কঠোর অবস্থানে রিপাবলিকানরা, বাতিল হতে পারে ডিভি লটারি!

আমেরিকার অভিবাসন নীতি নিয়ে সংকট কাটছেই না। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি এ বিষয়ে দ্বিদলীয় আলোচনার ওপর গুরুত্বারোপ করলেও প্রতিনিধি পরিষদের প্রভাবশালী রিপাবলিকান নেতারা ১০ জানুয়ারি কঠোর অভিবাসন প্রস্তাব নিয়েই সামনে হাজির হয়েছেন। এই প্রস্তাবের কারণে কংগ্রেসের এ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেকটা কঠিন হয়ে যাবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের বিচার ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান এই প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। এতে অনিবন্ধিত অভিবাসীদের বিরুদ্ধে আরও জোরদার অভিযান পরিচালনাসহ বৈধ অভিবাসীর সংখ্যা কমানোর কথাও বলা হয়েছে। অথচ ঠিক এক দিন আগেই ডোনাল্ড ট্রাম্প সভা করে দ্বিদলীয় আলোচনার ভিত্তিতে বিষয়টি মীমাংসার ওপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন। কিন্তু প্রতিনিধি পরিষদে উত্থাপিত প্রস্তাবটি আলোচনার ক্ষেত্রে বিদ্যমান অনিশ্চয়তাকেই সামনে নিয়ে এসেছে। অথচ দ্বিদলীয় আলোচনার ভিত্তিতে অভিবাসন বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য কংগ্রেসের সামনে খুবই অল্প সময় রয়েছে। ১৯ জানুয়ারির মধ্যেই এ সম্পর্কিত সিদ্ধান্তে উপনীত হতে না পারলে সরকারি ব্যয়ের তহবিল রুদ্ধ হয়ে যাবে। মুখোমুখি হতে হবে ‘গভর্নমেন্ট শাটডাউনের’।
৯ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত দ্বিদলীয় সভায় উপস্থিত ছিলেন আইডাহর রিপাবলিকান প্রতিনিধি রাউল আর ল্যাব্রাডোর। ওই সভা নিয়ে আশাবাদী ল্যাব্রাডোর নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ‘এটিই একমাত্র বিষয়, যা সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে। আর এর মাধ্যমেই আমরা অধিবেশনে সংখ্যাগরিষ্ঠ অবস্থানে পৌঁছাতে পারব।’
ট্রাম্পের আহ্বানে হোয়াইট হাউসের এই সভাটি মূলত অনিবন্ধিত তরুণ অভিবাসীদের ভাগ্য নির্ধারণের লক্ষ্যেই আয়োজন করা হয়েছিল। ওই সভায় প্রেসিডেন্টসহ উপস্থিত আইনপ্রণেতারা অভিবাসন বিষয়ে দ্বিদলীয় আলোচনার জন্য চারটি ক্ষেত্রকে নির্দিষ্ট করেন। এগুলো হচ্ছে, ড্রিমার নামে খ্যাত অনিবন্ধিত তরুণ অভিবাসীদের সুরক্ষা, পারিবারিক অভিবাসন বা চেইন অভিবাসন সীমিতকরণ, ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) লটারি বাতিল ও সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার।
কিন্তু এই একই বিষয়ে প্রতিনিধি পরিষদে দুই রিপাবলিকান নেতা যে প্রস্তাবটি উত্থাপন হয়েছে তা আরও বড় পরিসরের। প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন প্রতিনিধি পরিষদে বিচার বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান ও ভার্জিনিয়ার প্রতিনিধি রবার্ট ডব্লিউ গুডলেট ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সম্পর্কিত কমিটির চেয়ারম্যান ও টেক্সাসের প্রতিনিধি মাইকেল ম্যাককোল। এতে চাকরিদাতাদের ই-ভেরিফাই নামের একটি বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। কোনো কর্মী নিয়োগের আগেই ইন্টারনেটভিত্তিক এই বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের বৈধতা পরীক্ষার প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে অভিবাসীদের জন্য অভয়াশ্রম খ্যাত শহরগুলোর জন্য বিশেষ ফেডারেল বরাদ্দ বাতিলের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রস্তাবে সীমান্তে মা-বাবার সঙ্গে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে কোনো শিশু ধরা পড়লে তাকেও আটক এবং বিতাড়নের পর ফিরে এসে কোনো অপরাধে জড়ালে কঠোর শাস্তির প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রতিনিধি পরিষদের দুই নেতার প্রস্তাবে ট্রাম্পের চাওয়া অনুযায়ী প্রাধান্য পেয়েছে ডিভি লটারি প্রকল্প বাতিলের বিষয়টি। একই সঙ্গে সন্তান ও সঙ্গী ছাড়া সব ধরনের পারিবারিক ভিসা বন্ধের প্রস্তাবও করেছেন তাঁরা। এ ছাড়া খোদ রিপাবলিকান দলেই ড্রিমারদের প্রতি সহানুভূতি থাকলেও এই দুই নেতা তাদের জন্য নাগরিকত্বের বদলে তিন বছরের কাজের অনুমোদন (ওয়ার্ক পারমিট) দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই প্রস্তাবের মাধ্যমে অভিবাসন সম্পর্কিত দ্বিদলীয় সমঝোতার বিষয়টি বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মুখে পড়ল। এদিকে এই বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থান সদা পরিবর্তনশীল। আর দুই দলেই এ নিয়ে রয়েছে বিভাজন। বিষয়টি নিয়ে জোরদার লড়াইয়ে নামার পরিকল্পনা করছেন কিছু ডেমোক্র্যাট নেতা। আবার একই দলের কিছু নেতা ভুগছেন রাজনৈতিক অস্থিরতার শঙ্কায়। একই অবস্থা রিপাবলিকান দলেও। দলটির কিছু নেতা যখন সমঝোতায় আগ্রহী, তখন আরেকটি বড় অংশ কঠোর অভিবাসন নীতি গ্রহণের সিদ্ধান্তে অনড়।
অভিবাসন নীতি সম্পর্কিত প্রচার সংগঠন আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের পরিচালক লরেলা প্রায়েলি নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ‘প্রতিনিধি পরিষদে উত্থাপিত প্রস্তাবটিতে বেশ কিছু কঠোর অবস্থান ঘোষিত হয়েছে, যা দ্বিদলীয় সমঝোতাকে এগিয়ে নেওয়ার পরিবর্তে থমকে দেওয়ার লক্ষ্যেই আনা হয়েছে।’
প্রতিনিধি পরিষদে উত্থাপিত প্রস্তাবটি শেষ পর্যন্ত ভোটাভুটিতে যাবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়। বিশেষত ৯ জানুয়ারি ট্রাম্প আহুত সভায় অভিবাসন ইস্যুতে দ্বিদলীয় আলোচনার জন্য চারটি সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্র চিহ্নিত হওয়ায় এখনো সম্ভাবনা রয়ে গেছে। আর শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবটি ভোটে উঠলেও সিনেটে এর কোনো ভবিষ্যৎ নেই বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ সিনেটে অভিবাসন বিষয়ে কোনো আইন পাস হতে অন্তত ৬০টি ভোটের প্রয়োজন হবে, যা শুধু রিপাবলিকান ভোটে সম্ভব নয়।
এদিকে অভিবাসন নিয়ে সিদ্ধান্তের বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠেছে ৯ জানুয়ারি ড্রিমারদের জন্য ডিফারড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভালস (ডিএসিএ) প্রকল্প চালু রাখার বিষয়ে আদালতের দেওয়া আদেশের কারণে। ওই দিন সান ফ্রান্সিসকোর ফেডারেল বিচারক সুস্পষ্টভাবে আদেশ দিয়েছেন যে, ‘পুরো দেশে ডিএসিএ বহাল রাখতে হবে প্রশাসনকে।’ ট্রাম্পও দেরি না করে একহাত নিয়েছেন বিচার বিভাগের ওপর। আগের মতোই তিনি আদালতকে ‘ভঙ্গুর ও অন্যায্য’ বলে আখ্যা দিয়েছেন নিজের টুইটার পোস্টে। এই পাল্টা বক্তব্যে অবশ্য হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয় বিভ্রান্ত হচ্ছে না। তারা জানিয়েছে, আদালতের আদেশই তারা মেনে চলবে। তবে একই সঙ্গে বিচার বিভাগ এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারে বলেও তাঁরা জানান।
তবে এই আদেশের কারণে আরেকটি সংকটের সৃষ্টি হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অ্যারিজোনার রিপাবলিকান সিনেটর জেফ ফ্লেক। নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ‘এই আদেশের কারণে অনেকে ভাবতে পারেন যে, হাতে এখন অনেক সময়। ফলে পুরো প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হতে পারে।’
এদিকে অভিবাসন নিয়ে সিদ্ধান্ত দ্রুত গ্রহণের জন্য নিয়মিত চাপ দিয়ে যাচ্ছেন ডেমোক্র্যাট নেতারা। নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাট সিনেটর চাক শুমার বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই যে, এই আদেশ কোনোভাবেই এ বিষয়ক দ্রুত সিদ্ধান্তের প্রয়োজনীয়তাকে খাটো করছে না। বিলম্ব তারাই চায়, যারা আসলে কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ারই পক্ষে।’
চাক শুমারের ইঙ্গিতটি সুস্পষ্ট। ডেমোক্র্যাটরা ১৯ জানুয়ারির মধ্যেই অভিবাসন বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চায়। আর ১৯ জানুয়ারিতেই শেষ হচ্ছে সরকারি ব্যয় তহবিলের মেয়াদ। ফলে এই সময়ের মধ্যে কোনো সিদ্ধান্ত না হলে পরবর্তী তহবিল আটকে দিতে পারেন ডেমোক্র্যাটরা। আর সে ক্ষেত্রে দুই সপ্তাহের মধ্যেই গভর্নমেন্ট শাটডাউনের মুখোমুখি হতে হবে প্রশাসনকে।