কোরবানির মাংসের যত স্বাদ

কয়েক দিন পরেই আসছে খুশির ঈদুল আজহা। আর এই ঈদে সামর্থ্য অনুযায়ী মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ গরু, খাসি বা উট কোরবানি দিয়ে থাকেন। ঈদের আগে এই কোরবানির মাংসের মজাদার কিছু রান্নার রেসিফি দিয়েছেন শেলী জামান খান 

খাসির কোর্মা

উপকরণ: খাসির মাংস এক কেজি, আদা বাটা এক টেবিল-চামচ, দারুচিনি বড় চার টুকরা, তেজপাতা দুটি, লবণ দুই চা-চামচ, ঘি আধা কাপ, কাঁচা মরিচ আটটি, কেওড়া দুই টেবিল-চামচ, তরল দুধ দুই টেবিল-চামচ, পেঁয়াজবাটা সিকি কাপ, রসুন বাটা দুই চা-চামচ, এলাচি চারটি, টক দই আধা কাপ, চিনি চার চা-চামচ, দেশি পেঁয়াজকুচি আধ কাপ, লেবুর রস এক টেবিল-চামচ, জাফরান আধা চা-চামচ (দুই টেবিল-চামচ তরল দুধে ভিজিয়ে ঢেকে রাখুন)।

প্রণালি: মাংস কেটে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। সব বাটা মসলা, গরম মসলা, টক দই, সিকি কাপ ঘি ও লবণ দিয়ে মাংসগুলো মেখে কিছুক্ষণ মেরিনেট হওয়ার জন্য ঘরের তাপমাত্রায় বাইরে রেখে দিন। মেরিনেট করে কিছু সময় রেখে দিলে সেই মাংস স্বাদ ও গন্ধে নতুন এক মাত্রা পায়। তেল-মসলা মাংসে ঢোকার সময় পায়। আধা ঘণ্টা পর মাংসের হাঁড়িটি ঢাকনাসহ মাঝারি আঁচে চুলায় বসিয়ে দিন। ৫/৭ মিনিট পর মাংস থেকে পানি বের হতে শুরু করবে। তখন ঢাকনা খুলে মাংস ওপর নিচ করে নেড়ে দিন। আবার ঢেকে রাখুন। সেদ্ধ না হলে একটু গরম পানি দিতে পারেন। সেদ্ধ হয়ে এলে পানি দেওয়ার কোনো দরকার নেই।
ঝোল অর্ধেক টেনে গেলে কেওড়া ও কাঁচা মরিচ দিয়ে আবার হালকা নেড়ে ঢেকে দিন। ১৫-২০ মিনিট পর পাশের চুলায় বাকি ঘি গরম করে পেঁয়াজকুচি সোনালি রং করে ভেজে মাংসের হাঁড়িতে দিয়ে বাগার দিন। তারপর চিনি দিয়ে নেড়ে ঢেকে দিন। ৫ মিনিট পর ঢাকনা খুলে দুধে ভেজানো জাফরান ওপর থেকে ছিটিয়ে আরও পাঁচ মিনিট ঢেকে রাখুন। তারপর ঢাকনা খুলে লেবুর রস দিয়ে হালকা নেড়ে আঁচ একেবারে কমিয়ে দিন। হাঁড়িটি গরম তাওয়ার ওপর ঢেকে প্রায় ২০ মিনিট থেকে আধা ঘণ্টার মতো দমে রাখুন। যখন কোর্মা মাখা মাখা হয়ে বাদামি রং হবে এবং মসলা থেকে তেল ছাড়া শুরু করবে, তখন নামিয়ে পরিবেশন করুন।

ঐতিহ্যবাহী কালা ভুনার রেসিপি

উপকরণ: দুই কেজি হাড়সহ গরুর মাংস, মরিচ গুঁড়া দুই চামচ বা তার বেশি (রুচি মত, তবে একটু ঝাল ঝাল হলেই মজা বেশি), হলুদ গুঁড়া হাফ চা চামচ, জিরা গুঁড়া এক চা চামচ (১/২ চা চামচ শুরুতে আর ১/২ চা চামচ নামানোর আগে), ধনিয়া গুঁড়া দুই টেবিল চামচ, এক টেবিল চামচ পেঁয়াজ বাটা, দুই কাপ কিউব করে পেঁয়াজ কাটা, এক কাপ বেরেস্তা করে পেঁয়াজ ভাজা, এক টেবিল চামচ রসুন বাটা, এক টেবিল চামচ আদা বাটা, গরম মসলা (কয়েকটা দারুচিনি, কয়েকটা সাদা এলাচি), কালো এলাচি তিনটা, তেজপাতা ৩/৪টি, গোলমরিচ আস্ত ১ চা চামচ, গুঁড়া হাফ চা চামচ, জায়ফল গুঁড়ো, দুই টুকরো জৈত্রিকগুঁড়া, লবঙ্গ ৫/৬টি, কয়েকটা কাঁচা মরিচ, আস্ত শুকনা মরিচ ৩/৪টি, আস্ত খোসা ছাড়ানো রসুনের কোয়া ১০/১২টি, গরম মসলার গুঁড়া ১ চা চামচ, পরিমাণ মত লবণ, তেল এক কাপ শুরুতে বেরেস্তা ভাজার জন্য। এখানে সয়াবিন বা অন্য তেলও ব্যবহার করা যায়। আর হাফ কাপ সরিষার তেল বাগারের জন্য, টক দই দুই টেবিল চামচ, পোস্ত বাটা এক টেবিল চামচ। বাগারের জন্য সর্ষের তেল হাফ কাপ, পেঁয়াজ কুঁচি ১ কাপ, রসুন কুচি এক টেবিল চামচ, আদা কুচি এক চা চামচ।

প্রণালি: কালা ভুনা করতে গরুর মাংসের সব অংশ মিশিয়ে হাড়সহ ২ কেজি মাংস নেবেন। মাংস থেকে পানি ঝরিয়ে নিয়ে কিয়ুব করে কাটা পেঁয়াজ, পেঁয়াজ বাটা, পেঁয়াজের বেরেস্তা, বেরেস্তা ভাজার তেল, গরম মসলা, লবণ, টকদই, কাঁচামরিচ, লালমরিচ গুঁড়া, হলুদ গুঁড়া, ধনে গুঁড়া, গরম মসলা, আদা-রসুন বাটা, পোস্ত বাটা সব মিশিয়ে মাংসের ওপর ছড়িয়ে দিয়ে দিন। এই মেরিনেট মাখানো মাংস এক ঘণ্টার জন্য বাইরেই রেখে দিন। এবার মাখানো মাংসকে চুলায় বসিয়ে দিন। পুরো জ্বালে ঢাকনা দিয়ে প্রথম পাঁচ মিনিট ঢাকা দিয়ে রান্না করুন। তারপর ঢাকনা খুলে ভালো করে ওপর নিচ করে নেড়ে দিন। কিছুক্ষণের মাঝেই মাংস থেকে পানি বের হয়ে আসবে। আলাদা করে পানি দেওয়ার দরকার নেই। কয়েকবার মাংস খুব ভালো করে নেড়ে দিন। মাংস কষিয়ে পানি বের হবে আর এই পানিতে মাংস সিদ্ধ হয়ে যাবে। আধা ঘণ্টা পর আস্তে আস্তে পানি টানতে শুরু করবে। চুলার জ্বাল একই থাকবে। চাইলে এই কাজটা প্রেশার কুকারেও করতে পারেন। মাংস শুকিয়ে তেল ওপরে উঠে এলে এবার চুলার আঁচ কম করে দিতে হবে। একে একে জিরাগুঁড়া, গরম মসলার গুঁড়া, রাঁধুনির গুঁড়া, গোল মরিচের গুঁড়া, জায়ফল গুঁড়া, জৈত্রী গুঁড়া হাফ চা চামচ করে দিয়ে নেড়ে দিন। এভাবে কালাভুনা হতে ঘণ্টাখানেক লাগতে পারে। একটা ফ্রাইপ্যানে এবার সর্ষের তেল গরম করে এক কাপ কুচানো পেঁয়াজ দিন। পেঁয়াজ ভাঁজতে ভাঁজতে একে একে রসুন কুচি, আদা কুচি দিয়ে দিন। তারপর শুকনো মরিচ আস্ত দিন। পেঁয়াজ সোনালি রং হয়ে এলে মাংসের হাঁড়ি থেকে দুচামচ মাংস তুলে তা বাগারের ফ্রাইপ্যানে দিয়ে একটু নেড়ে ঢেকে দিন। দুই মিনিট পর এই বাগার মাংসের হাঁড়িতে ঢেলে দিন। ভালো করে নেড়ে আবার ঢেকে দিন। এভাবে পাঁচ মিনিট রাখার পর বাগারের সুঘ্রাণ সব মাংসের সঙ্গে মিশে যাবে। এবার প্রায় এক কাপ পরিমাণ কিউব করে কাটা কাঁচা পেঁয়াজ ও কাটা কাঁচা মরিচ দিন। মাংস আর ঢাকার দরকার নেই। বারবার নাড়তে থাকুন। মাংসের রং ধীরে ধীরে আরও কালো হতে থাকবে। এভাবে কষাতে কষাতে মাংস কালো কালো হয়ে আসবে এবং তেল ছেড়ে দেবে। এমনভাবে কষাবেন যেন মাংসের মসলা শুকিয়ে তেলের ওপরে ভেসে ওঠে। ব্যাস, তৈরি হয়ে গেল ঘরেই মজাদার কালো ভুনা।

গরুর মাংসের ‘হাঁড়ি কাবাব’

