ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার মার্কিনরা

অভিবাসী শিশুদের পরিবার-বিচ্ছিন্ন করার ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার শিশুরাও
অভিবাসী শিশুদের পরিবার-বিচ্ছিন্ন করার ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার শিশুরাও

অভিবাসী শিশুদের তাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে আলাদা রাখার ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের (বর্তমানে বাতিল) ব্যাপক বিরোধিতা করছেন আমেরিকার নাগরিকেরা। অধিকাংশ মানুষ আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণের প্রেসিডেন্টের আহ্বান এবং দেশে থাকা বাবা-মা ও সন্তানদের আমেরিকায় আনার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আরোপের মাধ্যমে বৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে একমত নন। ওয়াশিংটন পোস্ট-শার স্কুল পরিচালিত নতুন এক জনমত জরিপে এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিবাসন বিতর্ক নিয়ে জরিপে আরও মিশ্র চিত্র ফুটে উঠেছে। অবৈধ অভিবাসী ঠেকাতে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা এবং এ দেশ অভিবাসীদের স্বাগত জানাচ্ছে কিনা—এ প্রশ্নে আমেরিকানরা আরও বেশি বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। তবে বেশির ভাগ মানুষ সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষায় ডেমোক্র্যাটদের চেয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওপর বেশি আস্থা দেখিয়েছেন। সীমান্ত নিরাপত্তার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি এই সমর্থন মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যেসব এলাকায় নির্বাচনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে সেখানে রিপাবলিকানদের চেয়ে ডেমোক্র্যাটরা বেশি সক্রিয় মনে হচ্ছে। এসব নির্বাচনী এলাকায় ডেমোক্র্যাট ও ডেমোক্র্যাটপন্থী স্বতন্ত্র ৫৯ শতাংশ ভোটার বলেছেন, মধ্যবর্তী নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পক্ষান্তরে রিপাবলিকান ও রিপাবলিকানপন্থী স্বতন্ত্র ৪৬ শতাংশ ভোটার এই নির্বাচনকে গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করেছেন। সার্বিকভাবে নিবন্ধিত ভোটারের ৪৭ শতাংশ হাউসে ডেমোক্র্যাটদের এবং ৩৭ শতাংশ রিপাবলিকানদের পছন্দ করেন বলে জানান।
ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে ও পরে দলীয়ভাবে জাতি স্পষ্ট বিভক্ত। তবে ২০১৮ সালে রাজনীতিতে অন্য দুটি বিষয়েও জাতির মধ্যে বিভাজন লক্ষ্য করা গেছে। এ দুটি বিষয় হলো অভিবাসন ও ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট পদ। এ বিষয় দুটি নিয়ে নারী-পুরুষ, শ্বেতাঙ্গ ভোটার ও কলেজের ডিগ্রি নেই—এমন ভোটারদের মধ্যে বেশ মতপার্থক্য রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ও তার বিভিন্ন নীতির বিষয়ে নারী ও কলেজের ডিগ্রিধারী শ্বেতাঙ্গ ভোটারের বেশির ভাগই অসন্তুষ্ট। তবে পুরুষ ও কলেজের ডিগ্রি নেই—এমন শ্বেতাঙ্গ ভোটারের অধিকাংশ আবার তার পক্ষে। যাই হোক এই মতপার্থক্য তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এলাকায় খুব একটা গুরুত্ব পাবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
সার্বিকভাবে ট্রাম্পের পক্ষে ৪৩ শতাংশ এবং বিপক্ষে ৫৫ শতাংশ ভোটার অবস্থান নিয়েছেন। তাঁর পক্ষে অবস্থান গ্রহণকারীদের মধ্যে ৫৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৩২ শতাংশ নারী।
