আধুনিক আমেরিকার সবচেয়ে অজনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর আমেরিকায় যেকোনো প্রেসিডেন্টের চেয়ে কম অ্যাপ্রুভাল রেটিং পেয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে আধুনিক আমেরিকার কোনো প্রেসিডেন্টই মেয়াদের প্রথম বছরে এতটা অজনপ্রিয় ছিলেন না। বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের পরিচালিত জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্সির প্রথম বছর শেষ হতে চলল। এ অবস্থায় বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম আমেরিকায় বর্তমান প্রেসিডেন্টের গ্রহণযোগ্যতা নিরূপণের লক্ষ্যে জরিপ পরিচালনা করে। এর সব কটিতেই বিগত প্রেসিডেন্টদের তুলনায় অনেক কম রেটিং পেয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
জরিপের তথ্যমতে, দুই-তৃতীয়াংশ আমেরিকান মনে করেন বর্তমান প্রেসিডেন্টের অধীনে দেশ অনেক বেশি বিভক্ত হয়েছে। আর এর সূত্র ধরে এমনকি দল হিসেবে রিপাবলিকান পার্টিরও জনপ্রিয়তা কমেছে। ডিসেম্বরের শেষার্ধে করা বিভিন্ন জনমত জরিপে দলটির জনপ্রিয়তা নেমে ৩২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে বলে জানা গেছে, যা ১৯৭৪ সালের মানের চেয়ে ১০ পয়েন্ট কম।
এপি/নর্ক পরিচালিত জরিপের তথ্যমতে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মাত্র ৩২ শতাংশ নাগরিক। এমনকি জরিপে অংশ নেওয়া রিপাবলিকান সমর্থকদের অর্ধেকই এই বিলিয়নিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যক্রমে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে সিএনএন ও গ্যালাপ পরিচালিত জরিপে এই প্রেসিডেন্সিকে গ্রহণযোগ্য বলে মত দিয়েছেন ৩৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী।
এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইনডিপেনডেন্ট-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর টুইটার উপস্থিতি দিয়েই বছরের পুরো সময় আলোচনায় ছিলেন, যা তাঁকে এমনকি টুইটার প্রেসিডেন্ট অভিধা জুটিয়ে দিয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই তাঁর কোনো না কোনো টুইটার পোস্ট আলোচনায় ছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেই তিনি বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়েছেন। টুইটারে সর্বশেষ তিনি খণ্ডযুদ্ধে মেতেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। এ ছাড়া অভিষেকের পর থেকে বছরজুড়েই ছিল নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের বিষয়টি। ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের একেকজন রথী-মহারথী এ সম্পর্কিত তদন্তে ধরাশায়ী হয়েছেন, যা তাঁর প্রেসিডেন্সিকে ভীষণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এর সঙ্গে ছিল অভিবাসীদের বিরুদ্ধে তাঁর স্বঘোষিত যুদ্ধের বিষয়টিও।
আগের যেকোনো প্রেসিডেন্টের তুলনায় বর্তমান প্রেসিডেন্টের প্রথম বছরে সবচেয়ে কম আইনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পেরেছে কংগ্রেস। স্বাস্থ্য খাতে ওবামাকেয়ার বাতিলের ঘোষণা দিলেও তা শেষ পর্যন্ত পাস করে আনতে পারেননি তিনি। কর পুনর্গঠন নিয়েও হয়েছে বিস্তর জলঘোলা। তরুণ অভিবাসী তথা ড্রিমারদের বিষয়ে সহানুভূতি দেখালেও বাস্তবে তাদের বিশেষ সুবিধাকে রোহিত করেছেন। বিনিময়ে এখন পর্যন্ত কোনো নতুন আইন তিনি দিতে পারেননি। আর এর সঙ্গে শার্লোৎসভিলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেওয়া বক্তব্য তাঁর বিরুদ্ধে বর্ণবাদীদের প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ তোলার সুযোগ করে দিয়েছে।
যদিও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষায় বর্তমান প্রেসিডেন্ট আগের অনেকের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে আমেরিকাকে প্রত্যাহার করেছেন। বাতিল করেছেন ইরানের সঙ্গে হওয়া পরমাণু চুক্তিটিও। এই সবকিছু করলেও শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁর জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারেননি।
গ্যালাপের তথ্যমতে, যেকোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রথম বছরের তুলনায় বর্তমান প্রেসিডেন্টের প্রথম বছর মানুষের কাছে কম গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে। এর আগে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম রেটিং পেয়েছিলেন জেরাল্ড ফোর্ড। ১৯৭৪ সালে ক্ষমতার প্রথম বছরের ১ ডিসেম্বর তাঁর রেটিং ছিল ৪২ শতাংশ। আর ১৯৮১ সালে রোনাল্ড রিগ্যানের প্রথম বছরের রেটিং ছিল ৪৮ শতাংশ। আর সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রথম বছরে ২০০৯ সালের ১ ডিসেম্বর রেটিং ছিল ৫১ শতাংশ। এ হিসাবে ট্রাম্প সত্যিই অনেক পিছিয়ে আছেন।