উদ্যোক্তার হাঁসের রাজ্যে একদিন

হাঁসের দলের সঙ্গে খেলা করছে শিশু। ছবি: লেখক
হাঁসের দলের সঙ্গে খেলা করছে শিশু। ছবি: লেখক

বাড়ির সামনে যত দূর চোখ যায় শুধু ধানখেত। এখন বৃষ্টির মৌসুম হওয়ার কারণে জমিগুলোতে হাঁটু ছুঁইছুঁই পানি হয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ খুলেই জানালা দিয়ে তাকিয়ে জমিগুলোতে দেখি শত শত হাঁসের ছোট বাচ্চা। দেখে মনে হচ্ছে, দল বেঁধে তারা খেলা করছে। স্বচ্ছ পানিতে রোদের ঝলকানির সঙ্গে হাঁসের বাচ্চার দল দেখে বিমোহিত হয়ে গেলাম।

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের বনচুকি গ্রামে মালদা নদীর তীরে
(কোলে) ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে বিশাল এ দেশি হাঁসের খাঁমার। নবীন এই উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলাম।
আমার গ্রামেই রফিকুল ইসলামের বাড়ি। তাঁর এমন উদ্যোগ দেখে কিছুটা শান্তি পেলাম। রফিকুল ইসলাম জানান, অলস জীবন ভালো লাগছিল না তাঁর। এ সময় তাঁর মাথায় চিন্তা এল, কী করে মানুষের ডিমের চাহিদা মেটানো যায়। সেই সঙ্গে নিজেও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যায়। এ চিন্তা থেকে বাড়ির পাশেই প্রবাহিত মালদা নদীর সঙ্গের জমিগুলোতে বৃষ্টির মৌসুমে হাঁসের খামার গড়ে তোলার চেষ্টা করেন তিনি। সফলও হন।
২০১৮ সালের শুরুতে রফিকুল ইসলাম ২০০ হাঁসের বাচ্চা নিয়ে শুরু করেন। প্রথমে কিছুটা ঘাটতি থাকলেও ২০১৯ সাল থেকে অনেক লাভ করে আসছেন তিনি। এখন তাঁর খামারে প্রায় ২ হাজার হাঁসের বাচ্চা রয়েছে। বাচ্চা হাঁসগুলো ৫ মাসের মধ্য ডিম দেয়। প্রাতিদিন ৪০০-৪৫০টির বেশি ডিম পান তিনি। সেই সঙ্গে প্রাপ্তকাল হাঁসগুলো বিক্রি করেন ৩০০-৪০০ টাকায়।

রফিকুল মিয়ার হাঁসের দলের একাংশ। ছবি: লেখক
রফিকুল মিয়ার হাঁসের দলের একাংশ। ছবি: লেখক

রফিকুল ইসলাম বলেন, এখন তাঁর প্রতিদিনের কাজ সকালে ঘর থেকে বাচ্চা বের করে জমিগুলোতে ছেড়ে দেওয়া এবং বিকেলে আবার খোঁজখবর করে ঘরে তোলা। এ করেই সময় কাটছে তার। হাঁসগুলো জমিতে চলাচলের সময় ছোট ছোট মাছ, পোকামাকড় ধরে খায়। এ ছাড়া সকাল ও বিকেলে বাড়তি খাবার হিসেবে ধান এবং শামুক খাওয়ানো হয়। তিনি ও তাঁর পরিবারের লোকজন খামারের হাঁসগুলো দেখাশোনা করেন।
সারা দিন জমিগুলোতে হাঁস নিয়ে থাকতে আপনার কেমন লাগে? রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখন মনে হয় আমি কাজের মধ্যেই আছি সব সময়। বেশ ভাল লাগে আর সময় কেটে যায় ভালোই। হাঁসগুলো আমার পরিবারের সদস্যদের মতো আপন হয়ে গেছে। এখন তাঁদের নিয়েই আমার জীবন।’ তিনি আরও বলেন, ‘হাঁসের খামার একটা লাভজনক ব্যবসা। আমি বিশ্বাস করি, ঠিকমতো হাঁসের টিকা ও খাবার দিতে পারলে হাঁসের খামার করে আমার মতো সবাই স্বাবলম্বী হতে পারবেন। তার ফলে দেশে বেকার মানুষের সংখ্যাও কমে আসবে।’
জমিগুলোর আইলে বসে হাঁসের খেলা দেখলাম অনেকক্ষণ। হাঁসের দলগুলো একসঙ্গে জমিগুলোতে যখন চলাচল করছিল দেখে মনে হচ্ছিল, এ যেন এক হাঁসের রাজ্যে এসে পড়েছি আমি।
*শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।