামত নিয়ে জানা যায়, এ পদ্ধতিতে ক্লাস করার মতো মানসিক কিংবা আর্থিক অথবা প্রযুক্তিগত কোনো প্রস্তুতিই পুরোপুরি নেই তাদের।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক কাজী ফারুক হোসাইন বলেছেন, অনলাইন শিক্ষার ব্যাপারে যে আলোচনাটি বারবার উঠে আসছে, তার প্রতিবন্ধকতাগুলো কিন্তু আমরা ইতিমধ্যে জেনে গেছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে উঠে আসে। তাঁদের নেটওয়ার্কিং সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে আসা যেমন একটি চ্যালেঞ্জ, তেমনি আছে একটি অর্থনৈতিক চিন্তা। তা ছাড়া, অনলাইনে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে একটি বড় অসুবিধা আছে। করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই ধাক্কা সইতে হবে। এই বিষয়ে যতই যুক্তি থাকুক না কেন, একাডেমিক কার্যক্রম এভাবে বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীরা এরই মধ্যে পড়ে গেছেন ছয় মাসের সেশনজটে। করোনা পরিস্থিতির যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে, তাতে করে নিশ্চিত করেই বলা যায়, ২০২০ সালটাই শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে গায়েব হয়ে যাবে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা সত্যিকার অর্থেই বিরাট এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। জীবন থেকে একটি বছর অকারণে শেষ হয়ে যাওয়া যে কত বড় ক্ষতি, তা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যাবে ২০২১ সালের শুরুতে! সচেতন শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিয়ে অনেক চিন্তিত। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ছুটি কমিয়ে এনে বিষয়টি পুষিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কিন্তু আসলে তা বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব, এখনো কেউ জানে না!

চাকরি/ক্যারিয়ার
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাস করা কিংবা চাকরিপ্রার্থীদের জন্য এই লকডাউন চলাকালীন এবং পরবর্তী সময়টি বেশ কঠিনই হবে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শেষে বিরাটসংখ্যক শিক্ষার্থী চাকরির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যান। এ মহামারির কারণে সরকারি-বেসরকারি সব চাকরির পরীক্ষা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। এ রকম একটা অনিশ্চয়তা শিক্ষার্থীদের হতাশা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। মহামারির কারণে সব চাকরি পরীক্ষা স্থগিত, ফলে যে সময়টায় তাঁরা তাঁদের পরিবারের হাল ধরার কথা, এ সময়ে তাঁরা নিজেরাই বোঝা হয়ে উঠেছেন।

বিষয়টি স্বীকার করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া ইয়াসমিন তিন্নি। তিনি বলছেন, ‘লকডাউনে বসে পড়াশোনার ক্ষতির পাশাপাশি অন্য কিছু বিষয় নিয়েও আমি চিন্তিত। যেমন মেয়ে হিসেবে পরিবার থেকে বিয়ের চাপ আছে, এদিকে এ অবস্থার কারণে চাকরির জন্যও এক বছর পিছিয়ে পড়ছি বলে মনে হচ্ছে!’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস। ছবি: প্রথম আলো
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস। ছবি: প্রথম আলো

মানসিক স্বাস্থ্য

বর্তমান সংকটময় সময়ে একাকিত্ব, দীর্ঘদিন ঘরে বন্দী থাকা, চারদিকে মৃত্যুভয়, দীর্ঘ সময় ধরে একাডেমিক পড়াশোনার ব্যাঘাত—সবকিছু মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে, বলছেন মানসিক বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থা কাটিয়ে উঠে পুনরায় পুরো দমে পড়াশোনায় মনোযোগ ফিরিয়ে আনার বিষয়টি নিয়ে মতামত প্রদান করেছেন তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সাবিনা ইয়াসমিন। তাঁর মতে, ‘পড়াশোনায় একটা ছেদ পড়ে গেছে, যা কাটিয়ে ওঠা সময়সাপেক্ষ। এতে মানসিকভাবে আমাদের ওপর প্রভাব পড়ছে!’

করোনা মহামারির কারণে শিক্ষা খাত যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, তা থেকে উত্তরণের জন্য জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা খাতে প্রায় ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এটি সর্বোচ্চ বরাদ্দ। করোনা-পরবর্তী সময়ে এই বাজেটের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে সংকট ও যাবতীয় চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, এমনটাই আশা করছেন শিক্ষার্থীরা। করোনার পর যে কঠিন চ্যালেঞ্জ আসতে যাচ্ছে তা যদি যথাযথভাবে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা না হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তথা আগামী দিনের রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুদায়িত্ব নিতে চলছেন যাঁরা, তাঁদের জন্য কঠিন সময়ই অপেক্ষা করছে।


*শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।