সুইস তরুণী আর দেশহীন মানুষ

সুইস এয়ারের সাফ-সুতরো বিজনেস ক্লাসেও একটি বাংলা পল্লিগীতির সুর আমার মাথার ভেতর ভন্‌-ভন্‌ করছিল। হেমাঙ্গ বিশ্বাসের উদাত্ত কণ্ঠ ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল হাজার হাজার মাইল দূরে কোথাও, আমার শিকড়ের কাছে—
‘হবিগঞ্জের জালালি কইতর-সুনামগঞ্জের কুড়া
সুরমা নদীর গাঙচিল আমি শূন্যে দিলাম উড়া...
শূন্যে দিলাম উড়ারে ভাই যাইতে চান্দের চর,
ডানা ভাইঙ্গা পড়লাম আমি কইলকাত্তার ওপর...’

গণমানুষের শিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাস (জন্ম: ১৪ জানুয়ারি ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দ, সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার মিরাশি গ্রামে, মৃত্যু: ২২ নভেম্বর ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দ) স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য কলকাতায় চলে যান ১৯৬১ সালে। কিন্তু নিজভূমি হবিগঞ্জের জন্য তাঁর প্রাণ কেঁদেছে আমৃত্যু। কমিউনিস্ট ও স্বদেশি আন্দোলনের ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গানের ‘চান্দের চর’ কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতীক।

আমি কেনিয়া (নাইরোবি) থেকে সুইজারল্যান্ড যাচ্ছি। সারা রাত উড়ে ভোরবেলা জুরিখ পৌঁছাব। তারপর কানেকটিং ফ্লাইটে জেনেভা। এখনো উড়াল দিইনি। যাত্রীরা উঠছে। জুতা মোজা খুলে শোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি স্বর্ণকেশী এক তরুণী আমার পাশের আসন লক্ষ্য করে এগিয়ে আসছে। দীর্ঘ ভ্রমণের চিন্তায় আমার দেহ-মনে যে ক্লান্তি জমেছিল, মেয়েটার মিষ্টি হাসিতে তা নিমেষে দূর হয়ে গেল। ঘুমানোর সিদ্ধান্ত পাল্টালাম; ভাবলাম, ক্ষুদ্র জীবনটা ঘুমিয়ে নষ্ট করলে পরকালে কী জবাব দেব!

জেনেভায় বছর জুড়ে লাখ লাখ পর্যটকের সমাগম হয়। সে শহরে জাতিসংঘের অন্যতম বৃহত্তম অফিস অবস্থিত। বিদেশি প্রতিনিধিরা বিশাল বিশাল মিলনায়তন মাতিয়ে রাখেন সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামে। উপরন্তু, আমি যখন যাচ্ছি তখন আইএলওর সম্মেলন চলছে। এসব কারণে জেনেভা এখন ভীষণ ব্যস্ত, গমগম করছে মানুষের পদভারে। ছোটবড় হোটেল সব উপচে পড়ছে সারা বিশ্ব থেকে আসা নানা বয়সী মানুষ আর তাদের সঙ্গে আসা তল্পিতল্পায়। সে কারণেই নাইরোবিতে বসে টানা এক সপ্তাহ ধরে ইন্টারনেটে খুঁজেও কোনো হোটেলে রুম পাইনি। জেনেভায় হোটেল না পেয়ে মরিয়া হয়ে খুঁজেছি সুইজারল্যান্ডের সীমান্ত-ঘেঁষা ফ্রান্সের শহর ফেখ্‌নি ভলতেখ্‌-এ (Ferney Voltaire) কোনো হোটেল খালি আছে কি-না। কিন্তু, বিধি বাম! নিউইয়র্ক ছাড়ার আগেই আমাকে কেউ কেউ সতর্ক করেছিলেন, এক মাস আগে বুকিং না দিলে জেনেভায় হোটেল রুম পাবে না। তখন গুরুত্ব দিইনি। যার দরুন নাইরোবি থেকে যখন উড়োজাহাজে চড়লাম তখন একেবারে ঠায়-ঠিকানাহীন, উদ্দেশ্যবিহীন এক মানুষ আমি! জানি না কোথায় যাচ্ছি। শুধু জানি, যেতে হবে। যখন সদ্য কলেজে উঠেছি, একবার ট্রেনে করে ঢাকায় ফিরছিলাম। ট্রেনটা পথে খুব দেরি করেছিল, তাই ঢাকায় পৌঁছাতে অনেক রাত হয়ে যায়। সে রাতে কমলাপুর স্টেশন থেকে বের হয়ে আমার মনে একটা শূন্য অনুভূতি হয়েছিল, যা আশপাশের ফুটপাতে যারা ঘুমাচ্ছিল তাদের চেয়ে কোনো অংশে কম ছিল না। আমি গ্রামের মানুষ, ঢাকাতে অভিবাসী। ফাঁকা স্টেশনের বাইরে ব্যাগ হাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম, আমি এখন কোথায় যাব? এত রাতে কার বাসার কলিং বেল চাপলে তিনি বিরক্ত হবেন না! আজ আবার অনেকটা একইরকম অনুভূতি হচ্ছে। জেনেভা প্রবাসী সুহৃদ আসলাম পারভেজ অবশ্য আশ্বস্ত করেছেন, আসেন দেখা যাবে। মনের ভেতর আমার এই এতটুকুই জোর। তিনি জেনেভা বিমানবন্দরে আমাকে নিতে আসবেন।

