ঈদ, অর্থ ও খুশি

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ঈদুল আজহা। কোরবানির ঈদ নামে সমধিক পরিচিত। ঈদ মানেই খুশি। আর এই খুশিকে ত্বরান্বিত করতে কাজ করে অর্থ। ফলে ঈদকে কেন্দ্র করে চলে টাকার লেনদেন। ফলে ঈদ কেবল খুশিই নিয়ে আসে না, সঙ্গে অর্থনীতির চাকার চলার গতিপথকে বৃদ্ধি করে। তবে এই ঈদে অর্থনীতির এই চাকাটা শ্লথ, ধীর।

কোরবানির ঈদে অর্থের লেনদেন সবচেয়ে বেশি ঘটে গরু-ছাগল কেনা-বেচায়। এই গবাদিপশুর কেনা-বেচায় এবার অনেকটাই ভাটা পড়েছে। করোনা, বন্যার কারণে প্রান্তিক কিংবা এই পেশায় জড়িত ব্যক্তিদের হাত যেমন খালি, তেমনি বেসরকারি চাকরিজীবীদের অনেকেই সময়মতো টাকা না পাওয়ায় কোরবানির পশু কিনতে পারেননি। অনেকেই কোরবানি দিতে না পারার লজ্জায় গ্রামে ঈদও করতে আসেননি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায়, এই ঈদে কোরবানি পশুর বেচা-কেনা কম হয়েছে।

গত বছরে বিক্রি না হওয়া গবাদিপশু এবং এই বছরের প্রায় ১ কোটি গবাদিপশু মিলে বাজারে চাহিদার তুলনায় সংখ্যাটা বেশি। একদিকে পশু কোরবানি দেওয়া মানুষের সংখ্যা যেমন কমেছে, তেমনি হাটে গবাদিপশুর সংখ্যাও বেশি। ফলে ব্যবসায়ীদের ধারণা, প্রায় ২০ ভাগ গবাদিপশু অবিক্রীত থেকে গেছে।

অথচ অন্যান্য ঈদের সময় দেশের বেশির ভাগ মানুষের ঈদকে কেন্দ্র করে একটা চাঞ্চল্য কাজ করে। নিম্ন শ্রেণির মানুষজন যেমন ঈদে কেনাকাটা করেন, তেমনি মধ্যবিত্ত-উঁচু শ্রেণির মানুষজনও ঈদকে কেন্দ্র খরচ করে থাকেন। কাপড়ের মার্কেট থেকে শুরু করে মসলাদির বিক্রি, প্রসাধন কিংবা যোগাযোগব্যবস্থায় মানুষের টাকার লেনদেন ঘটে। অথচ, এই করোনাকালে অনেক মানুষ শহরেই থেকে যাচ্ছেন। ফলে পরিবহন খাতেও অন্যান্য বছরের তুলনায় টাকার লেনদেন উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।

শুধু কোরবানিকে কেন্দ্র করে যে ব্যবসাগুলো ছিল, সেগুলোর ব্যবসায় মন্দা দেখা গিয়েছে। চামড়া সংরক্ষণ করা লবণশিল্প যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি ট্যানারি শিল্পও ক্ষতির মুখে। এ ছাড়া, কামারের দোকানের ব্যস্ততাও কম। ফলে এই কোরবানিকে কেন্দ্র করে যে অর্থনীতি চালু ছিল, তা নিশ্চিতভাবেই ধাক্কা খেয়েছে।

ফলে এই ঈদ অনেকের জন্যই হয়তো বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে, তেমনি অনেকের ঈদই হয়তো বিষাদগ্রস্ত। কেননা, দিন শেষে অর্থের ভূমিকা এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তবে এই ঈদ হয়তো অনেকের জন্যই খুশির হবে যদি সামর্থ্যবান ব্যক্তিরা এগিয়ে আসেন। মনে রাখতে, সুখ একা একা ভোগ করা যায় না। দিন শেষে সমাজের সব মানুষ যখন পাশাপাশি থেকে একে অন্যের দুঃখ নিয়ে ভাববে, তখনই কেবল ঈদ হয়ে উঠবে আনন্দময়।

*লেখক: শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়