মায়ের কাছেই চাওয়া হচ্ছে বিচ্ছিন্ন সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষার খরচ

ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প

পরিবার বিচ্ছিন্ন অভিবাসী শিশুদের নিজ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও কোনো দায় নিতে চাইছে না ট্রাম্প প্রশাসন। ডিএনএ পরীক্ষার ব্যয়ভার বহনের জন্য অভিবাসী শিশুদের মায়ের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। যদিও এই আমেরিকায় প্রবেশের জন্য সীমান্ত হাজির হওয়া পরিবারগুলো থেকে শিশুদের বিচ্ছিন্ন করেছিল ট্রাম্প প্রশাসনই।

ডেইলি বিস্ট নামের এক মার্কিন সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে এমন অন্তত চারজনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের পরিবারের সদস্যদের ফিরে পাওয়ার জন্য ডিএনএ পরীক্ষার ব্যয় বহনের জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে। ফেডারেল সরকারের আওতাধীন আটককেন্দ্রে থাকা ওই মায়েদের ডিএনএ পরীক্ষার ব্যয় বহনের জন্য সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই চারজনের মধ্যে তিনজনের সন্তানকে তাঁদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। আর চতুর্থজন তাঁর তিন বছর বয়সী ভাইকে ফিরে পেতে চান।
এই চার নারী বর্তমানে রয়েছেন টেক্সাসের এল পাসো অঞ্চলের অভিবাসী আশ্রয়কেন্দ্র অ্যানানসিয়েশন হাউসে। আশ্রয়কেন্দ্রটির পরিচালক রুবেন গার্সিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে নিউইয়র্ক পোস্টকে বলেন, ‘এই চার নারীর কারও কাছেই এই পরীক্ষার ব্যয় বহনের মতো অর্থ নেই। ফলে এখন পুরো বিষয়টি আমাদের ঘাড়ে এসে চাপছে।’
সংকটের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গার্সিয়া বলেন, ‘সীমান্তে অবৈধ হিসেবে যখন কেউ ধরা পড়ছে তখন ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এজেন্টরা তাঁদের কাছ থেকে যাবতীয় নথিপত্র রেখে দেয়। ফলে আটকাবস্থায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পরা পরিবারের সদস্যদের বিষয়ে তাঁরা কোনো প্রমাণপত্র হাজির করতে পারেন না। কিন্তু যখন পরিবার বিচ্ছিন্ন শিশুদের নিজ পরিবারের ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি সামনে এল, তখন তাঁদের কাছেই ওই শিশুদের অভিভাবকত্বের প্রমাণ চাওয়া হলো। আর যখন তাঁরা এমন কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারলেন না, তখন ফেডারেল কর্তৃপক্ষ ডিএনএ পরীক্ষার কথা বলল।’
এ বিষয়ে অ্যানানসিয়েশন হাউসের অভিবাসন আইনজীবী ইলিয়ানা হোগুইন বলেন, ‘সরকার চাইছে ডিএনএ পরীক্ষার খরচ সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলো বহন করুক। যুক্তি হিসেবে ফেডারেল কর্তৃপক্ষ বলছে, একীভূত হওয়ার প্রয়োজনটি তাদের, সরকারের নয়। সরকারের দিক থেকে এমন আচরণ অবিশ্বাস্য।’
ইলিয়ানা জানান, শিশুদের ফিরে পেতে আকুল পরিবারগুলোকে বাধ্য করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ব্যয় বহন করতে। অ্যানানসিয়েশন হাউসে আটক বেশ কয়েকজন অভিভাবকের কাছ থেকে ৫০০ ডলারেরও বেশি করে অর্থ নেওয়া হয়েছে, শুধু এটা প্রমাণের জন্য যে, ওই শিশুরা তাঁদের পরিবারভুক্ত। এমনকি কারও কারও কাছ থেকে ৭০০ থেকে ৮০০ ডলার পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে ডেইলি বিস্টে প্রকাশিত এই প্রতিবেদন অস্বীকার করেছে শরণার্থী পুনর্বাসন কার্যালয়। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, পরিবার বিচ্ছিন্ন শিশুদের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য কারও কাছ থেকে কোনো অর্থ নেওয়া হচ্ছে না। এ ধরনের দাবি সর্বৈব মিথ্যা। এই পরীক্ষা বিনামূল্যে করে দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে রুবেন গার্সিয়া বলেন, অভিবাসী অভিভাবকদের নিজের সন্তান ফিরে পাওয়ার প্রক্রিয়াটি বিনামূল্যে সম্পন্ন করা হচ্ছে, এমন তথ্য শোনা গেলেও এখন পর্যন্ত ফেডারেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এর প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে এখনো যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়ে গেছে।
পরিবার বিচ্ছিন্ন শিশুদের ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে জৈবিক সম্পর্ক প্রমাণের জন্য ডিএনএ পরীক্ষার কার্যক্রমটি প্রথম শুরু হয় সাবেক ওবামা প্রশাসনের সময়। সেই সময় ডিএনএ পরীক্ষার প্রাথমিক ব্যয় পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকেই নেওয়া হতো। তবে জৈবিক সম্পর্ক প্রমাণ হওয়ার পর ওই অর্থ সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোকে ফিরিয়ে দেওয়া হতো। এ ছাড়া পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণ দেখিয়ে কেউ এ বিষয়ে সহযোগিতা চাইলে তাও দেওয়া হতো। ২০১০ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে সীমান্তে অভিবাসী পরিবারগুলোর বিচ্ছিন্ন শিশুদের ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে এ ধরনের পন্থাই অনুসরণ করা হতো। কিন্তু বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসন জৈবিক সম্পর্ক প্রমাণ হলে অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার নীতিটি বাতিল করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ডেইলি বিস্ট।
ফেডারেল কর্তৃপক্ষের এই কৌশলকে ‘বিলম্বের নীতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন আমেরিকান অভিবাসন আইনজীবী অ্যাসোসিয়েশনের গ্রেগ কোহেন। এই নিষ্ঠুর নীতি থেকে বেরিয়ে এসে পরিবার বিচ্ছিন্ন শিশুদের ডিএনএ পরীক্ষার ব্যয় বহনসহ তাদের নিজ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াটি সহজ করার আহ্বান জানিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।
রুবেন গার্সিয়া বলেন, ‘ডিএনএ পরীক্ষার ফল পেতে সময় যতই লাগুক না কেন, সরকারের উচিত এ বিষয়ক যাবতীয় দায়িত্ব নেওয়া। এতে ক্ষতি নেই কোনো। সবচেয়ে ভালো হচ্ছে পুরো বিষয়টি দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করে শিশুদের নিজ পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়াটা ত্বরান্বিত করা। এ বিষয়ে সরকারের অনেক কিছু করার আছে।’