উপকরণ: হাড্ডি ছাড়া গরুর মাংস পাতলা স্লাইস করে কাটা ৮০০ গ্রাম, ৫ টেবিল চামচ সরিষার তেল, এক চা চামচ জিরা, লবঙ্গ ৭টি, দারুচিনি ৫টি এক ইঞ্চি পরিমাণ সাইজের, জয়ত্রী ও জয়ফল গুঁড়া সামান্য পরিমাণ, হাফ কাপ পেঁয়াজ কুঁচি, রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ, আদা বাটা দেড় টেবিল চামচ, সরিষা বাটা ১ টেবিল চামচ, বাদাম বাটা ১ চা চামচ, টক দই ৬ টেবিল চামচ, হলুদ ও মরিচ গুঁড়া ১ টেবিল চামচ করে, সিরকা ১ টেবিল চামচ পরিমাণ, লবণ পরিমাণ মত, তেল ও পানি পরিমাণ মত নিয়ে নিন।

রান্নার প্রণালি: প্রথমে ফ্রাইপ্যানে সামান্য সরিষার তেল নিয়ে জিরা, লবঙ্গ, দারুচিনি, এলাচি, জয়ত্রী ও জয়ফল ভেজে নিয়ে উঠিয়ে বেটে পেস্ট করে নিন। এবার ফ্রাইপ্যানে পেঁয়াজ কুঁচি ভেজে আলাদা পেস্ট করে রাখুন।
এবার একটি পাত্রে পরিমাণমতো তেল নিয়ে গরম হতে দিন। গরম তেলে আদা, রসুন, সরিষা ও বাদাম বাটা পেস্টের সঙ্গে টক দই, হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া ও পরিমাণ মত লবণ দিয়ে ভাজুন। তেল ওপরে উঠে এলে স্লাইস করে কেটে রাখা মাংস দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে সিরকাটুকু দিয়ে ঢেকে দিন আধা ঘণ্টার জন্য। এবার চুলার আঁচ কমিয়ে রাখুন আর মাঝেমাঝে নেড়ে দিন। মাংস নরম হয়ে এলে জিরা, লবঙ্গ, দারুচিনি, এলাচি, জয়ত্রী ও জয়ফল বেটে পেস্ট করে রাখা পেস্টটুকু দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
ঝোল শুকানো পর্যন্ত হালকা আঁচে আরও কিছুক্ষণ রাখুন। তারপর ভাজা পেঁয়াজ বাটা দিন। ভালো করে মিশিয়ে কম আঁচে আরও দশ মিনিটের মতো জ্বাল দিন। ব্যস তৈরি সুস্বাদু ‘হাঁড়ি কাবাব’।

খাসির রেজালা
উপকরণ: খাসির মাংস ১ কেজি, টক দই ১ কাপ, পেঁয়াজ বেরেস্তা ১ কাপ, ঘি ১/৪ কাপ, তেল ১/৪ কাপ, পেঁয়াজ কুঁচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণ মত, আদা ও রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, হলুদ ১ চা চামচ, মরিচগুঁড়া ২ চা চামচ, কাশ্মীরি মরিচের গুঁড়া ১ চা চামচ, বাদাম বাটা ১/৪ কাপ, পোস্তদানা বাটা ২ টেবিল চামচ, জিরা বাটা ১ চা চামচ, এলাচ-দারুচিনি বাটা আধা চা চামচ, জয়ফল-জয়ত্রী বাটা আধা চা চামচ, আধ কাপ দুধ, আধ কাপ পানি, আধা চা চামচ কেওড়া জল, কাঁচামরিচ ৪-৫টি, আলুবোখারা দুটি, চিনি স্বাদমতো।

প্রণালি: টক দই ও অর্ধেকটা বেরেস্তা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। মিশ্রণটি খাসির মাংসে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবার কড়াইয়ে ঘি ও তেল ঢালুন। পেঁয়াজ ঢেলে দিন। হালকা লালচে রং ধারণ করা পর্যন্ত ভাঁজতে থাকুন। লবণ ও আদা-রসুন বাটা দিয়ে নাড়ুন। হলুদ ও মরিচের গুঁড়া দিন। এবার জিরা, বাদাম, পোস্ত বাটা দিয়ে নাড়ুন। সবশেষে জয়ফল-জয়ত্রী বাটা ও এলাচ-দারুচিনি বাটা দিয়ে মসলা কষাতে থাকুন। এরপর মাখিয়ে রাখা মাংস ঢেলে দিন। ভালোভাবে নাড়তে থাকুন। কষানোর পর দুধ ও পানি মিশিয়ে ঢেলে দিন। চুলার আঁচ একেবারে কমিয়ে ঢেকে রাখুন ২০ মিনিট। এরপর কেওড়া জল দিন। সেই সঙ্গে কাঁচামরিচ ও আলুবোখারা দিন। বাকি বেরেস্তার অর্ধেকটি হাত দিয়ে ভেঙে দিয়ে দিন। আবারও নাড়ুন। এবার ঢেকে দিন। পাঁচ মিনিট পর ঢাকনা খুলুন। তেল ওপরে উঠে এলে চিনি ছড়িয়ে দিন। একবার নেড়ে নামিয়ে নিন।