যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচনে কে এগিয়ে?

যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বুধবার এক টুইটে দাবি করেছেন, নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে যে ঢেউ আসছে তা নীল নয়; লাল। তিনি যদি মঙ্গলবার আটটি অঙ্গরাজ্যে অনুষ্ঠিত বাছাইপর্বের নির্বাচনের ফলাফল দেখে এ মন্তব্য করে থাকেন; তাহলে সেটি হয় অতিরিক্ত আশাবাদ, নয়তো সরাসরি কষ্টকল্পনা।

নির্বাচনের আগে ডেমোক্র্যাটদের জন্য সবচেয়ে ভয় ছিল ক্যালিফোর্নিয়া নিয়ে। এই রাজ্যের বাছাইপর্বের নির্বাচনে যে দুজন প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভোট পান, তাঁরা একই দলের সদস্য হলেও তাঁরাই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পান।

ক্যালিফোর্নিয়া ইতিমধ্যেই প্রবল রকম ট্রাম্পবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেছে। নীল হিসেবে পরিচিত ডেমোক্রেটিক দল আশা করছে, এই রাজ্যের সাতটি রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত আসন তারা নিজেদের দখলে আনতে পারবে। এমন আশা করার কারণ, এই সাত আসনের নির্বাচনী এলাকায় ২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন জিতেছিলেন। কিন্তু এবার বাছাইপর্বে এত অধিকসংখ্যক আগ্রহী প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন যে আশঙ্কা ছিল, ভোট ভাগাভাগির ফলে কোনো ডেমোক্র্যাট প্রার্থীই এই সাত আসনে প্রথম বা দ্বিতীয় স্থান দখল করতে পারবেন না। ফলে তাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতার যোগ্যতাই অর্জন করবেন না। তবে বাস্তবে তা ঘটেনি।

এখনো চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষিত না হলেও ডেমোক্র্যাটরা নিশ্চিত যে তাঁদের মনোনীত প্রার্থীরাই প্রতিদ্বন্দ্বিতার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। ডেমোক্রেটিক দলের একজন নেতা মন্তব্য করেছেন, ‘আমরা বড় ধরনের গুলির হাত থেকে বেঁচে গেছি।’ শুধু এই ফলাফলের ভিত্তিতে ওয়াশিংটন পোস্ট মন্তব্য করেছে, ডেমোক্র্যাটদের নভেম্বরের নির্বাচনে কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা এখন ৫০ শতাংশের বেশি।

ক্যালিফোর্নিয়া থেকে অবশ্য লাল হিসেবে পরিচিত রিপাবলিকানরাও সুখবর পেয়েছে। নভেম্বরে কংগ্রেসের পাশাপাশি এই রাজ্যে গভর্নরের পদেও নির্বাচন হবে। এই পদে তাঁদের জেতার কোনো সম্ভাবনাই নেই। কিন্তু রিপাবলিকানরা এই ভেবে ভীত ছিল যে বাছাইপর্বে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর তালিকাই তারা ছুঁতে পারবে না। গভর্নর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলে রিপাবলিকান ভোটারদের অনেকেই হয়তো ঘরে বসে থাকবে। সেই ভয় কেটে গেছে, তাদের কাঙ্ক্ষিত প্রার্থী জন কক্স অনেক ভোটে পিছিয়ে থাকলেও দ্বিতীয় স্থান দখল করতে সক্ষম হয়েছেন।

ডেমোক্র্যাটদের জন্য নিউজার্সি থেকেও সুখবর এসেছে। নীল রাজ্য হিসেবে পরিচিত হলেও এখানে গ্রামাঞ্চলের এক বড় অংশে ট্রাম্পের প্রবল জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে রাজ্যজুড়ে এখন ট্রাম্পবিরোধী হাওয়া বইছে। ডেমোক্র্যাটরা আশা করছে, নভেম্বরে তারা এই রাজ্যের চারটি রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসের আসন দখলে সক্ষম হবে। মঙ্গলবারের নির্বাচনে তারা এমন চারজন প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করেছে, যাঁরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয়।

আলাবামা বা আইওয়ার মতো রক্ষণশীল রাজ্যে রিপাবলিকান প্রার্থীরা যথারীতি তাঁদের প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে সক্ষম হলেও এখানেও ডেমোক্র্যাটরা প্রতিযোগিতাপূর্ণ অবস্থানে রয়েছেন। যেমন আইওয়াতে নারী ব্যবসায়ী সিন্ডি এক্সনে বর্তমান কংগ্রেসম্যানের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। একই রাজ্যে মাত্র ২৮ বছর বয়সী রাজনৈতিক কর্মী ফিঙ্কেলবাওয়ার জয়লাভ করেছেন। অনেকেই বলছেন, এ বছরটা হবে নারী ভোটারদের বছর। অনেকের ধারণা, ট্রাম্পের প্রতি নারীদের বিরাগের কারণে দেশজুড়ে যে বৈরী হাওয়া উঠেছে, তার প্রভাবে এবার রেকর্ডসংখ্যক নারী প্রার্থী জিতে আসবেন।

কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে হলে ডেমোক্র্যাটদের নিজেদের চলতি সব আসন রক্ষার পরও আরও ২৩টি অতিরিক্ত আসন দখল করতে হবে। বিখ্যাত নির্বাচনী বিশ্লেষক চার্লি কুক মনে করেন, চলতি ধারা অব্যাহত থাকলে ডেমোক্র্যাটরা সম্ভবত ২৫-৩০টি অতিরিক্ত আসন দখলে সক্ষম হবেন। তাঁর আশাবাদের কারণ, মধ্যবর্তী নির্বাচনের সময় ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের জনসমর্থন ৫০ শতাংশের কম হলে বিরোধী পক্ষের বড় ধরনের বিজয় লাভের সুযোগ ঘটে। সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কিছুটা বাড়লেও তা গড়ে ৪৬ শতাংশের বেশি নয়।