প্রাণের ক্যাম্পাসে কবে ফিরব

বিদ্যাপীঠের আকর্ষণীয় এবং ভালোবাসার স্থান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রিয় ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ। ক্যাম্পাস বলতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে শুধু ইট-বালুর তৈরি কোনো বিল্ডিং নয়, শুধু চেয়ার-টেবিলের জড় কোনো বস্তু নয়, প্রতিটি জিনিসের প্রতি নিজের একটা অধিকার, একটা ভালোবাসার নাম এই ক্যাম্পাস।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলো ভালোবাসার ছোঁয়াতেই বেশ চলছিল, হঠাৎ সেই চলমান দিনগুলোতে আঘাত হানল করোনাভাইরাস নামের এক অদৃশ্য মহামারি। যা শুধু ক্যাম্পাসজীবনেই নয়, ব্যত্যয় ঘটিয়েছে বিশ্বজুড়ে সবকিছু ঘিরে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলোর স্মৃতি স্মরণ হচ্ছে বারবার। ব্যস্ত নগরীতে দৈনন্দিন জীবনে সকালবেলায় ছুটে চলা মানুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রিয় ক্যাম্পাসকে গন্তব্য করে সকাল সকাল বাসা থেকে তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে পড়া। প্রথমেই ক্যাম্পাসের প্রবেশমুখে সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা মানুষের সাক্ষাৎ এবং দিনের শুরুতে পরিচিত মানুষ পেয়ে তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা পাওয়া, তারপরই নির্দিষ্ট শিডিউল ক্লাসে প্রবেশ, এক এক করে বন্ধুদের সঙ্গে নতুন সকালের কুশল বিনিময় করতে করতেই শিক্ষকের ক্লাসে প্রবেশ, এক বা দুটি ক্লাস শেষ করে ক্যান্টিনে গিয়ে কখনো বেলা ১১টায় আবার কখনোবা দুপুর ১২টায় সকালের নাশতা করা, ২টি রুটি কয়েক টুকরা করে ভাগাভাগি করে নেওয়া। নাশতা শেষে একসঙ্গে বসে সবার হাসিঠাট্টায় মুখরিত হয় প্রিয় ক্যাম্পাসের ক্যানটিন প্রাঙ্গণ। আড্ডায় কখনো যোগ হতো গানের আসর নয়তো গল্প, আবার কেউ কেউ টেবিল টেনিস, নয়তো ক্যারাম খেলায় ব্যস্ত হয়ে যেত।

এরই মধ্যে ‘সময়’ মনে করিয়ে দেয় পরের ক্লাস অংশগ্রহণের ক্ষণ। দল বেঁধে একসঙ্গে লিফটের জন্য সবার জড়ো হওয়া, কিছু মানুষের চাপাচাপি করে জায়গা করে নেওয়া, বাকিদের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে বাধ্য হওয়া। ক্লাস শেষ করে একসঙ্গে টংয়ে বসে চা খাওয়া, মজার আড্ডার সঙ্গেই সময় জানান দেয় লাঞ্চের টাইম পার হয়ে যাচ্ছে। ক্যানটিন থেকে এক প্লেট খিচুড়ি নিয়ে দু–তিনজন মিলে ভাগাভাগি করে খাওয়া। বিকেল পর্যন্ত সময় কেটে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিয় এই ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে।

পরবর্তী দিনের পরিকল্পনা করে ক্লান্ত হয়ে যানজট পেরিয়ে ফিরতে হয় বাসায়। এভাবেই তৈরি হয় প্রতিদিনের গল্প।

আজ দীর্ঘ প্রায় চার মাস প্রিয় ক্যাম্পাসে আমাদের আনাগোনা নেই। নেই আজ সকালের ৮টার ক্লাসটি ধরতে রাতে তাড়াহুড়া করে ঘুমতে যাওয়া, নেই ঘুম চোখে ক্লাসের জন্য সকাল সকাল উঠে পড়া এবং ফ্রেশ হয়ে ক্যাম্পাসের উদ্দেশে ছুটে চলা। আজ নেই একসঙ্গে বন্ধুদের আড্ডায় আসর জমানো। নেই ক্লাসে হইচই করা। নেই ক্যানটিনে একটু রুটি, ডাল বা খিচুড়ি ভাগাভাগি করে একসঙ্গে খাওয়ার গল্প। নেই চায়ের দোকানে বসে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করা। সবকিছু কেমন অচেনা–অপরিচিত হতে শুরু করেছে। প্রিয় ক্যাম্পাসে আমাদের অনুপস্থিতি ধুলাবালু নয়তো মাকড়সারা দখল করে নিয়েছে, ক্যাম্পাস পরিণত হয়েছে ইট-বালুর তৈরি শুধু কাঠামোতে।

এই করোনা মহামারির শেষ কোথায়? কবে প্রাণ ফিরে পাবে প্রিয় ক্যাম্পাস! আর আমরাই-বা কবে ফিরব জাদুর শহরের সেই ব্যস্ত নগরীর প্রাণচাঞ্চল্যে!

হয়তো শহর সুস্থ হয়ে উঠবে, আবার এক সুস্থ সকালের সূর্যোদয় হবে, সবাই নতুন করে আবার জীবনের গতি ফিরে পাবে। শিক্ষার্থীদের মুখরতায় প্রাণ ফিরে পাবে প্রিয় বিদ্যাপীঠ, তথা ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ।

সুস্থ এক সকাল, তথা নতুন সূর্যের প্রত্যাশা।

লেখক: শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।