প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী অপরাহ্!

অপরাহ্‌ ও ট্রাম্প। ফাইল ছবি
অপরাহ্‌ ও ট্রাম্প। ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২০ সালের নভেম্বরে। এখনো প্রায় তিন বছর বাকি, কিন্তু এরই মধ্যে মার্কিন জনগণের মাথাব্যথা শুরু হয়ে গেছে, কে হবেন ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী। এই প্রশ্ন মুখ্য আলোচ্য বিষয় হওয়ার কারণ ৭ জানুয়ারি গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মঞ্চে দেওয়া অপরাহ্‌ উইনফ্রের দৃঢ় বক্তব্য।

এ বছর প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে সেসিল বি ডিমিলে পুরস্কার পেয়েছেন বিখ্যাত অভিনেত্রী ও টিভি হোস্ট অপরাহ্‌ উইনফ্রে। ১৯৫২ সালে পুরস্কারটি চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত আর কোনো নারী এই পুরস্কারে ভূষিত হননি। পুরস্কারটি গ্রহণের পর গোল্ডেন গ্লোবের মঞ্চে উঠে তিনি বেশ সোচ্চার বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘নিজের সত্যটি উপস্থাপনই আমাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। নিজের ব্যক্তিগত অধ্যায়ের সত্য সবার সামনে বিনা সংকোচে উপস্থাপন করা সব নারী আমাকে ভীষণভাবে গর্বিত ও উদ্দীপ্ত করেছেন। আমাদের বলা গল্পগুলোকেই আজ আমরা এই কক্ষে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে উদ্‌যাপন করছি। এ বছর আমরাই মূল গল্প হয়ে উঠেছি। কিন্তু এটি শুধু গল্প নয়, যা এই বিনোদন জগৎকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এটি এমন এক বাস্তবতা, যা প্রতিটি সংস্কৃতি, অঞ্চল, জনগোষ্ঠী, ধর্ম, রাজনীতি ও কর্মস্থলে বিদ্যমান।’

অপরাহ্‌ উইনফ্রে বলেন, ‘আজ এখানে দাঁড়িয়ে আমি সেসব নারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, যাঁরা নিজের পরিবার ও সন্তানের জন্য এত দিন মুখ বুজে সব সহ্য করছিলেন। এখনো করছেন অনেকেই। এসব নারীর পরিচয় হয়তো আমরা কখনোই জানব না। তাঁরা ঘরে আছেন, কারখানায় আছেন, রেস্তোরাঁয় আছেন। তাঁরা আছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, হাসপাতালে, বৈজ্ঞানিক গবেষণার অলিতে গলিতে। রাজনীতি, ব্যবসা, প্রযুক্তির বিভিন্ন খাত—সবখানেই তাঁরা আছেন। তাঁরা আছেন সামরিক বাহিনীতে। আছেন অলিম্পিকের মশালবাহী অ্যাথলেটদের ভিড়ে।’

সন্দেহ নেই অপরাহ্‌ উইনফ্রের এই দৃঢ়চেতা ও উদ্দীপনাদায়ী বক্তব্য উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করেছে। বক্তব্যের পর অনুষ্ঠানস্থলের সবাই দাঁড়িয়ে সম্মানও জানিয়েছেন। একই সঙ্গে পরবর্তী মার্কিন নির্বাচনে তাঁর সম্ভাব্য প্রার্থিতার বিষয়টিও সামনে নিয়ে এসেছে।
এরপর থেকেই বলা শুরু হয়েছে, ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হবেন অপরাহ্‌ উইনফ্রে। কেউ কেউ ইতিমধ্যেই তাঁকে প্রেসিডেন্ট অপরাহ্‌ নামে ডাকা শুরু করেছেন।

এ ব্যাপারে জল্পনাকল্পনার প্রথম সলতেটি উসকে দিয়েছেন গোল্ডেন গ্লোব অনুষ্ঠানের উপস্থাপক সেথ মায়ার্স। তিনি কিছুটা পরিহাসের সঙ্গেই বলেন, ২০১১ সালে হোয়াইট হাউসে এক অনুষ্ঠানে তিনি ঠাট্টা করে বলেছিলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্পূর্ণ অযোগ্য। সে কথা শুনেই নাকি ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেন। ‘তা যদি সত্যি হয়, তো অপরাহ্‌ আপনাকে বলছি, আপনি কোনো দিন প্রেসিডেন্ট হবে না, সে যোগ্যতাই আপনার নেই’, হাসতে হাসতে বলেন মায়ার্স।

