প্যারিস রোডে সেদিন আবার নামবে বৃষ্টি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবাশ বাংলাদেশ ভাস্কর্য
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবাশ বাংলাদেশ ভাস্কর্য

একসঙ্গে আকাশ দেখব আবার। বৈশাখ আর বসন্তে খোঁপায় গোঁজার ফুল কিনব। রবীন্দ্রভবনের ছাদটায় আবারও জমবে বিতর্কের জমজমাট লড়াই। পরিবহন মার্কেটে বসবে গানের আসর। টুকিটাকির চায়ের কাপের টুংটাং শব্দ মিলেমিশে একাকার হবে গানের সঙ্গে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাপাখানার সামনের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আকাশভরা তারার আলোয় আমরা আবার অর্ণবের গান গাইব। প্যারিস রোডের বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে একই সঙ্গে চলবে কাব্যিক, বৈজ্ঞানিক এবং দার্শনিক কথাবার্তা।

আমতলায় বসে গান গাওয়ার ফাঁকে ইংরেজি বিভাগের বন্ধুরা আমাদের দেখে দৌড়ে আসবে। ফলিত গণিতের বন্ধু কষবে নতুন অঙ্ক। ৩০-৪০ পৃষ্ঠার অ্যাসাইনমেন্টের ধাক্কা খেয়ে সবাই আবার মরতে বসব। তারপর ক্লাসের ফাঁকে ঠিকই সব ভুলে আমরা আবার গাইব নতুন কোনো গান।

আবার দুর্দান্ত সব ক্রিকেট ম্যাচ দেখা হবে, চিৎকারে কাঁপবে আমাদের শেখ কামাল স্টেডিয়াম। আবারও কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে মঞ্চনাটক দেখব। সিরাজউদ্দৌলার নতুন কোনো যাত্রার আসরের বাইরে ঝুলবে ‘হাউজফুল’। শেখ রাসেল চত্বরের কনসার্টে গান গেয়ে গলা ভাঙবে। টিএসসিসিতে জমবে নতুন কোনো অনুষ্ঠান। ইবলিশের পুকুরপাড়ে প্রতিদিনই কারও না কারও জন্মদিন উপলক্ষে ফের জ্বলতে শুরু করবে শ খানেক মোমবাতি।

দোকানের ভাইদের আবারও কাপের পর কাপ চায়ের জন্য ভীষণ জ্বালাতন শুরু করব। শহীদ মিনারের পাশের বাগানটায় একসঙ্গে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে চলবে অনেকগুলো পাঠচক্র। আবারও লাইব্রেরির সামনে দেখা যাবে হাজারো বাইসাইকেল! বধ্যভূমি দেখলে আবারও মনে পড়ে যাবে একাত্তরের জ্বলন্ত ইতিহাস। অপূর্ব সুন্দর শহীদ জোহা চত্বরের দিকে তাকিয়ে শ্রদ্ধাবনত হব আবারও। শাবাশ বাংলাদেশ ভাস্কর্যটির দিকে অবাক তাকিয়ে রইব আমরা।

হলগুলোর সামনের পিঠাপুলির দোকানগুলোতে বসে গরম গরম ধোঁয়া ওঠা চিতই খাওয়া হবে। চারুকলায় জমবে বসন্ত, বৈশাখ কিংবা বর্ষবরণ। হয়তো আবারও বাড়ি ফেরার জন্য মন খারাপ করব। অবশেষে ছুটি হবে। স্টেশনে হয়তো আবার ট্রেন লেট করবে, আমরা প্ল্যাটফর্মে বসে তুমুল আলোচনার ঝড় তুলব। ছুটি শেষে রাজশাহী ফিরে গিয়ে ঝিঁঝিডাকা কোনো সন্ধ্যায় মিলিয়ে যাবে নগরীর সব কোলাহল। নতুন সেমিস্টারের নতুন কোনো বই কিনতে আমরা আবার ছুটে যাব সোনাদীঘির মোড়ে। 

বাড়িতে বসে বসে এই দমবন্ধ করা দিনগুলোতে সত্যিই ভীষণ মনে পড়ছে আমার সদ্য শুরু হওয়া দুই মাসের বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের কথা। পৃথিবী আবার কবে সব ভয় কাটিয়ে চিরচেনা রূপে ফিরে যাবে? আবার কবে টঙের বেশি চিনি দেওয়া চা খাওয়া হবে? আবার কবে বইয়ের দোকানে দরদাম করা হবে?
একদিন সত্যিই সব মন খারাপের অবসান ঘটিয়ে আমরা সবাই ফিরে যাব মতিহারের সবুজ চত্বরে! প্যারিস রোডে সেদিন আবারও নামবে বৃষ্টি। সকাল নয়টার কুয়াশা ভেদ করে রোজ দৌড়াব ক্লাসের পিছু পিছু। বসন্তে ক্যাম্পাসের আমগাছে আসবে নতুন মুকুল। আর সেই মুকুলের পাগল করা গন্ধে ক্লাসে যাওয়ার তাড়া ভুলে যাব আমরা। এসব কেবলই আমাদের স্বপ্ন নয়। চাতকের চাইতেও তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে দিনটি সত্যি হওয়ার আশায় আছি আমরা!

*শিক্ষার্থী, ১ম বর্ষ, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়