কষ্টের মাঝে তৃপ্তির ঈদ

রাহেলা বেগমের একমাত্র সম্বল স্বামীর রেখে যাওয়া ঘরটি গত মাসের প্রবল বৃষ্টির সঙ্গে বন্যায় খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়েই তাঁর জীবন। ছেলেমেয়ে দুজন ঢাকায় চাকরি করতেন কম বেতনে। করোনা মহামারিতে তাঁদের দুজনের চাকরি চলে গেছে। তাঁরা চার মাস ধরে ঘরবন্দী হয়ে ছিলেন। খাবার নেই, চাকরি নেই। খুব খারাপ সময় পার করছিলেন। মাকে কথা দিয়েছিলেন তাঁরা এই ঈদ বাড়িতে করবেন। সেই আশা নিয়ে মহামারির সময় জীবনকে অনিরাপদভাবে রেখে গরুর ট্রাকে বাড়িতে চলে এসেছেন তাঁরা। মা তাঁদের দেখে অবাক। এ যেন কষ্টের মাঝে তৃপ্তির ঈদ।

ঈদের পরের দিন রাহেলা বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, বাড়িতে মাছ আর ডাল রান্না করেছে তিনি। চালা ফুটা ঘরের মাঝখানে ছেলেমেয়ে নিয়ে খেতে বসেছেন মনের আনন্দে।

শুধু রাহেলা বেগম নন, এমন চিত্র লালমনিরহাটের বানভাসি এবং করোনা মহামারির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হাজারো মানুষের। অধিকাংশের বাড়িতে চাকরি হারানো ছেলেমেয়ে নিয়ে আয়হীনভাবে জীবন যাপন করছে তারা। ক্ষতিগ্রস্ত ঘর থাকায় রান্নাবান্না করতেও সমস্যা হচ্ছে। করোনা মহামারির ফলে আয়হীন অবস্থায় থেকে ঢাকাফেরত শ্রমজীবী মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। এমন একটি পরিস্থিতিতে ঈদের আয়োজন করতে পারেনি অনেকে। তাদের কষ্টের জীবনের মধ্যে ঈদ এসেছে বর্ণহীন হয়ে। তবু বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া পরিবারকে নিয়ে তারা তৃপ্তির মাঝে ঈদ আনন্দ করছে।

করোনাভাইরাসের প্রকোপ সামাল দিতে যখন আমরা হিমশিম খাচ্ছি, গোটা দেশে তখন বন্যার পানি। আর এমন সময় এল কোরবানির ঈদ। এই তিন ধাক্কা সামাল দিতে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের নাজেহাল অবস্থা।

অনেকেই আজ করোনার কারণে ঘরে বসে আছেন। সংসার চালানোর অর্থ নেই। ব্যবসা-বাণিজ্যেও চরম সংকট চলছে। এই সংকট কিছুটা যখন কাটতে শুরু করেছে, ঠিক তখনই বন্যার পানিতে দেশ ভাসছে। তবু যেন এই ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করছে ঈদ।

করোনার কারণে আয়হীন জীবন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘর, খাদ্যের অভাব—এত সব সমস্যার পরও তাঁরা যেন খুশি। তাঁদের ঘরের ছেলেমেয়ে ঘরে ফিরে এসেছেন। পরিবারসহ এই ক্ষতিগ্রস্ত সময়ে তাঁরা যেন মনের আনন্দেই উদযাপন করছেন বিষাদগ্রস্ত এক তৃপ্তি নিয়ে।
ঈদ উদযাপনের চেয়ে বেঁচে থাকার লড়াইটাই যেন এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

লেখক: তাজওয়ার আহমেদ তনয়
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।