প্রিয় ক্যাম্পাস এবং বন্ধুরা আজ কোথায়

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের বন্ধুরা। ছবি: লেখক
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের বন্ধুরা। ছবি: লেখক

মানুষের জীবনের মধুর সময় বলা হয় ছাত্রজীবনকে। আর ছাত্রজীবনের সবচেয়ে সেরা সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময়টাকে। হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে পেছনে ফেলে অর্জন করে নিতে হয় নিজের কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সিট। কারও ঠিকানা হয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, কারও ঠিকানা হয় প্রাচ্যের কেমব্রিজ খ্যাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা সাংস্কৃতিক নগর সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ক্যাম্পাসে প্রথম কয়েক দিন ক্লাস করেই তৈরি হয়ে যায় বন্ধুদের এক বিশাল সার্কেল। হঠাৎ করেই কিছু অচেনা অজানা মুখ হয়ে যায় সবচেয়ে আপনজন। তেমনি এক সার্কেল মতিহারের সবুজ চত্বরে অবস্থিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের বন্ধুরা।

ক্লাস শেষ হওয়ার পর আমাদের প্রথম গন্তব্য থাকে টুকিটাকি চত্বর। টুকিটাকি চত্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় আড্ডার জায়গা। এখানে এলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব বিভাগের শিক্ষার্থীকে আড্ডা দিতে দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ বলা যেতে পারে টুকিটাকি চত্বরকে। ক্লাস শেষ করে বন্ধুরা সব দল বেঁধে চলে টুকিটাকির দিকে। টুকিটাকিতে অচিরেই জমে ওঠে চায়ের কাপে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা। সঙ্গে থাকে গিটার আর বন্ধুদের সঙ্গে গলা ফাটিয়ে গান করা। নিমেষেই দূর হয়ে যায় সারা দিনের সব ক্লান্তি, সব বিষণ্নতা।

টুকিটাকি চত্বরের পর ক্যাম্পাসের আরেকটি আড্ডার জায়গা হচ্ছে ইবলিস চত্বর। প্যারিস রোড ধরে হাঁটলে একদম শেষে ইবলিস চত্বর। ইবলিস চত্বরের পাশে বিশাল মাঠ প্রায় সময়ই মেতে থাকে বিভিন্ন ব্যান্ড দলের কনসার্টে। দেশের বিখ্যাত সব ব্যান্ড দল এখানে আসে পারফর্ম করতে। সেসব কনসার্টে বন্ধুদের কাঁধে কাঁধ রেখে চলে গলা ফাটিয়ে গান করা। এ ছাড়া আড্ডা দেওয়ার জন্য রয়েছে শহীদ মিনার, চারুকলা, বদ্ধভূমিসহ বিভিন্ন জায়গা। বন্ধুদের সঙ্গে হই হুল্লোড় করতে করতে কখন যে সময় কেটে যায়, তা টেরও পাওয়া যায় না।

ছোট ছোট কিছু টুকরা গল্পে বাঁধা, এলোমেলো কিছু স্মৃতিতে সাজানো বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলো। আর এসব স্মৃতির পুরোটাই জুড়ে থাকে প্রিয় বন্ধুরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে আবেগের জায়গা দখল করে রাখে এই প্রিয় বন্ধুরাই। নিজ নিজ বাড়ি থেকে অনেক দূরে বন্ধুরাই একমাত্র ভরসার জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সার্কেল অন্য সব সার্কেল থেকে একটু ভিন্ন। এখানে একেকজন দেশের একেক প্রান্ত থেকে উঠে আসে। তাই সার্কেলের মধ্যেও দেখা যায় বৈচিত্র্য। তবে এত বৈচিত্র্য থাকার পরও বন্ধুদের মধ্যে আবেগ ও ভালোবাসার কমতি থাকে না।

কোভিড-১৯ প্রকোপে পুরো পৃথিবীর সঙ্গে প্রিয় স্বদেশও আজ বিধ্বস্ত। সেই ধারাবাহিকতায় প্রিয় ক্যাম্পাস আজ কয়েক মাস বন্ধ। রঙিন ক্যাম্পাস আজ মলিন। প্রিয় বন্ধুরাও বাসায় অলস সময় পার করছে। সবাই মিস করছে প্রিয় ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো সময়গুলোকে। এখন সবার মনে একটাই প্রশ্ন, কবে খুলবে প্রিয় ক্যাম্পাস, কবে ফিরব মতিহারের সবুজ চত্বরে। আবার দেখা হবে প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে। আবার জমে উঠবে টুকিটাকি, ইবলিস চত্বরের আড্ডার দিনগুলো। সবার পদচারণে মুখরিত হবে ক্যাম্পাসের প্রতিটি কোণা।

*শিক্ষার্থী: আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।