ট্রাম্পের এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা

ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প

ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক শেষ হয়েছে প্রায় ১০ দিন আগে। কিন্তু এ নিয়ে বিতর্ক শেষ হয়নি। অব্যাহত সমালোচনা থেকে সবার নজর ফেরাতে গতকাল সোমবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একই সঙ্গে দুই ঢিল ছুড়েছেন। তিনি তাঁর কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত একাধিক সাবেক গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তার অতি গোপনীয় গোয়েন্দা প্রতিবেদন পড়ার সুযোগ বাতিল করতে চান বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে। একই দিনে তিনি ইরানের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দিলে তার এমন জবাব দেওয়া হবে যে বিশ্ব আগে তা কখনো দেখেনি।

ট্রাম্পের মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্স জানিয়েছেন, যে কয়েকজন সাবেক কর্মকর্তার নিরাপত্তা ছাড়পত্র বাতিল করার কথা ভাবা হচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) সাবেক প্রধান জন ব্রেনন, কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এফবিআই) সাবেক প্রধান জেমস কোমি, জাতীয় গোয়েন্দা দপ্তরের সাবেক প্রধান জেমস ক্লাপার ও সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুসান রাইস। তাঁরা সবাই ওবামা প্রশাসনের অধীনে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তাদের একটাই পরিচয়, তাঁরা ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর সমালোচক।

গোয়েন্দা ও নিরাপত্তার দায়িত্বের সঙ্গে জড়িত সাবেক কর্মকর্তাদের প্রতি সৌজন্য হিসেবে অতি গোপনীয় গোয়েন্দা তথ্য দেখার সুযোগ দেওয়া হয়। পুতিনের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের পর এই কর্মকর্তাদের প্রায় সবাই ট্রাম্পের ভূমিকার সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছেন। জন ব্রেনন এমন কথাও বলেছিলেন, পুতিনের পক্ষাবলম্বন করে ট্রাম্পের বক্তব্য তাঁর বিবেচনায়, রীতিমতো রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। অন্যদিকে জেমস কোমিও প্রশ্ন তুলেছেন, অন্য সবার সমালোচনা করলেও ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্টের ব্যাপারে টু শব্দটিও কেন করেন না। পুতিনের ব্যাপারে ট্রাম্পের এই অতি নরম অবস্থানের কারণ হয়তো এই যে তাঁর ব্যাপারে পুতিনের হাতে কোনো ক্ষতিকর প্রমাণ রয়েছে।

ওবামা প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা ছাড়পত্র বাতিল কি তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা?—এমন এক প্রশ্নের জবাবে সারাহ স্যান্ডার্স সাংবাদিকদের বলেন, ‘ট্রাম্প মনে করেন এসব কর্মকর্তা নিরাপত্তা ছাড়পত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছেন এবং এ থেকে আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন।’

কোনো কোনো রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত সমর্থন করলেও ডেমোক্র্যাটরা এর পেছনে প্রতিপক্ষকে ঠান্ডা করার ব্যবস্থা হিসেবে দেখছেন। কংগ্রেসে ডেমোক্রেটিক নেতা ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, ট্রাম্প জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নটির রাজনীতিকরণ করছেন। এই ব্যবস্থা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।

ইরানের ব্যাপারে ট্রাম্প যে কঠোর ভাষায় পাল্টা ব্যবস্থার হুমকি দেন, তাতেও অনেকে রাজনীতির গন্ধ পেয়েছেন। রোববার ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক তৎপরতার প্রতি সতর্ক উচ্চারণ করে বলেছিলেন, এর পরিণামে যুক্তরাষ্ট্রকে এমন এক যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হবে যা হবে সব যুদ্ধের মা। জবাবে এক টুইটে ট্রাম্প বলেন, ইরান যদি কখনো যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হুমকি দেয় তাহলে এমন ভয়াবহ প্রতিশোধ নেওয়া হবে যা পৃথিবীর ইতিহাসে আগে কাউকে ভোগ করতে হয়নি।

কোনো কোনো ভাষ্যকার মনে করেন, ইরানের কাছ থেকে আগেও অনেকবার অনুরূপ ভাষায় হুমকি এসেছে। কিন্তু ট্রাম্প কখনো তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখাননি। এখন তিনি পুতিন সমস্যা থেকে চোখ ফিরিয়ে নিতেই এমন কঠোর ভাষায় পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন। ট্রাম্পের রণকৌশলের ব্যাখ্যা হিসেবে ওয়াশিংটন পোস্ট মন্তব্য করেছে, এটি তাঁর পরিচিত কৌশল। যখনই সমালোচনার সম্মুখে পড়বে, আলোচনার বিষয়বস্তু বদলে ফেল। একই কথা বলেছেন ডেমোক্র্যাট সিনেটর রন ওয়াইডেন। তিনি সিএনএনকে বলেন, ‘ট্রাম্প এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইছেন। নিরাপত্তা ছাড়পত্র বাতিল করে নিজের সমালোচকদের মুখ বন্ধ করার ব্যবস্থা করছেন, আর ইরানের বিরুদ্ধে মারদাঙ্গা টুইট করে সবার দৃষ্টি অন্যত্র ফেরাতে চাইছেন।’