বুটেক্সে আর্টেক্স

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন কিন্তু ক্লাব বা সংগঠন করেন না, এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যায়। কলেজজীবনের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখেই শিক্ষার্থীরা তাঁদের ইচ্ছেমতো ক্লাব বা সংগঠনে যোগদান করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেভাবে সাহিত্য চর্চার জন্য থাকে সাহিত্য ক্লাব, খেলাধুলার জন্য স্পোর্টস ক্লাব, নাচ-গানের জন্য সাংস্কৃতিক ক্লাব আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজনের দিক মাথায় রেখে আবির্ভাব হয় নতুন সংগঠনের। আর্টিস্ট অব বুটেক্স বা আর্টেক্স (Artex) হলো বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) নতুন সংগঠন, যা ৪১তম ব্যাচের কিছু প্রাণবন্ত সৃজনশীল মানুষ নিয়ে যাত্রা শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে যত দৃষ্টিনন্দন গ্রাফিতি দেখতে পাবেন, সবই আর্টেক্সের শিল্পীদের করা।

আর্টেক্স প্রতিষ্ঠার এই এক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক পরিবর্তন আসে। জরাজীর্ণ দেয়ালে বর্ণিল সব অঙ্কনের মাধ্যমে ক্যাম্পাসকে নতুন প্রাণ দিয়েছে সংগঠনটি। ২০১৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কিছু সৃজনশীল ও প্রতিভাবান শিল্পী মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের দেয়ালে ডিপার্টমেন্ট নামের অ্যামবিগ্রাম এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় গ্রাফিতি আঁকার মাধ্যমে আর্টেক্সের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

তারপর ক্যাম্পাসকে পরিষ্কার করা এবং সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে Lets Beautify BUTEX নামে কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাসহ সব ব্যাচের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। শিক্ষার্থীদের হাতের রংমাখা ছাপ দিয়ে তৈরি করে লাল-সবুজের পতাকা, যার মাধ্যমে দেশের জন্য যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।

১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে আর্টেক্স আয়োজন করে ‘রং-চং এ বৈশাখ’। আয়োজনের অংশ হিসেবে থাকে ৪৫তম নবীন ব্যাচের জন্য দেয়ালিকা প্রতিযোগিতা, প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের জন্য আলাদা লোগো অঙ্কন, আলপনা অঙ্কন। প্রতিযোগিতায় প্রতিটি বিভাগ থেকে নানা ধরনের দেয়ালিকা বানানো হয়। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতায় দেয়ালিকাগুলোতে প্রকাশ পায় বৈশাখের প্রেক্ষাপট, বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য, যা কবিতা, প্রবন্ধ, চিত্র আঁকার মাধ্যমে ফোটানো হয়। দেয়ালিকা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, রানারআপ হয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।

১১ ও ১২ নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নীরবতায় কলরব’ নামে একটি ইভেন্ট আয়োজন করা হয়। সে জন্য দুই দিনব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের পাশের দেয়ালগুলোতে গ্রাফিতি আঁকার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সব ব্যাচের অংশগ্রহণে ২০টির বেশি গ্রাফিতি আঁকা হয়, যেখানে টেক্সটাইল শিল্প, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ এবং গুণী ব্যক্তিবর্গের গ্রাফিতি বিশেষভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়। আয়োজনের দ্বিতীয় দিন রাতে ‘হালকা কলরব’-এর অংশ হিসেবে Insipid, Suicidal pumpkin, 5th chapter, Golpo ব্যান্ডের গানে ক্যাম্পাস মুখরিত হয়।

এর মধ্যেই এক বছর পার হয় আর্টেক্সের। কিছু সৃজনশীল মানুষ নিয়ে সংগঠনটির যাত্রা শুরু হলেও এখন এর সদস্যসংখ্যা অনেক। তা ছাড়া এর সদস্যদের শৈল্পিক সৃজনশীলতার পূর্ণতা দিতে ২২ অক্টোবর, ২০১৯ আর্টেক্স প্রাতিষ্ঠানিক সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

করোনাভাইরাসের প্রকোপে তিন মাসেরও বেশি সময় সবাই বাসায় সময় কাটাচ্ছেন। দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ, তবে আর্টেক্সের কাজ থেমে নেই। অনলাইন ইভেন্টের মাধ্যমে সংগঠনের কাজ এখনো অব্যাহত আছে। সম্প্রতি অনলাইনে ‘যেমন খুশি তেমন আঁকো’ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে শিক্ষার্থীরা বাসায় বসে ছবি অঙ্কন করে জমা দেন। করোনাভাইরাসের সচেতনতামূলক চিত্র ছিল চোখে পড়ার মতো।

প্রতিটি আর্ট বা গ্রাফিতির একেকটি গল্প থাকে, থাকে সে গল্পের চরিত্রও। শিল্পীরা নিজে চরিত্র হয়ে রং-তুলির সাহায্যে তাঁর সৃজনশীলতা ফুটিয়ে তোলেন। মনের মাধুরী মিশিয়ে ইচ্ছেমতো রং সাজিয়ে পূর্ণতা দেন একেকটি ছবির। ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে সবাই যেখানে সারা দিনের ক্লাস-ল্যাব নিয়ে ব্যস্ত, আর অন্যদিকে আর্টেক্সের শিল্পীরা কিছু সময় পেলেই কলম-পেনসিল দিয়ে হলেও আঁকাআঁকিতে মগ্ন হয়ে যাচ্ছেন। আর এসব পরিশ্রমী সৃজনশীল শিল্পী নিয়েই এগিয়ে যাবে সংগঠনটি, এগিয়ে যাবে সবার প্রিয় আর্টেক্স।

*শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়