লাল স্বর্গের পুনরায় স্বপ্ন

যেদিন লাল রঙের দালানগুলো প্রথম দেখেছিলাম, সেদিনই একটা আলাদা কিছু মনে হয়েছিল। ইউনিভার্সিটি? আমার কাছে সেই ছোট্টবেলায় দেখা হগওয়ার্টস ক্যাসল। সেদিন আমার কাছে রেড হেভেন বা লাল স্বর্গের IUT–কেও (Islamic University of Technology) হগওয়ার্টস ছাড়া অন্য কিছুই মনে হয়নি। যেন জাদুর দুনিয়ায় আমি হাজির।

জানুয়ারির প্রচণ্ড শীতের এক সকালে হগওয়ার্টসের কিংবা লাল স্বর্গের স্নেহ–ভালোবাসা আনুষ্ঠানিকভাবে পেতে শুরু করলাম। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। পড়ালেখা খুব একটা না করলেও এই চিন্তা মাথায় আসতেই অন্য রকম কিছু একটা অনুভব হতো সিডিএস, ক্যাফেটেরিয়া, রিডিং রুম, সাদের সঙ্গে লুকিয়ে হলে যাওয়া, লাল দালানের ছবি তোলা, ডিকে, সব মিলিয়ে যেন এক অসাধারণ ছন্দ।

আওয়াইস স্যারের মেকানিকস ক্লাস কিংবা মেশিনশপের ওয়েল্ডিং ক্লাস—সবই ছিল যেন রঙিন ও অন্য রকম। ক্লাস শেষ পাঁচটায় হলেও মাগরিবের আগে ক্যাম্পাস ছাড়ার কথা চিন্তাও করতাম না। একা একাই ঘুরতাম, ছবিও তুলতাম কিছু। এভাবেই কাটছিল সেই লাল ভালোবাসার দিনগুলো।

সাজিদ, সায়্যিদ, তাহমিদ, রাফি, সাদ, অর্ণব, জাওয়াদ, মক্কি (মুহিব), লাবিব, লাহাম, মোহ, শুভ্র, বর্ষণ, নাইমসহ আরও সবাই ছিল এক অসাধারণ গল্পের একেকটা লাইন।

সবে ক্লাস শুরু হলো। দেড় মাসের মতো হয়েছিল। এর মধ্যে মিড এক্সাম এল, আবার চলেও গেল। সাত দিনের ছুটিও শেষ হলো।

আমি সাজিদকে বললাম, বন্ধু, এবার পড়াশোনাটা সিরিয়াসলি করাই লাগবে। সাজিদ মন্ত্রমুগ্ধের মতো মাথা নাড়ল। মনে হয় আমার কথায় খুব একটা ভরসা খুঁজে পেল না। সবকিছু যেন সুন্দর একখানা ঘুমের ভেতর স্বপ্নের মতো চলছিল।

তারপর কে যেন হঠাৎই এই সুন্দর ঘুমটা ভেঙে দিল। স্বপ্নটা চট করে ভেঙে গেল খুব বাজেভাবে। যেদিন বিশ্ববিদ্যালয় ছুটির নোটিশ দিয়েছিল যে পরদিন থেকে সব একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে, সেদিন রাতে আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা মসজিদে জয়নাবে (IUT সেন্ট্রাল মসজিদ) নামাজ পড়ে প্রভুর কাছে একটাই প্রার্থনা করেছিলাম, ‘ঘুমটা যেন আবার আসে, স্বপ্নটা যেন আবার দেখি।’

ঘুম হয়তো আবার আসবে। তার স্নিগ্ধ স্পর্শ দিয়ে লাল দালানের করিডোর দিয়ে, লেকের পাশ দিয়ে, ক্যাফেটেরিয়ায়, বড় ভাইদের সালাম দেওয়ার জন্য ধমকে দিতে দিতে আবার স্বপ্ন দেখাতে শুরু করবে। তাহমিদ আবার বিসমিল্লাহতে যাবে। হল থেকে গিটারের শব্দগুলো ডে আকারে ফেসবুকে ভাসতে থাকবে। সায়্যিদের পাবজি সিজি সমানতালে চলবে। আওয়াইস স্যার ফ্রম হিয়ার টু হিয়ার আবার আরও অস্পষ্ট উচ্চারণে বলবে। মেশিনশপে আবারও দেরি হবে। সূর্যটা আবারও লাল মসজিদের ঠিক পাশেই উঠবে। সেই সঙ্গে কোনো এক সুললিত কণ্ঠে মাগরিবের নামাজ পড়াবেন বৃদ্ধ ইমাম কিংবা আমাদেরই কোনো এক কৃষ্ণাঙ্গ ভাই, যে এসেছে সুদূর সাহারার কোল থেকে।

আর আমি? যদি বেঁচে থাকি, আবার বলব, ‘সাজিদ বন্ধু, এভাবে পড়লে ভালো ইঞ্জিনিয়ার হব কেমনে?’

নাহ, পড়াশোনাটা না সত্যি সত্যিই সিরিয়াসলি করা লাগবে।

*শিক্ষার্থী, আইপিই, ইসলামিক ইউনির্ভাসিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি)