এখনো মায়ের অপেক্ষায় ছোট্ট তুবা

ছোট তুবা এখনো মায়ের অপেক্ষায়।
ছোট তুবা এখনো মায়ের অপেক্ষায়।

২০১৯ সালের ২০ জুলাই। তখন গুজবের এক মহা আতঙ্ক বিরাজ করেছিল দেশজুড়ে। আর সেই গুজবের বলি হয়ে অত্যন্ত বেদনাদায়ক মৃত্যু হয়েছে তাসলিমা বেগম রেনুর, গত বছর ঢাকার বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে।

তাসলিমা বেগম রেনু মেয়েকে ভর্তির জন্য ওই স্কুলে খোঁজ নিতে গিয়ে কথাবার্তায় সন্দেহ হলে মুহূর্তের মধ্যে লোকজন জড়ো হয়ে ছেলেধরা সন্দেহে প্রকাশ্যে তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে জানা যায় রেনু কোনো ছেলেধরা ছিলেন না। তিনি সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাস্টার্স করা একজন শিক্ষিত নারী ছিলেন।

আজ ২০ জুলাই। রেনু হত্যার ১ বছর পূর্ণ হলো। নানা ঘটনার আড়ালে রেনু হত্যার ঘটনা সবার মন থেকে চাপা পড়ে গেলেও এখনো মাকে ভুলতে পারেনি রেনুর রেখে যাওয়া সেই ছোট্ট মেয়ে তুবা। এখনো জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে তার মা রেনুকে খোঁজে। গভীর রাতে ঘুম ভেঙে এখনো মায়ের জন্য কাঁদে ছোট্ট মেয়ে তুবা। এখনো সে স্বপ্ন বোনে। তার মা বিদেশ গেছেন। তার মা পচা তাই বিদেশ থেকে এখনো আসছেন না। খেলনা মোবাইল দিয়ে এখনো তুবা তার মায়ের সঙ্গে কথা বলে। পুতুল নিয়ে খেলা করে দিন কাটে তুবার।
আংকেল, মায়ের কাছে যাব, আমাকে বিদেশ নিয়ে যাবেন? তুবার সঙ্গে কথা বললে এমনই আবেগের কথাগুলো ফুটে আসে মেয়েটির মুখ থেকে। তুবার বয়স এখন সাড়ে চার বছর। যে তুবার ভর্তির খোঁজ নিতে গিয়ে রেনু নিহত হয়েছেন, সেই তুবা এখন বনানী শিশু নিকেতন স্কুলে নার্সারিতে পড়ছে। রেনুর আরেকটি ছেলেও আছে। তার নাম তাহসেন আল মাহির। বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সে। মাকে হারিয়ে অশ্রুকাতর ছেলে মাহির। আবেগঘন কণ্ঠে বলে উঠল, মাকে খুব মিস করি। আমার মা আর আসবে না।

মা বিদেশে আছেন বলে বুঝ দেওয়া হয় তুবাকে।
মা বিদেশে আছেন বলে বুঝ দেওয়া হয় তুবাকে।

রেনুর রেখে যাওয়া দুই ছেলেমেয়ে তুবা আর মাহিরের দেখাশোনা করছেন রেনুর বড় বোন নাজমা শাহীন। বোন হারানোর ব্যথা বুকে নিয়ে এখনো তাঁর বোনের হত্যার বিচার পাওয়ার আশা দেখেন তিনিও। বোনের সঙ্গে নানা স্মৃতিবিজড়িত কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এখনো মনে হয় রেনু আমার বাসার বারান্দায় ঘুরছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নিহত রেনু আড়ং ও ব্র্যাকে চাকরি করতেন। এর আগে স্কুলে শিক্ষকতাও করেছে। প্রায় দুই বছর আগে স্বামী তসলিম হোসাইনের সঙ্গে তার বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। এরপর থেকে সে আমার মায়ের সঙ্গে মহাখালীর ওয়্যারলেস গেটের একটি ভাড়া বাসায় তার দুই সন্তান নিয়ে থাকত। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা আমার বড় ভাই মো. আজগার আলীর কাছে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন রেনু। কিন্তু আমার বোনের আর যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া হলো না। সে আমাদের ছেড়েই চলে গেল। আমার বোনের হত্যার আজ এক বছর পূর্ণ হলো কিন্তু এখনো আদালত মামলার কোনো চার্জশিট দিচ্ছে না। মামলার কোনো অগ্রগতি নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাই। রেনুর দুইটা বাচ্চা। এই দুইটা বাচ্চার ভবিষ্যৎ কী? আমরা আশা করি প্রধানমন্ত্রী আমাদের সহযোগিতা করবেন এবং আমার বোনের বিচারের রায় দেওয়ার দ্রুত ব্যবস্থা করবেন।’

শিক্ষার্থী: সরকারি তিতুমীর কলেজ