ডিজিটাল আমের ব্যবসায় সাফল্য

ফলের রাজা আমের স্বাদের জাদুতে মুগ্ধ হন সবাই। তাই আমের মৌসুমে ক্রেতারা এই সুস্বাদু ফলটি খেয়ে তৃপ্ত হতে চান। আর মৌসুমি ফল বিক্রেতারাও বছরজুড়ে অপেক্ষায় থাকেন আমের মৌসুমের। কারণ আমের চাহিদা বেশি থাকায় বিক্রেতারা আম বিক্রি করে একটু বেশিই আয় করতে চান, যেন বছরের বেশ কিছুটা সময় তাঁরা এই আয় দিয়ে সংসার চালাতে পারেন। 

আমের ব্যবসা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নতুন কিছু নয়। তবে ডিজিটাল মাধ্যমের প্রসারের আগে একজন আম বিক্রেতাকে বাগান থেকে আম সংগ্রহ করে বিক্রি করতে নিয়ে যেতে হতো দূরের আড়তদারদের কাছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁরা ন্যায্যমূল্য পেতেন না। আবার বিক্রির টাকা বাকি পড়ে থাকত অনেক দিন। অনেক সময় তাঁরা সেই টাকা তুলতেও পারতেন না।

আম বিক্রির বর্তমান চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার খুলে দিয়েছে এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার। অনেকেই এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পেজ তৈরি করা এবং ই-কমার্সের মাধ্যমে সরাসরি পৌঁছে যাচ্ছেন ক্রেতার দুয়ারে। আর মধ্যস্বত্বভোগী না থাকায় ডিজিটাল মাধ্যমে বিক্রেতারা ভালো দাম পাচ্ছেন এবং নগদ টাকায় বিক্রি করতে পারছেন। ফরমালিন ও অন্যান্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থমুক্ত আম পেতে অনেক ক্রেতাই সরাসরি বাগান থেকে কুরিয়ারযোগে আম কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। ডিজিটাল মাধ্যমে যাঁরা সততার সঙ্গে আম বিক্রি করছেন তাদের অনেকেই পেয়েছেন কাঙ্ক্ষিত সাফল্য।


তরুণ উদ্যোক্তা হাসান তানভীর বিবিএ ও এমবিএ শেষ করে চাকরি না খুঁজে শুরু করেন আমের ব্যবসা। তবে তিনি রাজশাহীর নিজেদের বাগানের আম বিক্রি করতে গতানুগতিক পথে না হেঁটে ক্রেতা খুঁজে নিয়েছেন ডিজিটাল মাধ্যম থেকে। তানভীর ২০১৩ সালে ‘রাজশাহীর আম’ নামে ফেসবুক পেজ তৈরি করেন আম বিক্রির লক্ষ্যে। বর্তমানে পেজটিতে লাইক আছে ১ লাখ ৪৫ হাজার। ক্রেতাদের মতামত জানতে খুলেছেন ফেসবুক গ্রুপও। গ্রুপটির বর্তমান সদস্যসংখ্যা ১০ হাজার।

তানভীর শুধু ফেসবুক পেজ বা গ্রুপেই সীমাবদ্ধ থাকেননি। তৈরি করেছেন আম বিক্রির ই-কমার্স ওয়েবসাইট ও দেশের প্রথম আম বিক্রির অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপ ‘Rajshahi Mango’। গত বছরের ৩০ মে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক তাঁর কার্যালয়ে অ্যাপটির উদ্বোধন করেন। অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপটি এখন পর্যন্ত ১৫ হাজারের বেশিবার ডাউনলোড হয়েছে।


রাজশাহীর আমের ওয়েবসাইট ও অ্যাপে যুক্ত আছে ডিজিটাল পেমেন্ট গেটওয়ে, যার মাধ্যমে ক্রেতারা মোবাইল ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ভিসা কার্ড ও মাস্টার কার্ড দিয়ে আমের দাম পরিশোধ করতে পারেন। তা ছাড়া ওয়েবসাইট ও অ্যাপের ব্লগ ও ভিডিও অপশন থেকে ক্রেতারা জেনে নিতে পারেন আম সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য। আমের জাত ও মান ভেদে দাম কম-বেশি হয়। তবে ক্রেতাদের আমের প্রকৃত মূলের সঙ্গে প্যাকেজিং ও ডেলিভারি চার্জ পরিশোধ করতে হয়।
তানভীরের এই উদ্যোগে তিনি নিজে সফল হয়েছেন এবং তাঁর মাধ্যমে আরও প্রায় ২০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। তানভীরের মতো এমন অনেক সফল উদ্যোক্তাদের গল্প নতুন উদ্যোক্তাদের অনুপ্রাণিত করবে।