হোয়াইট হাউসে সংকট আরও ঘনীভূত হবে

রেক্স টিলারসন, ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
রেক্স টিলারসন, ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চার লাইনের এক টুইটের মাধ্যমে তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। পৃথিবীতে সম্ভবত এই প্রথম টুইটারের মাধ্যমে কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজের চাকরি হারানোর খবর পেলেন। চিফ অব স্টাফ জন কেলি তাঁকে বড় ধরনের একটি খবর আসছে বলে সাবধান করে দিয়েছিলেন বটে, কিন্তু ট্রাম্প নিজে সৌজন্যবশত সে কথা টিলারসনকে জানানোর প্রয়োজন দেখেননি।

পরে সাংবাদিকদের ট্রাম্প জানিয়েছেন, টিলারসনের সঙ্গে তাঁর বনিবনা হচ্ছিল না। তিনি বিশেষভাবে ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির কথা উল্লেখ করেন। ট্রাম্প এই বহুপক্ষীয় চুক্তিকে বাতিল করতে চান, টিলারসন চুক্তিটি অক্ষত রেখে তার সংস্কার চেয়েছিলেন। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সমঝোতার প্রশ্নেও তাঁদের স্পষ্ট মতভেদ রয়েছে। এক সপ্তাহ আগেও টিলারসন বলেছিলেন, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সরাসরি আলাপ-আলোচনার কোনো সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। নিজের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখেই ট্রাম্প উত্তর কোরীয় নেতার সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের কথা ঘোষণা করে বসেন। এ ছাড়া টিলারসন লোহা ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর আমদানি শুল্ক আরোপের বিরোধিতা করেছিলেন, ট্রাম্প তাঁর কথায় কান দেওয়ার প্রয়োজন দেখেননি।

টিলারসন হয় পদত্যাগ করছেন অথবা পদচ্যুত হচ্ছেন—এই নিয়ে গুঞ্জন অনেক দিন ধরেই চলছে। এক্সন মোবিল কোম্পানির এই সাবেক প্রধান নির্বাহী ট্রাম্পের নেতৃত্বে কখনোই খুব স্বস্তি বোধ করেননি। গত বছর ভার্জিনিয়ায় শ্বেত শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের দাঙ্গার পর ট্রাম্প তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে মন্তব্য করলে টিলারসন পদত্যাগের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। ট্রাম্প মার্কিন পারমাণবিক ভান্ডার দশ গুণ বাড়াতে চান এই মন্তব্য করার পর টিলারসন প্রকাশ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ‘গর্দভ’ বলে ভর্ৎসনা করেছিলেন। জানা গেছে, ট্রাম্প তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই কথা খুব ভালোভাবে গ্রহণ করেননি। তখন থেকেই তিনি সুযোগে ছিলেন কখন-কীভাবে তাঁকে ছেঁটে ফেলা যায়।

সেই সুযোগটি টিলারসন নিজেই এগিয়ে দেন ট্রাম্পকে। রাশিয়ার ব্যাপারে তাঁর অবস্থান ট্রাম্পের তুলনায় অনেক কঠোর ছিল। এক সপ্তাহ আগে যুক্তরাজ্যে সাবেক রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল ও তাঁর মেয়ে ইউলিয়ার ওপর রাসায়নিক মিশ্রণ প্রয়োগের (নার্ভ এজেন্ট) ঘটনায় রাশিয়ার হাত আছে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এই অভিযোগ করার পর টিলারসন কঠোর ভাষায় মস্কোর নিন্দা করেন। হোয়াইট হাউস থেকে এই নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য না করলেও টিলারসন একে ‘জঘন্য কাজ’ হিসেবে বর্ণনা করেন। গত সোমবার আফ্রিকায় সরকারি সফর শেষে ফেরার পর এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে রাশিয়ার ব্যবহার শুধু গর্হিতই নয়, অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন। যারা এই হামলার জন্য দায়ী, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।’ বিবৃতির ১২ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই ট্রাম্প তাঁকে বাদ দিলেন।

 টিলারসনকে রাশিয়া বিষয়ে কঠোর মন্তব্যের জন্য পদচ্যুত করা হয়েছে, এ কথা অস্বীকার করেছে হোয়াইট হাউস। তাতে অবশ্য সমালোচকদের মুখ বন্ধ করা যায়নি। কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাট নেতা ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, রাশিয়ার ভূমিকার প্রতিবাদ করায় টিলারসনের পদচ্যুতি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। ডেমোক্র্যাট সিনেটর ট্যামি ডাকওয়ার্থ বলেছেন, যুক্তরাজ্যে সাবেক রুশ গুপ্তচরের ওপর হামলার ঘটনায় হোয়াইট হাউস কোনো নিন্দা জানায়নি। টিলারসন কাজটি করায় চাকরি হারাতে হলো।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সদস্যরা অবশ্য টিলারসনের প্রস্থানে দুঃখিত নন। টিলারসনের পদচ্যুতির খবর প্রকাশ হওয়ামাত্রই একাধিক কর্মকর্তা উল্লাস প্রকাশ করেন। ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর নানাভাবে চেষ্টা করেছেন দপ্তরটির ক্ষমতা খর্ব করতে। এ ব্যাপারে কোনো প্রতিবাদই করেননি টিলারসন। একজন কর্মকর্তা তো সাংবাদিকদের কাছে বলেই বসেন, ‘টিলারসন গেছে, বাঁচা গেছে।’

পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের পদচ্যুতির ঘটনায় হোয়াইট হাউসে ইতিমধ্যে যে সংকটের সৃষ্টি হয়েছে, তা আরও ঘনীভূত হবে। এ মাসেই হয়তো জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল ম্যাকমাস্টার পদত্যাগ করতে পারেন। চিফ অব স্টাফ জন কেলিও যাব যাব করছেন। মঙ্গলবার জানা গেল, ট্রাম্প সাবেক সেনাসদস্যদের কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রধান ডেভিড শুলকিনকে সরিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন।