তোমার আকাশে চিঠি পাঠালাম

আমি আকুল হয়ে আছি, কবে দেখা পাব গো তোমার! জানো কি তুমি, ভিন্ন দুজোড়া হতে মেশানো একজোড়া নয়নে প্রথম সকাল দেখার দিনের স্বপ্ন আমায় কীভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে? হৃদয় দেওয়ার সাতাশিটি দিন কেটে গেল, এখনো চোখের দেখাটা হয়নি আমাদের। এতে কী গূঢ়তত্ত্ব লুকানো, আমি জানি না, বুঝি না। কিন্তু এটুকু জানি যে প্রতীক্ষার পর প্রাপ্তির ফল খুব সুমিষ্ট। বহুদিনের অপেক্ষার পর প্রথমবার বাহুবন্ধনে বেঁধে ব্যস্ত রাস্তার গন্তব্যহীন হাঁটার দিনটা নিয়ে শয়নে-স্বপনে কল্পনার সমুদ্রে অবগাহনের অনুভূতি অনন্য।

শোনো, আমার এ অনুভূতি কোনো সাধারণ আবেগের অনুভূতি না। এর বীজ কবে রোপিত হলো, তা থেকে চারা গজাল, আমি ঠিক জানি না। আমার নজরে পড়ল যখন তা দিনে দিনে বেড়ে ওঠে সুবিশাল এক মহিরুহ। বুঝতে না বুঝতেই যত্নে পরিচর্যা করে এসেছি অনেক দিন আজ।

অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বানানো এ অনুভূতি আমার। জানো, এ জন্যই হয়তো অল্প সময়ে এত শক্ত বাঁধনে বেঁধে ফেলেছি তোমায় নিজের অজান্তেই। আমার কাছে মনে হয় নিজেদের অজান্তেই যেন হাজার দিন কাটিয়ে এসেছি আমরা একসঙ্গে, শতসহস্র মাইল পথ হেঁটে এসেছি। এক নিমেষেই দুজন দুজনের মনের খবর পড়ে নিতে পারি। সত্যি বলতে, পড়ারও প্রয়োজন হয় না। কারণ, আমি জানি স্বতঃস্ফূর্তভাবে যা ভেবেছি ভাবি বা ভাবব, তোমার মনের লুকানো ঘরটাতেও সেসব ভাবনাই ঘোরাঘুরি করে, কেবল দুদিন আগে-পরে হয়তো বাইরে এসে উদ্ভাসিত হয়।

প্রচণ্ড দাবদাহের পর হাঁসফাঁস করা আমাতে তুমি প্রথম শ্রাবণের ধারা, বহু দীর্ঘশ্বাসকে এক নিমেষে দূর করে দেওয়া আমার প্রথম ফাগুনের শীতল ছায়া।

এতকাল নিজের অপূর্ণতা উপলব্ধি করতাম, কিন্তু তা কিসের জন্য অনুভবে আসত না, কিন্তু কিছু একটা অসম্পূর্ণতা টের পেতাম ঠিকই। আজ বুঝি আমার পূর্ণতা তুমি এ নন্দনকাননে।

জানো, আমি দেখি, আগামীর সুন্দর দিন হাতছানি দিয়ে ডাকে আমাদের। সোনালি ডানায় ভেসে বেড়াব আমরা দুজনে। শুদ্ধতম প্রেমের মহিমায় ঔজ্জ্বল্য বিরাজ করবে আমাদের চাহনিতে। নিজেকে খোঁজা আমি থেকে আমাদের আমরা হয়ে ওঠা আমাদের ছোট ছোট চাওয়া-পাওয়ায়, আমাদের ছোট্ট ছোট্ট গল্প রচনায়। ভাবতে অবাক লাগে, আমি যেভাবে চাইতাম, ঠিক সেভাবেই আমার জন্য স্রষ্টা একজন মানুষ বানিয়ে রেখেছিলেন! আমি জানি না, কোনো পুণ্যের জোরে আমি তোমায় পেলাম, চিরসাথি।

এই ছেলে, তোমার কণ্ঠের সুধা আর বাচনভঙ্গির প্রেমে পড়ি আমি প্রতি রাতে, প্রতিমুহূর্তে যতক্ষণ থাকো কাছে।

জানো, আমি সারাটি দিন অপেক্ষার প্রহর গুনি একটিবারের মতো গলাটা শুনতে পাব আর চোখ বন্ধ করে স্বপ্নে কল্পনার জাল বুনব।

আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বটি আগে বুঝলেও অনুভবে আসত না তেমন। আমার রংহীন জীবনে তুমি প্রবেশ করার পর থেকে সব যেন আমূল পাল্টে গেল। আমি তোমার সঙ্গে ঘণ্টা পর ঘণ্টা কথা বলি, ফোন রাখার পর মনে হয় যেন ৫ থেকে ১০ মিনিট কথা হলো কেবল!

আমার গানের স্বরলিপি, তোমায় গলায় গান শুনতে মনটা আনচান করে! জানো, আমার এ জীবনে না পাওয়া বলতে তো তেমন কিছু নেই, কিন্তু গান গাইতে পারি না, এটা মাঝেমধ্যে খানিকটা মন খারাপ করত। ভাবতাম, জীবনসঙ্গীকে দিয়ে পূর্ণ হতো যদি আমার এ অপূর্ণতা!

জানো তো, কত অদ্ভুত উদ্ভট চিন্তাভাবনাই আমার মাঝে খেলে! নদীর পাড়ে বাড়ি বানানোর একটা ইচ্ছা ছোটবেলা থেকে লালন করতাম! মাঝেমধ্যে সেখানটায় যাব আমরা! মৃদুমন্দ বাতাস বইবে, আমাদের গা ছুঁয়ে যাবে, তখন তুমি গান ধরবে, তুমি আর আমি যমুনার জলে পা ভেজাব। সে রাতে চাঁদের আলো আমাদের গায়ে এসে পড়বে, আলো-আঁধারির এক অভূতপূর্ব খেলা! কিছু কল্পনাপ্রসূত চিন্তা, বিশাল বিস্তৃত জলভরা এক মাঠে নাচব তোমায় নিয়ে কোনো এক বৃষ্টিভেজা রাতে। আবার কোনো এক চাঁদনি রাতে হয়তো আমাদের পদ্মপুকুরে জড়াজড়ি করে স্নান করতে মন আনচান করবে।

জানো, আমার গানের মালার ফুল শুকিয়ে যাচ্ছিল লুকানো করুণ অভিমানে। তারপর তুমি আমার জীবনে এলে ধূমকেতুর মতো আর মনের মন্দিরে তৈরি করলে ধ্রুবতারার মতো চিরস্থায়ী আসন, দায়িত্ব নিলে পুরোনো মালা ফেলে দিয়ে নতুন মালা গড়ে দেওয়ার। শুধু গড়ে দিয়েই তুমি ক্ষান্ত নও, গলায় পরানো অবধি তোমার শান্তি নেই।

আমার মতে, তোর মতো কেউ নেই!

খুব দ্রুত বন্দিত্বের দিনগুলো কেটে যাক, আল্লাহর কাছে এই দোয়া করি।

রাণী