রেডিও উপস্থাপক জোজো রাইট বলেন, ‘অপরাহর বক্তব্যে শুধু এটি জিনিসই বাদ পড়েছে। আর তা হলো, “আমি আমার প্রার্থিতা ঘোষণা করছি”।’

একই রকম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দ্য ব্ল্যাক লিস্টের প্রতিষ্ঠাতা ফ্রাঙ্কলিন লিওনার্দো। টুইটার পোস্টে তিনি লেখেন, ‘নির্বাচনে দাঁড়ান কিংবা না দাঁড়ান, ২০২০ সালের আসন্ন নির্বাচনের প্রচারের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় বক্তব্যটি অপরাহ্‌ এরই মধ্যে দিয়ে দিয়েছেন।’

আর অপরাহ্‌ উইনফ্রের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সহকর্মী স্টেডম্যান গ্রাহামের বক্তব্য এই গুঞ্জনের পালে জোর হাওয়াই দিচ্ছে। অপরাহ্‌ বক্তব্য শেষ করার পর মঞ্চের পেছনে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এটা নির্ভর করছে জনগণের ওপর। (তারা চাইলে) তিনি এটা অবশ্যই করবেন।’

পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের পর হলিউড তারকা মেরিল স্ট্রিপ ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ‘আমি চাই অপরাহ্‌ প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুন।’ এরপর একে একে হলিউডের ডজন খানেক তারকা সে কথায় সায় দিয়েছেন। এমনকি একাধিক রিপাবলিকান নির্বাচনী বিশেষজ্ঞ পর্যন্ত অপরাহর সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যাপারে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন।

বলাই বাহুল্য, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে অপরাহর এত মিল যে সিরিয়াস প্রার্থী হিসেবে তাঁকে বাতিল করা কঠিন। তাঁরা দুজনই অসম্ভব ধনী, ট্রাম্পের বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার, আর অপরাহর ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন। তাঁরা দুজনই খ্যাতি অর্জন করেছেন টিভি অনুষ্ঠানের তারকা হিসেবে। মিডিয়াকে কীভাবে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়, সে ব্যাপারে দুজন সিদ্ধহস্ত।

অপরাহর সম্ভাব্য প্রার্থিতার ব্যাপারে সবচেয়ে উৎসাহ দেখিয়েছে কয়েকটি নারীবাদী সংগঠন। এর অন্যতম এমিলি’স লিস্ট নামে সংস্থাটি, যারা বিভিন্ন নির্বাচনে নারী প্রার্থীর সমর্থনে চাঁদা সংগ্রহ করে থাকে। এই সংগঠনের সভাপতি স্টেফানি শ্রিওক বলেছেন, শুধু অপরাহ্‌ নন, যোগ্য যেকোনো নারী প্রার্থীরই উচিত ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা ভাবা। এমনকি ট্রাম্পের কন্যা ইভানকা পর্যন্ত টুইট করে লিখেছেন, অপরাহর ভাষণটি ছিল খুবই শক্তিশালী ও প্রণোদনাময়। তিনি অবশ্য অপরাহর নির্বাচনী সম্ভাবনার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

অপরাহ্‌ নিজে অবশ্য নির্বাচনী দৌড়ের কথা অস্বীকার করেছেন। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তি বলেছেন, এই ভাবনাটা তাঁর মাথায় রয়েছে। তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু টেডম্যান গ্রাহাম কিছুটা কূটনীতিকের ভাষায় বলেন, দেশের মানুষ যদি চায়, তাহলে অপরাহ্‌ অবশ্যই নির্বাচনে দাঁড়াবেন।

এ ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভাবনা কী? অপরাহর প্রার্থিতার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সোমবার হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র বলেন, এ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিন্দুমাত্র উদ্বেগ নেই।