এডমন্টনে ঈদ

প্যালেস নামের মিলনায়তনটা বেশ বড়ই। কানাডার এডমন্টনে। সাতটায় জামাত, আটটায়, নয়টায়। ১৫ জুন ২০১৮, শুক্রবার আমরা নয়টার জামাত ধরব বলে বেরোলাম। উঠেছি ডা. শামসুদ্দোহা সেলিমের বাসায়। তাঁর দুই ছেলে বর্ণ, দিব্য, আর আমি। সেলিম ভাই গাড়ি চালাচ্ছেন। আমরা তিনটা জায়নামাজ নিয়ে ঈদের নামাজের জন্য বেরিয়েছি। নিনি আপা রাতেই গুড়ের পায়েস, জর্দা ইত্যাদি বানিয়ে রেখেছেন। যদিও আমরা আগের রাতে এখানকার সারেং রেস্তোরাঁয় চানরাত পালন করেছি। মেহেদি উৎসব করেছেন মেয়েরা। খানিকটা কথাবার্তা, খানিকটা গানবাজনাও হলো ইফতারির পর। এখানে ইফতারির সময় আসে রাত দশটার পর। অনুষ্ঠান শেষ করতে করতে রাত একটা। এর মধ্যে মেয়েরা যে কী করে এত কিছু রান্না করে ফেললেন, বিস্ময়করই বটে।
প্যালেসের কাছাকাছি গিয়ে মনে হলো, পার্কিং পাওয়া যাবে না। দুজন লম্বা চওড়া সাদা মানুষ স্বেচ্ছাসেবা দিচ্ছেন, কোথায় পার্ক করতে হবে দেখিয়ে দিলেন।
আমরা মিলনায়তনের ভেতরে ঢুকলাম। মোটামুটি তখন হল ভরে গেছে। মেয়েরাও এখানে আসেন নামাজ পড়তে। তাঁরা বসেছেন পেছনের দিকে।
জায়নামাজ বিছিয়ে বসে পড়লাম। নামাজের সময় হতেই আমার মনে হলো, একজন অন্তত বাংলায় এক লাইন বললেন, এখন জামাত শুরু হবে। তারপর ইংরেজিতে ঘোষণা। এই জামায়াতে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রঙের মানুষ এসেছেন। কেউ বা কালো কেউ বা সাদা, কেউ বা বাদামি। তাঁদের পোশাকও বিচিত্র। আমার খুব ভালো লাগে এ ধরনের মিলনের ব্যাপারটা।
গত ঈদে নামাজ পড়েছি আমেরিকার বোস্টনে। গতবারও খেয়াল করেছি, এবারও খেয়াল করলাম, কোনো কোনো রীতি আমাদের দেশের তুলনায় এখানে একটুখানি আলাদা। এই নিয়ে কেউ কোনো কথা বলে না। নামাজ সেরে কোলাকুলি করলাম। অনেক দেশি ভাইবোনের সঙ্গে দেখা হলো। পরিচিত অপরিচিত নারী-পুরুষকে ঈদ মোবারক জানালাম। মনে মনে আবৃত্তি করছি, পথে পথে আজ গাহিব বন্ধু ঈদ মোবারক আসসালাম। এর মানে হলো ঈদের শুভেচ্ছা আর শান্তি। এই কথাগুলো সুন্দর। শুভেচ্ছা অভিবাদন জানানো আর শান্তি কামনা করা।
দুজন কিশোরী আমাকে চিনতে পেরে এগিয়ে এল। তাদের মা এলেন। তারা আমার সঙ্গে ছবি তুললেন। আমরা গাড়িতে উঠেছি। তারপর তাদের বাবা ছুটে এলেন। চলুন, আমাদের বাসায় যাবেন। জাস্ট পাঁচ মিনিটের জন্য। প্রবাসে বাঙালি মাত্রই স্বজন। এই আতিথেয়তা আমার খুব ভালো লাগে।
আজকে আর নয়। আবার নিশ্চয়ই দেখা হবে। ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলাম।
আমার বুয়েটের দুই বন্ধু এম এল গনি আর আবদুল হালিম গাড়ি করে এসে বাড়ি নিয়ে গেল দুপুরের মধ্যে। আমার হোস্টের বাড়িতেও অতিথিরা আসতে লাগলেন। ঈদটা ভালোই কাটল। ভালো খাওয়া, পাঞ্জাবি পরে সবার সঙ্গে মোলাকাত করা। কানাডার ভাবিরা ভালো মিষ্টি বানাতে পারেন। প্রবাসীরা সবাই নাকি প্রথমে ঘোষ হয়ে যায়, একজন রসিকতা করে বললেন।
দেশে মেসেঞ্জারে ভিডিও কল করলাম। আম্মার সঙ্গে কথা হলো। মনে হলো, আম্মার শরীরটা বেশি ভালো না। প্রবাসে ঈদ করার এইটা একটা অসুবিধা। স্বজনদের কাছে পাওয়া যায় না।
তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়তে হবে। কারণ পরদিন আর্জেন্টিনার খেলা। শুক্রবার ঈদ কাটিয়ে শনিবার সকাল সকাল উঠতে হলো। সকাল সাতটায় খেলা শুরু হলো।