করোনায় অনলাইন ক্লাসের অভিজ্ঞতা

করোনা যখন শিক্ষাব্যবস্থাকে ছারখার করে দিতে চলেছিল, তখনই শিক্ষাব্যবস্থার হাল ধরে অনলাইন ক্লাস। ছাত্রছাত্রীরা বেশ উৎসাহের সঙ্গেই ক্লাস করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। বহুদিন পর সময় কাটানোর জন্য কিছু পাওয়া গেল। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো, অনলাইন ক্লাস কতটুকু সফলতার সঙ্গে চলছে? আদৌ কি এর কোনো উপকারিতা আছে?

দেশের প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাস করছে, আমি নিজেও করছি। অনলাইন ক্লাসের জন্য প্রথম যে জিনিসটি লাগে সেটি হলো একটি স্মার্ট ফোন এবং কম্পিউটার। কম্পিউটার অত্যাবশ্যক উপাদান। ক্লাস করার জন্য স্মার্ট ফোন একাই যথেষ্ট নয়। যেকোনো বাড়ির কাজ অথবা অ্যাসাইনমেন্ট শিক্ষকের কাছে দেওয়ার জন্য কম্পিউটার দরকার হয়। আমি শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ক্লাসের কথা বলব। কারণ আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

আমাদের ক্লাস শুরু হয়েছে পয়লা জুলাই থেকে। প্রথম দিন সবাই ঠিকঠাকমতো ক্লাস করতে পারলেও দ্বিতীয় দিন থেকে শুরু হয় সমস্যা। কারও বাসায় বিদ্যুৎ নেই। কারও ওয়াই-ফাই ঠিকমতো কাজ করছে না। শিক্ষক সময়মতো ক্লাসে জয়েন করতে পারছেন না। কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তর পাওয়া যায় না, কারণ অপর প্রান্তের মানুষটার ইন্টারনেটে সমস্যা হচ্ছে।

এরপর, শিক্ষক যদি কোনো অ্যাসাইনমেন্ট দেন তাহলে খুব কম ছাত্রছাত্রীই পারেন অ্যাসাইনমেন্ট আপলোড করতে, বাকিরা পারেন না। অনেক বড় একটি বিষয়, যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন তাঁরা জানেন প্রতিদিনের উপস্থিতির একটি অংশ সিজিপিএ বাড়াতে সাহায্য করে। ৮০ শতাংশ উপস্থিতি থাকা বাধ্যতামূলক। যাঁদের ইন্টারনেটে অনেক বেশি সমস্যা হয়, তাঁদের ৮০ শতাংশ উপস্থিতি না থাকাটাই স্বাভাবিক। অনেক সময় দেখা যায়, অনেক শিক্ষকও এই নতুন টেকনোলজি সম্পর্কে জানেন না।

যাঁরা কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করছেন, তাঁদের কম্পিউটার থাকা বাধ্যতামূলক। কারণ তাঁদের ল্যাব ক্লাস আছে। যাঁরা এই বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছেন না, তাঁদেরও এই বিষয় নিয়ে পড়তে হয়। আমি ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী তার পরও সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন এই সিএসই ক্লাস আছে। যাঁদের কম্পিউটার নেই তাঁরা কোনোভাবেই ক্লাসটি করতে পারছেন না।

এ তো গেল অসুবিধার কথা এবার আসি উপকারিতার কথা।

অনলাইন ক্লাস যদি যথাযথভাবে করানো যায়, তাহলে সবারই সময় বাঁচবে। যাওয়া-আসার জন্য যে সময় নষ্ট হতো সেটা আর হবে না। তবে এটি আজীবনের জন্য সুবিধা নয়, একদিন না একদিন তো ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে হবে। একটি উপকারিতা কিন্তু সব সময়ই হবে। যাঁরা অসুস্থতা অথবা অন্য কোনো কারণে ক্যাম্পাসে উপস্থিত হতে পারছেন না, তাঁরা সেদিনের ক্লাসটা অনলাইনে করে ফেলতে পারেন।

টেকনোলজির সুবিধা-অসুবিধা থাকবেই কিন্তু আমাদের চেষ্টা করতে হবে টেকনোলজিটা কীভাবে সহজ করে ব্যবহার করা যায়। যদি আমরা ব্যবহার করতে পারি, নিঃসন্দেহে এই অনলাইন ক্লাস আমাদের সবারই উপকারে আসবে।


*শিক্ষার্থী: ইংরেজি বিভাগ (প্রথম বর্ষ), ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি