পোশাক পরুন ঋতুর সঙ্গে মানিয়ে

মডেল: বিউটি দাস
মডেল: বিউটি দাস

কনকনে শীতের দেশ আমেরিকা। বছরের বেশির ভাগ সময় ঠান্ডা বাতাস আর বরফে ঢেকে থাকে দেশটি। শীতের আধিপত্যকে জয় করে মাত্র কয়েক মাসের জন্য আসে গ্রীষ্মকাল। প্রান্তরের পর প্রান্তর সেজে উঠে প্রকৃতির অপরূপ সাজে, সবুজ পত্র পল্লবে, ফুলে-ফলে। সবুজ ঘাস যেন কার্পেটের মতো বুক পেতে দেয় প্রকৃতির শোভাবর্ধনে। প্রকৃতির সঙ্গে মিল রেখে এই দেশে বসবাসরত মানুষ প্রজাতিও মেতে উঠে প্রাণের উচ্ছ্বাসে, বর্ণিল সাজে।
বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরের সর্বত্র বাংলাদেশিদের বসবাস চোখে পড়ার মতো, দিনদিন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েই চলেছে। পৃথিবী নামক গ্রহের ভিন্ন গোলার্ধে বসবাস করলেও প্রাণের টানে বাঙালি বহন করে বেড়ায় তাঁদের নিজস্ব ঐতিহ্যের পোশাকপরিচ্ছদ। স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে দেশীয় পোশাকপরিচ্ছদে।কথায় বলে, আগে দর্শনদারি, পরে গুণ বিচারি। পোশাক কথা বলে। প্রথম সাক্ষাতেই একজন মানুষের রুচির পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর পোশাকে। পোশাক হচ্ছে মানুষের ব্যক্তিসত্তার বহিঃপ্রকাশ। বর্তমান আকাশ সংস্কৃতির যুগে দেশে-বিদেশে পোশাকের ফ্যাশন নিয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। সামাজিক অবস্থানের খাতিরে সবকিছুর সঙ্গে পোশাক সদা পরিবর্তনশীল। স্থান-কাল-পাত্র ভেদে বয়সের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যখন যাকে যে পরিবেশে, যে পোশাকে মানায়, তেমনটি পরিধান করা উচিত। 

মডেল: বিউটি দাস
মডেল: বিউটি দাস

নিউইয়র্ক শহরে এখন গ্রীষ্মকালীন ছুটি চলছে। চারদিকে তাপমাত্রার দাবদাহ বিরাজ করলেও এই ছুটিতে মানুষজন ঘরে বসে নেই। উৎসব মুখর বাঙালি জাতি পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে সপ্তাহ শেষে দল বেঁধে বেরিয়ে পড়ে পিকনিকে, সমুদ্র সৈকতে। যান্ত্রিক কোলাহল ফেলে প্রকৃতির কোল ঘেঁষে বেড়াতে বেরিয়ে পড়ে দূরের কোন জন কোলাহলহীন নীরব পরিবেশে। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড উত্তাপকে মাথায় রেখে পোশাক নির্বাচনে এই সময়টাতে যত্নশীল হওয়া ভীষণ জরুরি।
সকালে উঠে পুরো দিনের জন্য যাঁরা বেরিয়ে পড়েন পিকনিকের উদ্দেশ্যে, তাঁদের পরার জন্য দরকার সহজ আরামদায়ক সুতির পোশাক। সেটি হতে পারে সালোয়ার-কামিজ, শার্ট সঙ্গে লুজ পায়জামা, ডিভাইডার, টি-শার্টসহ স্কার্ট। বাচ্চাদের স্বাচ্ছন্দ্য জোগাতে পারে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট, সঙ্গে সুতি গেঞ্জি। প্রতিটি মানুষের পোশাক পরিধানে আলাদা স্টাইল থাকলেই কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবস্থানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পোশাক পরতে হয়। শাড়ি পরে কিংবা ফরমাল পোশাকে সৈকতে যাওয়া দৃষ্টিকটু দেখায়। পানিতে নামার জন্য ছিমছাম পরিচ্ছন্ন টি-শার্ট এবং পছন্দ মতো পায়জামা নিঃসন্দেহে একটি আরামদায়ক পোশাক হতে পারে এই গ্রীষ্মের সবটুকু আনন্দ নিংড়ে অনুভব করার জন্য।

মডেল: বিউটি দাস
মডেল: বিউটি দাস

শিশুদের জন্যও স্বাভাবিক নান্দনিক ঢিলেঢালা পোশাক সমুদ্র সৈকতে তাদের আনন্দকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। সালোয়ার-কামিজ, শাড়ি পৃথিবীর সুন্দরতম পোশাকগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই পোশাকগুলো আমাদের জাতীয় পোশাক হিসেবে বিবেচিত হলেও দূরে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার সময় যে, যে ধরনের পোশাক পরতে অভ্যস্ত, সে ধরনের পোশাক সঙ্গে নেওয়াটাই শ্রেয়। দিন শেষে শ্রান্ত, ক্লান্ত শরীরে যেন মনের মতো করে আরামে বিশ্রাম নেওয়া যায়। তাপমাত্রার বিষয়টা মাথায় রেখে সকাল, দুপুর, রাতে পোশাক শ্রেণিবিন্যাসের সঙ্গে পোশাকের যথাযথ রংও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে নির্বাচন করতে হয়। গ্রীষ্মকালীন এই সময়ে বিয়ে-শাদি কিংবা রাতের যেকোনো উৎসবের জন্য মেয়েরা রংচঙে শাড়ি এবং ছেলেরা ফরমাল ড্রেসের পরিবর্তে পায়জামা, পাঞ্জাবি পরতে পারে। বছরের বাকি সময়ে শীতের তীব্রতায় ইচ্ছা থাকলেও এমন পোশাক পরা হয়ে উঠে না।
মানুষ কোন পরিবেশে কীভাবে কোন পোশাকে নিজেকে উপস্থাপন করবে—তা নির্ভর করে নিজস্ব অভিরুচির ওপর। মানুষের আভিজাত্যের প্রকাশ পায় তার পোশাকে। দৈনন্দিন জীবনে পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে পোশাক নির্বাচনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। শালীনতার সঙ্গে যেকোনো পোশাকেই মানুষ নিজেকে পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ করতে পারে। নিউইয়র্ক শহরের মাল্টিকালার পরিবেশে পোশাক নির্বাচনে বাধ্যবাধকতা না থাকায় প্রতিটি মানুষ নিজের মতো করে পোশাক-পরিধানের সব সুযোগ-সুবিধা পায়। পোশাক মানেই তনু মন জুড়ে নির্মল প্রশান্তি। রুচিসম্মত সহজ-সরল পোশাক মানুষকে প্রভাবিত করে। আশা করি, পশ্চিমা এই দেশে জন্ম, বেড়ে ওঠা আমাদের সন্তানেরাও সামনের দিনগুলোতে দেশি পোশাক পরিধানে আগ্রহী হবে এবং বয়ে নিয়ে যাবে যেকোনো উৎসব মুখর পরিবেশে। সবার প্রবাস জীবনের গ্রীষ্মকালীন ছুটির অবসরটুকু ভরে থাকুক আনন্দের সব রঙে।