ট্রাম্পের কাছে কী কী চাইলেন আবে?

ফ্লোরিডায় সংবাদ সম্মেলনের সময় করমর্দন করে শিনজো আবে (বাঁয়ে) ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্র, ৮ জুন। ছবি: এএফপি
ফ্লোরিডায় সংবাদ সম্মেলনের সময় করমর্দন করে শিনজো আবে (বাঁয়ে) ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্র, ৮ জুন। ছবি: এএফপি

জি-৭ সম্মেলনের মাত্র একদিন আগে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে গত বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে। এক রকম তড়িঘড়ি করেই এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠক শেষে ওই দিন বিকেলে দুজন যৌথ সংবাদ সম্মেলনও করেন।

ট্রাম্প-আবে আবার শুক্রবার কানাডার কুইবেকে জি-৭ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। সেখানে দুজনের দেখা তো হতোই, তবুও ক্ষণিক সময়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে শুধুমাত্র ১২ জুন সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠেয় ট্রাম্প-কিম ঐতিহাসিক বৈঠককে মাথায় রেখে। এই বৈঠককে ঘুরে জাপানের বেশ কিছু উদ্বেগ রয়েছে। তারই নিরসনে এই ত্বরিত বৈঠক।

বিশ্লেষকদের ধারণা, ১২ জুনের বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি চুক্তি সই হতে পারে। সেই চুক্তিতে জাপানের স্বার্থ যাতে বিঘ্নিত না হয়, ট্রাম্পের কাছে সেই প্রতিশ্রুতি আদায় করতেই আবের তড়িঘড়ি করে হোয়াইট হাউসে আসা। জাপান মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে চুক্তিতে উত্তর আমেরিকার নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দেবেন। কিন্তু সমঝোতার নামে জাপান বা দক্ষিণ কোরিয়ার নিরাপত্তায় ছাড় দিয়ে বসতে পারেন।

চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়েও জাপানের কিছু উদ্বেগ ট্রাম্পকে জানিয়েছেন আবে। উত্তর কোরিয়া নিয়ে জাপানের কয়েক দশকের উদ্বেগ তো সবার জানা। উদ্বেগ শুধু উত্তর কোরিয়া দীর্ঘ পাল্লার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়েই নয়। উদ্বেগ আরও আছে। কোরীয় উপদ্বীপে ক্রমবর্ধমান চীনা প্রভাবের মুখে সমঝোতার প্রশ্নে ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে মার্কিন সেনা কমানোর ঘোষণা দিতে পারেন—সম্ভাবনা রয়েছে এরও। এতেও জাপানের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে বলে মনে করছে দেশটির নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা।
২০১৮ সালে উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ও প্রতিনিধিরা দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র সবার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কিন্তু বৈঠক হয়নি প্রতিবেশী জাপানের সঙ্গেই। জাপান সে কথা মনে করে উদ্বেগে রয়েছে। সবার সঙ্গে সমঝোতা হওয়ার পর উত্তর কোরিয়ার বেঁচে যাওয়া অবশিষ্ট আক্রোশ তাদের জন্যই শুধু বাকি থাকবে কিনা, আবের কপালে চিন্তার ভাঁজ সে কারণেই।
গত শতকের ৭০ ও ৮০র দশকে জাপানি অনেক নাগরিক উত্তর কোরিয়ায় অপহৃত হয়ে এখনো মুক্তি পাননি। তাদের মুক্তির জন্য জাপান এর আগে সোচ্চার হয়েও কাজ হয়নি। তাদের মুক্তি দেওয়ার প্রসঙ্গটি যাতে ট্রাম্প-কিম বৈঠকে আসে সেটি মনে করিয়ে দিয়েছেন আবে। এপ্রিলে ফ্লোরিডায় ট্রাম্প-আবের গত বৈঠকে ট্রাম্প আবেকে কথা দিয়েছিলেন, পিয়ংইয়ং এর সঙ্গে কখনো বৈঠক হলে অপহৃত জাপানি নাগরিকদের বিষয়টি তিনি অবশ্যই তুলবেন।
পরিসংখ্যান বলছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর শিনজো আবে এ পর্যন্ত ৩০ বার কথা বলেছেন তাঁর সঙ্গে। এর মধ্যে সরাসরি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকই হয়েছে আটবার। ওয়াশিংটন তাই ভালো করেই জানে, পিয়ংইয়ং বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আবের চাওয়াগুলো কী কী। এখন ১২ জুন ট্রাম্প-কিম বৈঠকের পরই জানা যাবে, ব্যবসায়ী থেকে প্রেসিডেন্ট বনা ট্রাম্পের কটি আবদার মনে থাকে। ব্যবসায়ীরা ভুলোমনা হন না জানা কথা। কিন্তু ব্যবসায়িক স্বার্থে অনেক কিছুই ভুলে যেতে হয় তাঁদের। বাণিজ্য কিংবা কূটনীতি—দুই-ই যে সমঝোতার খেলা!