মা-বাবা থেকে বিচ্ছিন্ন শিশুদের নিয়ে টানাহেঁচড়া চলছেই

তীব্র সমালোচনার মুখে গত মাসে অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শিশুদের বিচ্ছিন্ন করার নীতি বন্ধের নির্দেশ দেন। ছবি: রয়টার্স
তীব্র সমালোচনার মুখে গত মাসে অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শিশুদের বিচ্ছিন্ন করার নীতি বন্ধের নির্দেশ দেন। ছবি: রয়টার্স

প্রায় চার মাস অতিবাহিত হওয়ার পরেও যে তিন হাজারের মতো শিশুকে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে আটক করা হয়, একজন ফেডারেল বিচারকের নির্দেশ সত্ত্বেও তাদের অধিকাংশকেই এখনো মা-বাবার কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার একটি ফেডারেল আদালত ট্রাম্প প্রশাসনকে স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, পাঁচ বছরের কম—এমন শিশুদের দু-এক দিনের মধ্যে ফিরিয়ে দিতে হবে। এ নিয়ে কোনো ওজর গ্রহণযোগ্য হবে না।

ট্রাম্প প্রশাসন অবৈধ অভিবাসন বন্ধের নামে যে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি চালু করে, তারই অংশ হিসেবে মেক্সিকো সীমান্ত অতিক্রম করে আসা শিশুদের তাদের মা-বাবার কাছে থেকে বিচ্ছিন্ন করে সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দেশের ভেতরে ও বাইরে তীব্র সমালোচনা শুরু হলে গত মাসে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ট্রাম্প শিশুদের বিচ্ছিন্ন করার নীতি বন্ধের নির্দেশ দেন। শিশুদের মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও বাস্তবে সে নির্দেশ কার্যকর সম্ভব হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে শিশুদের মা-বাবার কোনো খোঁজ সরকারের কাছে নেই। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের যুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে বলে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তর জানিয়েছে। কোনো কোনো মা-বাবাকে তাঁদের সন্তান ছাড়াই নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন তাঁরা কোথায় আছেন, কেউ জানে না। এ অবস্থায় আরও কত দিন শিশুদের অন্তরীণাবদ্ধ থাকতে হবে, কেউ জানে না।

ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, এ পর্যন্ত পাঁচ বছরের কম—এমন মোট চারজন শিশুকে তারা মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। আরও ৩৪ জনকে মঙ্গলবারের মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা। সরকারি হিসাবে পাঁচ বছরের কম—এমন শিশুর সংখ্যা ১০৫।

কিন্তু বাকি শিশুদের কী অবস্থা, সে ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান কিছুটা ধোঁয়াটে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দাবি করছে, কোনো শিশু যাতে ভুল মা-বাবার হাতে পড়ে নির্যাতনের শিকার না হয়, সে জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, বিলম্বের সেটাই কারণ। আগে আদালত ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে সব শিশুকে ফিরিয়ে দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন, কিন্তু সে সময়ের মধ্যে এই কাজ সম্পন্ন হবে বলে কার্যত কেউই মনে করে না। একাধিক অভিবাসন আইনজীবী ও সংস্থা, যারা শিশুদের অভিভাবকদের কাছে ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করছে, তারা জানিয়েছে, সঠিক তথ্যের অভাবে এই কাজ সম্পন্ন হতে কয়েক মাস, এমনকি কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, মা-বাবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন এই শিশুদের দীর্ঘকাল আটকে রাখার ফলে অনেকের মানসিক ভারসাম্য হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। সন্তানদের হারিয়ে অনেকে মা-বাবাও দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ইতিমধ্যে হন্ডুরাস থেকে আগত এক ব্যক্তি অন্তরীণাবস্থায় আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে।