অফিস পলিটিক্স

আমেরিকার অফিস পলিটিক্‌স নতুন কোন ঘটনা নয়। এখানে যারা করপোরেট চাকরি করেন, তাঁরা সবাই এক বাক্যে স্বীকার করবেন, চাকরি আর কুরুক্ষেত্র মোটামুটি একই রকম। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। কর্মস্থলটা মনে হয় যেন কোন যুদ্ধক্ষেত্র, এখানে গোপন মাইন পাতা আছে। খুব সাবধানে পা ফেলতে হয়। ভুল করে কোনোভাবে কোন বিস্ফোরক গোলার ওপর পা রেখেছেন তো মরেছেন। তখন চাকরি ঠিক রাখাই কঠিন হয়ে পড়বে। বিশেষ করে আমার মতো বাদামি চামড়ার জন্য তো বটেই। আমার বউ আছে, সংসার আছে, পোলাপান আছে আর সে কারণে চাকরিটাও আমার কাছে মক্কা-মদিনার মতোই পবিত্র একটি জায়গা। খুব সাবধানে থাকি, খুব সাবধানে পা ফেলি। তারপরও পা ফসকে যেতে কতক্ষণ!
‘আমি পেশায় ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট। আমেরিকার বিভিন্ন নামিদামি করপোরেট অফিসে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। এসব দিক বিবেচনায় ইতিমধ্যেই কর্মক্ষেত্রে কূট রাজনীতি সম্পর্কে আমার মোটামুটি ভালো জ্ঞানও হয়েছে। তারপরও সাবধানের মার নেই। আমি এখন ভিতু টাইপের একজন মানুষ। বিশেষ করে কাজের ক্ষেত্রে। কোন চালে ভুল দিয়ে কাজকর্ম হারিয়ে ফেললেই তাহলেই বিপদ। চাকরি চলে গেলে আমেরিকার এই কঠিন বর্ণবাদের মৌসুমে বউ বাচ্চা নিয়ে খাব কী? অতএব সাবধানে থাকো বাছা। এখন তুমি আর সেই ব্যাচেলার নও। কোন রকম ঝামেলায় জড়িওনা ভাই।’ বিড় বিড় করে আমিই আমাকে কথাগুলো বলি।
আমি আমার বর্তমান কর্মস্থলে যোগ দিয়েছি মাত্র এক সপ্তাহ হলো। এখনো কোন রকম অফিস রাজনীতির ঘ্রাণ আমার নাকে এসে লাগেনি। সবাই সবার মতো কাজ করছে। প্রতিদিন সকাল নয়টায় ‘স্ট্যান্ড আপ’ মিটিং। সেই মিটিংয়ে কাজের হিসাব-নিকাশ, প্রতিদিনের কর্মঘণ্টার হিসাব এবং আগামীকাল কর্মঘন্টায় কী হবে তা নিয়ে আলোচনা। এটি খুব খুব গৎবাঁধা একটি প্রক্রিয়া। মিটিংয়ে সবাই সবার অবস্থান তুলে ধরেন, ব্যাখ্যা দেন। কফি খান এবং ঘুম ঘুম চোখে আজাইরা প্যাঁচাল পাড়েন। আমি এই কোম্পানিতে নতুন বলে এখনো খুব একটা বাকপটু হয়ে ওঠেনি। বলা যায় এখনো আমার সবার সঙ্গে পরিচয় পর্ব চলছে। যখনই কারও সঙ্গে পরিচয় ঘটে তখনই ঠোঁটের এক কোনায় একটি কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে ‘হ্যালো’ সম্বোধন করতে হয়। এটাই এখানকার নিয়ম। কাউকে ভালো লাগছে না? তাতে কী? খুব হাসি মুখে তার পেটে কীভাবে ছুরি চালিয়ে দিতে হবে, সেই হিসাবটা এই করপোরেট দুনিয়ার আমেরিকানরা খুব ভালো করেই জানে।
কিছুদিন অফিস করেই আমি বুঝতে পারছিলাম, এখানের অফিস রাজনীতির লড়াইটা ত্রিমুখী। আমি কয়েকটা মিটিংয়ে যোগ দিয়ে তা নিজ অভিজ্ঞতায় বুঝতে পেরেছিলাম। একটা হলো মালিক পক্ষ, তারা বেনিয়া। তারা চায় কোম্পানি ঠিক তারা যেমন চায় সেভাবেই চলুক। এড অরল্যান্ডো হলো আমাদের কোম্পানির চেয়ারম্যান। তিনি বয়সে প্রবীণ। পুরু চশমার আড়ালে নেকড়ের মতো ধূর্ত দুটো চোখ যেন সব সময় জ্বলজ্বল করছে। একদিন অফিস হলরুমে সামনে আমাকে দেখেই তিনি হাক দিলেন, ‘কি খবর? সব ঠিক আছে তো? আশা করি সবকিছু তুমি মানিয়ে নিতে পেরেছ?’ আমি জানি এসব কথা নিতান্তই ভদ্রতা। আমিও কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললাম, ‘খুব ভালো লাগছে। এখানে কাজের পরিবেশ অসাধারণ’ আমিও কথাগুলো বলে ভদ্রতা রক্ষা করি।
দ্বিতীয় পক্ষ হলো আমাদের কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফ্রেড ডিভিটো ও তাঁর দল। খুবই কর্মঠ। সারাক্ষণ শুধু মিটিং, টেলিফোন আর দৌড়াদৌড়ি। দৌড়ঝাঁপের মধ্যেও তিনি সবার খবর রাখেন। লোকটাকে দেখলে আমার কেন জানি খুব ভালো লাগে। মনে হয় সংসার-টংসার এদের জীবনে নেই। অফিসে আসেন সবার আগে আর বের হন যখন বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। এই হলো এখানে করপোরেট ‘বিগ বস’ হওয়ার সবচেয়ে বড় খেসারত। ব্যক্তিগত জীবনের সাধ আহ্লাদকে জলাঞ্জলি দিতে হয়। তৃতীয় পক্ষটি আমার সরাসরি বস। তার নাম কেরি ব্রেডি। মধ্যবয়স্কা মহিলা। আয়ারল্যান্ড থেকে এসে আমেরিকায় পড়াশোনা করে এখানে চাকরিটা বাগিয়েছেন। খুব মিশুক স্বভাবের। বাড়ি থেকে নিজে পেন কেক, আপেল পাই ইত্যাদি বানিয়ে আনেন এবং সকালে আমাদের ‘স্ট্যান্ড আপ’ মিটিংয়ে তা সবার মধ্যে বিতরণ করেন। এ ধরনের আলামতে আপনাকে বুঝতে হবে, সেই মহিলাও তার দল ভারি করার জন্য একটি কৌশল অবলম্বন করছেন। আমি এসব বুঝি। কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা দিয়েই এসব বোঝা যায়। তবে কেরি একজন ভালো মানুষ। কারণ কাজের হিসাব তিনি কড়ায় গন্ডায় বুঝে নেন। একদিন মিটিং শেষে সবাই চলে যাওয়ার পর কেরি আর আমি কিছুক্ষণ কথা চালাচালি করলাম। এ খবর সে খবর বিনিময়ের পর কেরি ফস করে আমাদের সিইও ফ্রেড সম্পর্কে একটা মন্তব্য করে বসল, ‘দেখো, ফ্রেড খুব ভালো একজন সিইও। কিন্তু সে কাজের কোনো শৃঙ্খলা রাখতে জানে না। ওর এখন বয়স হয়েছে। অবসরে চলে যাওয়া উচিত। তুমি কি বলো?’
হায় আল্লাহ! অফিস রাজনীতি বুঝি শুরু হয়ে গেল! আমি লাঠিও ভাঙে না, আর সাপটাও মরে—এমন একটা জুতসই উত্তর খুঁজে বললাম। ‘দেখো, তুমি খুব অভিজ্ঞ একজন মানুষ। তোমার চোখ দিয়ে যা দেখবে, আমিতো আর সেভাবে দেখতে পাব না। আর আমি মাত্র এই সপ্তাহ দুই তোমাদের এখানে এসেছি।’ আমার কূটনৈতিক উত্তর শুনে কেরি শুধু তার ঠোঁটের ডান কোণে কৃত্রিম হাসির রেখা টেনে চলে গেল। আমি কিছুক্ষণ অফিসে বসে আমার পরবর্তী অফিস রাজনীতির কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করতে শুরু করলাম। মনে মনে একটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করলাম। কেরি কেন ফ্রেডকে পছন্দ করে না? তাহলে কি ফ্রেডের জায়গাটা কেরি সুকৌশলে দখল করতে চাইছে? এসব ভাবতে ভাবতেই সহকর্মী ডেভিড আমার কক্ষে প্রবেশ করলেন। এ কথা সে কথার পর ডেভিডও দেখি সেই একই কথা বললেন। ‘তোমাকে একটা কথা আগেই গোপনে জানিয়ে রাখি। কেরি কিন্তু ফ্রেডের জায়গায় যেতে চায়। আমারও মনে হয় কেরির সেই যোগ্যতাটা আছে।’ আমি শুধু তার কথা শুনে হাসলাম। বেশ বুঝতে পারলাম, সে কেরির হয়ে আমার কাছে ওকালতি করতে এসেছে। আমি যতটুকু সম্ভব ঠোঁটে হাসির ঢেউ উঠিয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।
কিন্তু মনের মধ্যে কোথায় জানি একটা খচখচানি ঠিকই টের পাচ্ছিলাম। তাহলে আমিও কি ধীরে ধীরে অফিস রাজনীতিতে জড়িয়ে যাচ্ছি? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করি। তবে এ কথা ঠিক, কেরি আমার সরাসরি বস। তাকে কোনোভাবেই আপসেট করা চলবে না। আবার ফ্রেড আমাদের সবার বস। সে যদি কোনোভাবে টের পায়, আমরা কেরিকে তার জায়গায় বসানোর মতলবে নেমেছি জানলে তিনি চাইলে আমাদের সবার চাকরি খেতে পারবেন। আবার আমাদের প্রেসিডেন্ট এড অরল্যান্ডো মনে মনে কার প্রতি বেশি হেলে আছেন, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। বুঝতে হবে এড ইতালিয়ান বংশোদ্ভূত। ফ্রেড ডেটিটোও ঠিক তাই। তাদের মাঝে জাতিগতভাবেই একটা ভালো মিল আছে, সেই সুবাদে একটা সখ্য আছে। অন্যদিকে কেরি ব্র্যাডি আইরিশ। ইতালীয়রা কোনোভাবেই আইরিশদেরকে পছন্দ করে না। এ তথ্যটিও আমার অজানা নয়। তাহলে ত্রিমুখী লড়াইয়ে কুপোকাত হবে কে? আমি বাংলাদেশের মানুষ। গায়ের রং বাদামির হওয়ায় নয়, আমরা জাতিগতভাবেই যেকোনো ষড়যন্ত্র ভয় পাই। আর আমিতো পাই-ই। কিন্তু এ খবরও জানা আছে, চাকরি টিকিয়ে রাখতে হলে এখানে অফিস রাজনীতিতে ঝানু হতে হয় বৈকি! তাই সব দিক হিসাব কষে আমি কেরির পক্ষে থাকাটাই নিরাপদ মনে করলাম।
প্রতি শুক্রবার আমরা অফিস থেকে দল বেঁধে দুপুরের খাবার খেতে বের হই। আমাদের দলনেতা থাকে কেরি ব্র্যাডি। কোন এক শুক্রবার কেরির সঙ্গে একটা নামকরা রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাবার খেতে যাই। খাবারের মেনুতে অর্ডার দিয়েই অনুমান করতে পারেছিলাম, আজ এখানে কোন ’কাহিনি’ আছে এবং ঠিক তাই হলো। কেরি ঘোষণা দিলেন, আজ তিনিই আমাদের লাঞ্চ করাবেন। আমরা তার অধস্তন কর্মচারীরা খুশি হয়ে তা সমর্থন করলেও সবাই মোটামুটি সম্ভাব্য যুদ্ধের গোলাবারুদ নিয়ে মগ্ন হয়ে গেলাম। যুদ্ধে আমরা জয়ী হবে তো? খাবার খেতে খেতে কেরি আমাদের সবার সঙ্গেই অনেক কথা বললেন এবং আমাদের কাজ মোটামুটি ভাগ করে দিলেন। আমার দায়িত্ব হলো ফ্রেড ডেভিটো ক্ষমতা খাটিয়ে কীভাবে বিভিন্ন সময় অফিসের গাড়ি, উড়োজাহাজের টিকিট এবং ছুটি বাবদ টাকা খরচ করেছেন তার একটা প্রতিবেদন তৈরি করা। কাজটা আমার জন্য মোটেও কঠিন কিছু নয়, তবে তা করতে হবে খুব গোপনে। স্বাভাবিকভাবেই চাকরিটা টিকিয়ে রাখতে হলে কেরিকে ’ইয়েস’ বলা ছাড়া আমার দ্বিতীয় আর কোনো পথ খোলা ছিল না।
খেলা বেশ জমে গেছে। আমি মোটামুটি আমার কাজ খুব সাবধানে এবং পেশাদারির সঙ্গেই গুছিয়ে এনেছি। অন্য সহকর্মীরাও তাদের কাজকর্ম নিয়ে বেশ তৎপর। কেরি যদি কোম্পানির সিইও হতে পারেন, তাহলে কপাল আমাদেরও খুলবে। সেটা পরের কথা। আপাতত কাজগুলো নিখুঁতভাবে করা চাই। মূল কাজ হলো আমাদের বিশাল কোম্পানি চালানোর দক্ষতায় ফ্রেড ডিভিটো অদক্ষ, তিনি কোম্পানির আশানুরূপ উন্নতি করতে পারেননি, তিনি অসৎ এবং একই সঙ্গে কোম্পানির সম্ভাব্য গ্রাহক তৈরি করতেও ব্যর্থ—এসব বিষয় ঠিক সময়ে কোম্পানির চেয়ারম্যান এবং বোর্ড অব ট্রাস্টির সামনে উপস্থাপন করতে হবে। জানি, যা করার তা কেরিই করবেন। তবে কাজটি যে সহজ নয়, সেটা আর নতুন করে বলে দিতে হবে না। অফিস পলিটিকস করতে হলে এ ধরনের কাজের কোন বিকল্পও নেই।
তত দিনে আমার চাকরির বয়স এক বছর হয়ে গেছে। একদিন অফিসে এসেই সবার সঙ্গে কুশল বিনিময়ের সময় লক্ষ্য করছিলাম, সবাই আমার দিকে কীভাবে যেন বাঁকা চোখে তাকাচ্ছে। এভাবে তাকানো খুব একটা ভালো লক্ষণ নয়। গরু মরলে যেমন শকুন সবার আগে খবর পায়, ঠিক একইভাবে কারও চাকরি চলে গেলে অফিসের অন্দরমহলে চারদিকে ফিসফাস শুরু হয়ে যায়। তাহলে কী আমাকে নিয়ে বাজে কোন ‘ফিসফাস’ চালু হয়ে গেছে? আমার শিরদাড়ায় যেন একটা শীতল হাওয়া বয়ে গেল। খুব স্বাভাবিকভাবেই নিজের অফিস কক্ষে চেয়ারটায় বসলাম। ল্যাপটপটা খুললাম। স্বভাব অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ইমেইল যাচাই করলাম। কিন্তু মনের মধ্যে কোথায় যেন খচ খচ শব্দ টের পাচ্ছিলাম। এসব ভাবতে ভাবতেই দেখি আমার অফিস কক্ষের দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের হিউম্যান রিসোর্স বিভাগের প্রধান ক্রিস্টি ফস্টার। ক্রিস্টিকে দেখে আমার আত্মায় পানি শুকিয়ে যাওয়ার অবস্থা। ক্রিস্টিতো না, যেন সাক্ষাৎ যমদূত! কিন্তু এখানে করপোরেট জগতে যা হয়, ক্রিস্টি আমাকে দেখে এমন ভান করল যেন কিছুই ঘটেনি। ‘কী খবর সাঈদ? কেমন চলছে সব? তোমাকে হ্যালো বলতেই এলাম।’ আমিও মুখে হাসি ফুটিয়ে ক্রিস্টিকে একটা চেয়ার এগিয়ে বসতে বললাম। কিন্তু ক্রিস্টির কাজের অনেক তাড়া। এ কথা সে কথার পর টুক করে আসল কথায় এল। ‘যদি সম্ভব হয় আজ দুপুর ২টার সময় আমার অফিসে একটু এসো।’ বলেই বাতাসে একরাশ হাসি ছড়িয়ে সে আবার দ্রুত মিলিয়ে গেল। আমি বিষয়টি আমার বস কেরি ব্র্যাডিকে দ্রুত জানানোর সিদ্ধান্ত নিই। কেরি সব শুনে এমন একটা ভাব করল—যেন কিছুই হয়নি। ‘যাও, দেখো কি বলে। আমাকে জানিও। যাই ঘটুক, আমাকে জানিও। কেমন?’ আমি কেরির কথায় কেন জানি খুব আশ্বস্ত হলাম। যাক গুরুতর হয়তো কিছু হয়নি।
দুপুর দুটা বাজতে দশ মিনিট বাকি। আমার অফিস থেকে হিউম্যান রিসোর্স অর্থাৎ ক্রিস্টি ফস্টরের অফিসে যেতে বড়জোর সময় লাগবে পাঁচ মিনিট। ঠিক পাঁচ মিনিট আগেই তার অফিসের দরজার সামনে এসে পৌঁছাই। সেখানে জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখতে পেলাম, শুধু হিউম্যান রিসোর্স বিভাগের প্রধান নয়, তার পাশের চেয়ারে বসে আছে আমাদের কোম্পানির সিইও ফ্রেড ডিভিটো, আমার বস কেরি ব্রাডি ও হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা স্কট ওপেনহাইম। অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, কেরিকে বেশ হাসিখুশি মনে হচ্ছিল এবং কোনো একটা বিষয়ে কথা বলতে বলতে চির শত্রু ফ্রেডের গায়ে ঢলে পড়ছিলেন। বেশ বুঝতে পারলাম আমিই এই নিরীহ বাদামি চামড়াই হয়তো শেষ পর্যন্ত এই ষড়যন্ত্রের শিকার। মনে মনে ভাবছিলাম, বাংলায় সেই জনপ্রিয় প্রবাদটার কথা। ‘রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলোখাগড়ার প্রাণ যায়।’ শেষ পর্যন্ত আমার কপালে বুঝি তাই ঘটল। আমি কাঁপা কাঁপা হাতে ক্রিস্টি ফস্টারের অফিসের দরজাটা খুললাম।