অভিবাসন নীতি নিয়ে অসন্তুষ্টি: অভিবাসীদের বিষয়ে প্রেসিডেন্টের গৃহীত পদক্ষেপের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বেশির ভাগ ভোটার। এই ইস্যুতে ৩৯ শতাংশ মানুষ তাঁর পক্ষে এবং ৫৯ শতাংশ বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। যারা বেশ জোরালোভাবে প্রেসিডেন্টের পদক্ষেপকে সমর্থন করেন, তার দ্বিগুণের বেশি বিরোধিতা করেছেন। আবার যারা বিরোধিতা করেছেন তাদের মধ্যে ৫১ শতাংশ পুরুষ এবং ৬৭ শতাংশ নারী রয়েছেন। কলেজের ডিগ্রিধারী শ্বেতাঙ্গদের ৬৮ শতাংশই প্রেসিডেন্টের অভিবাসন নীতির বিরোধী। কিন্তু কলেজের ডিগ্রি নেই—এমন শ্বেতাঙ্গদের ৫৬ শতাংশ প্রেসিডেন্টের অভিবাসন নীতির পক্ষে।
অর্থনীতিতে সমর্থন বেশি: আমেরিকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রতি সবচেয়ে বেশি সমর্থন পেয়েছেন ট্রাম্প। এ ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ মানুষ তাঁর নীতিকে সমর্থন করেছেন। বিরোধিতা করেছে ৪৮ শতাংশ।
ওয়াশিংটন পোস্ট ও জর্জ ম্যাসন ইউনিভার্সিটির শার স্কুল অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নমেন্টের পৃষ্ঠপোষকতায় শিকাগো ইউনিভার্সিটির এনওআরসি ২৭ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত অনলাইন ও ফোনে এই জরিপ চালায়। জরিপে অভিবাসন বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সবচেয়ে বেশি সমালোচনার মুখে পড়েন।
প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৭ জন (৬৯ শতাংশ) বাবা-মায়ের কাছ থেকে অভিবাসী শিশুদের পৃথক করে রাখার প্রেসিডেন্টের নীতির বিরোধিতা করেন। আর মাত্র ২৯ শতাংশ এই নীতির পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে ১০ জন রিপাবলিকানের মধ্যে প্রায় ৬ জনই প্রেসিডেন্টের এই নীতি সমর্থন করেন।
ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। আমেরিকানদের তিন-চতুর্থাংশই এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।
শিশুদের আহাজারির নানা চিত্র নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে প্রেসিডেন্ট নীতি পাল্টাতে বাধ্য হন বলে জরিপে ফুটে ওঠে। বাবা-মায়ের কাছ থেকে শিশুদের আলাদা রাখার ছবি দেখে ও কাহিনি শুনে প্রতি ৪ জনের মধ্যে ৩ জনই বিরক্ত হয়েছেন। আমেরিকানদের প্রায় অর্ধেক (১০ জন নারীর মধ্যে ৬ জন) বলেছেন, তারা এই নীতিতে খুবই বিরক্ত হয়েছেন।
যাই হোক প্রেসিডেন্টের এই অভিবাসন নীতি নিয়ে মানুষের মধ্যে বড় ধরনের বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। ৩৭ শতাংশ মানুষ বাবা-মা থেকে শিশুদের পৃথক করার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনকে দোষারোপ করেছেন। আবার ৩৫ শতাংশ বলেছে, মূলত এর জন্য দায়ী যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী অভিবাসী পরিবারগুলো। আর ২৫ শতাংশ মানুষ বলছেন, উভয় পক্ষই এর জন্য সমান দায়ী।
আমেরিকার অভিবাসন নীতি অপরাধী ও এ ধরনের চক্রের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে পড়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ কথা বেশির ভাগ আমেরিকান প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাদের মতে (প্রতি ১০ জনের ৪ জন) অবৈধভাবে প্রবেশকারীর বেশির ভাগই তাদের নিজ দেশে বিপদ দেখে পালিয়ে এসেছেন, আর এটাই তাদের আসার প্রধান কারণ। অন্য ১০ জনের মধ্যে ৪ জন বলেন, অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়ার আশায় তারা এসেছেন। মাত্র ৬ শতাংশ মানুষ বলছেন, অবৈধ অভিবাসীদের অধিকাংশই মাদক ব্যবসা কিংবা দুষ্কৃতকারী দলের সদস্য হিসেবে আমেরিকায় প্রবেশ করেছেন।
বেশির ভাগ আমেরিকান (৪৮ শতাংশ) বলেছেন, অভিবাসীদের সাদরে গ্রহণ করার এই দেশের ইতিহাস খুবই ভালো। অন্যদিকে ১০ জনের মধ্যে ৪ জন বলেন, এর ভালো-মন্দ দুই দিকই আছে। ১১ শতাংশ বলছেন, ইতিহাস বরাবরই খারাপ।
জরিপ অনুযায়ী শরৎকালের কংগ্রেসনাল নির্বাচনে ভোটাররা অভিবাসনকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিষয়ের একটি বলে মনে করেন। অন্য দুটি বিষয় হলো, চাকরি ও অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্যসেবা।