'কুইন্সের রাজা' সিংহাসনচ্যুত

জোসেফ ক্রাউলি ও আলেকজান্দ্রেরিয়া ওকাসিও কর্টেজ
জোসেফ ক্রাউলি ও আলেকজান্দ্রেরিয়া ওকাসিও কর্টেজ

মার্কিন কংগ্রেস নির্বাচনে নিউইয়র্কের প্রাইমারি প্রতিযোগিতায় ২৮ বছর বয়সী একজন প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে পরাজিত হয়েছেন ডাকসাইটে কংগ্রেসম্যান জোসেফ ক্রাউলি। জয়ী হয়েছেন বার্নি স্যান্ডার্সের রাজনীতির সমর্থক আলেকজান্দ্রেরিয়া ওকাসিও কর্টেজ নামের এক লাতিনো নারী। এই পরাজয়ের অর্থ হলো, নিউইয়র্কের কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট ১৪ (ব্রঙ্কস-জ্যাকসন হাইটস) থেকে নিশ্চিতভাবে পরবর্তী কংগ্রেসম্যান নির্বাচিত হচ্ছেন ওকাসিয়া। সেই সঙ্গে গত ১১টি টার্মে কংগ্রেসম্যান থাকা হেভিওয়েট জোসেফ ক্রাউলির আপাতত রাজনৈতিক পরাজয় ঘটল।
জোসেফ ক্রাউলি বাংলাদেশিদের কাছে একটি পরিচিত নাম। কেননা, ক্রাউলি কংগ্রেসে বাংলাদেশ ককাসের নেতৃত্ব দিতেন একসময়। সে সময় একজন প্রভাবশালী কংগ্রেসম্যান হিসেবে ক্রাউলি বাংলাদেশ সফরে গেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে তাঁর আছে বিস্তর অভিজ্ঞতা। সেই সুবাদে নিউইয়র্কের বাংলাদেশি ডেমোক্র্যাট রাজনীতিবিদদের কাছের মানুষ ছিলেন তিনি। তাঁর নির্বাচনী কার্যক্রমে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি মোটা অঙ্কের অর্থ সহায়তা দিয়েও থাকেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে তরুণ প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটাররা ঝুঁকেছিলেন ওকাসিওর দিকে।

ওকাসিও একটু একটু করে প্রতিটি জনসভায় গিয়েছেন। নিজেকে উপস্থাপন করে বলেছেন, ক্রাউলি একজন প্রতিষ্ঠিত ডেমোক্র্যাট রাজনীতিবিদ হিসেবে নিউইয়র্কের খেটে খাওয়া মানুষের জন্যে কিছুই করেননি। তিনি ওয়ালস্ট্রিটের সুবিধাভোগী রাজনীতিক। তিনি ওই সব মানুষের কাছ থেকে নির্বাচনী ফান্ড নেন, যাঁরা ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও নির্বাচনে জয়ী করার জন্য ফান্ড দিয়েছিলেন। তাঁর এসব কথাবার্তা তরুণ ভোটারদের অনেকেই গ্রহণ করেছেন। তারই ফলাফল এই বহুল আলোচিত জয়।

মিজান চৌধুরী
মিজান চৌধুরী

জয়ের পর থেকেই ওকাসিয়া মূলধারার গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন। নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে শুরু করে স্থানীয় সব গণমাধ্যম একটিই শিরোনাম করেছে ‘ক্রাউলির আশ্চর্য পরাজয়’। ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, রাজনীতিতে একেবারে নতুন ওকাসিয়া ধরাশায়ী করলেন এমন একজন প্রতিষ্ঠিত ডেমোক্র্যাটকে, যাঁকে কিনা বিবেচনা করা হচ্ছিল পরবর্তী ডেমোক্র্যাট সংখ্যাগরিষ্ঠ হাউসের স্পিকার হিসেবে!
কেন এই পরাজয়, সেটি অনুসন্ধান করতে গিয়ে মূলত দুটি বিষয় বেরিয়ে এসেছে। প্রথমত ক্রাউলির ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে অনীহা। দুটি জনবহুল ব্যুরো ব্রঙ্কসের কুইন্সের ডিস্ট্রিক্ট ১৪-তে নির্বাচন হলেও সব মিলিয়ে ২৩ হাজার মানুষও নির্বাচন কেন্দ্রে যাননি। যাঁরা গিয়েছেন তাঁদের অধিকাংশই রাজনীতির পরিবর্তন সূচনা করতেই নিজ গরজে ভোটকেন্দ্রে গেছেন। তাঁরা সবাই বার্নি স্যান্ডার্সের সমর্থক এবং তাঁর রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা ‘ডেমোক্র্যাট রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন’ স্লোগানের কর্মী। সেই স্লোগান বাস্তবায়ন করতে নতুন কংগ্রেস নির্বাচিত করার একটি সুপ্ত আন্দোলন ‘ব্র্যান্ড নিউ কংগ্রেস’-এর অন্যতম জয়ী মুখ এই ওকাসিয়া।
দ্বিতীয় বড় কারণ হলো, ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী কর্মকাণ্ডে প্রতিবাদহীন একজন মানুষ হিসেবে ক্রাউলির ভূমিকা। নিউইয়র্ক থেকেই কম করে ২ হাজার ৩০০ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে, যাঁদের বেশির ভাগ লাতিনো। বাংলাদেশিও আছেন। এসব লাতিনো আর অভিবাসী পরিবারের সদস্যরা তাঁদের প্রিয়জনের দেশে ফেরত পাঠানো ঠেকাতে ক্রাউলির অফিসের দ্বারস্থ হয়েছেন অনেকবার। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, ভুক্তভোগীর পক্ষে একটি চিঠি লিখতেও অনেক ক্ষেত্রে অপারগতা প্রকাশ করেন ক্রাউলি।
এসব কারণে লাতিনো আর মুসলিম ভোটের পুরোটা গেছে ওকাসিওর পক্ষে। সেই সঙ্গে ক্রাউলি যেহেতু ১৪ বছর ধরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রাইমারি জয়ী হয়ে কংগ্রেসম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এবার তাঁর ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাঁর পক্ষে ভোট দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। ফলাফল, রাজনীতির বড় আপসেট, ক্রাউলির বিদায়। সে কথাই লিখেছেন একজন বাংলাদেশি ভোটার মিনহাজ আহমেদ, তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে।
এদিকে একই দিন জ্যামাইকা ও এলমন্ট এলাকা মিলে কংগ্রেস আসন ডিস্ট্রিক্ট ৫ থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশি মিজান চৌধুরী। ২৭ জুন তিনি এক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, এই নির্বাচনে মানুষের ভালোবাসা তাঁকে পথ দেখিয়েছে। আগামী দিনে এই প্রেরণা নিয়েই কাজ করে যাবেন তিনি।