তরুণীর সঙ্গে আলাপ জমে উঠতে বেশি সময় লাগেনি। সে ভীষণ হাসিখুশি। ২৬-২৭ বছর বয়স হবে। মেয়েদের বয়স জিজ্ঞেস করা অভদ্রতা, কিন্তু আন্দাজ করতে দোষ কী! প্রাথমিক কথাবার্তায় পাওয়া তথ্যগুলো নিম্নরূপ
বাড়ি?
-সুইস নাগরিক। জুরিখের মেয়ে। সেখানেই জন্ম আর বেড়ে ওঠা। সেখানেই বসবাস।
লেখাপড়া?
-ফার্মাসিস্ট, প্লাস এমবিএ
পেশা?
-জুরিখে বিশ্বখ্যাত ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি রোশ ফার্মাসিউটিক্যালসে বেশ উচ্চ পদে চাকরি করেন। নাইরোবিতে এসেছিল দক্ষিণ-পূর্ব ও মধ্য আফ্রিকায় বাজার সম্প্রসারণ বিষয়ক কোনো উচ্চ পর্যায়ের ওয়ার্কিং গ্রুপের মিটিংয়ে যোগ দিতে। তারপর জ্যেষ্ঠ নির্বাহীদের জন্য আয়োজিত একটা প্রশিক্ষণ কর্মসূচিও পরিচালনা করেছেন।
নাম?
-স্যান্‌ঢিয়া
-বুঝলাম না! কী নাম?
-স্যান্‌ঢিয়া
-সরি! মানে, স্যান্ডি? (গত বছরের ভয়াবহ স্যান্ডি ঝড়ের কথা মনে পড়ল আমার)
-না, না। স্যান্‌ঢিয়া
উপায়ান্তর না দেখে এবার প্রসঙ্গ পাল্টালাম, যদিও তার অদ্ভুত নামটাই আমার মাথায় ঘুরছিল।
-আচ্ছা, তুমি নাইরোবিতে ‘নিয়ামা-চোয়ামা’ খেয়েছ?
-হ্যাঁ। কিন্তু, আমার ভালো লাগেনি।
-আমারও ভালো লাগেনি।

‘নিয়ামা-চোয়ামা’ কেনিয়ার ঐতিহ্যবাহী খাবার। অধুনিক ‘বারবি-কিউ’। কিন্তু, এর চেয়ে নির্ভেজাল বারবি-কিউ আপনি খাননি কোনো দিন। নাইরোবিতে ‘নিয়ামা-চোয়ামার বেশ কিছু নামি রেস্তোরাঁ আছে। সেখানে জবাই করা প্রাণী ঝোলানো থাকে। কাস্টমার এসে সেই প্রাণীর পছন্দের অংশ দেখিয়ে দেয়। রেস্তোরাঁর কর্মীরা সেই অংশটাকে আগুনে ঝলসে পরিবেশন করে। তখন বারবি-কিউর ধোঁয়াটে সৌরভে চারদিক মৌ-মৌ করে! লবণ, টমেটো সস, বাঁধাকপি ইত্যাদি সহযোগে আগুন গরম ‘নিয়ামা-চোয়ামা’ একবার খাওয়া শুরু করলে আর থামা মুশকিল। আমি একাধিকবার বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে গিয়ে খেয়ে এসেছি। তবে, এখন মধ্য আকাশে সেই ভালোলাগার কথা এই মেয়ের কাছে প্রকাশ না করলেও কিছু যাবে আসবে-না! হোয়াট হ্যাপেন্স ইন ভেগাস, স্টেইস ইন ভেগাস!

আমি খুব অমনোযোগী শ্রোতা। মেয়েটি ‘কেনিয়া’ অথবা ‘ওষুধ’ বিষয়ে গুরুগম্ভীর একটা কিছু আপন মনে বর্ণনা করছিল আর আমি আপন মনে অন্য একটা কিছু ভাবছিলাম আর হুঁ-হাঁ করছিলাম। হঠাৎ একরকম চিৎকার করে বললাম, ‘সন্ধ্যা! ইয়েস! তোমার নাম কি সন্ধ্যা? আই মিন, তোমার নামের অর্থ কি ‘ইভিনিং’?’
সে হেসে বলল, ‘হ্যাঁ।’
আমি বিশেষ একটা কিছু আবিষ্কারের আনন্দ আর গৌরব অনুভব করলাম। সবচেয়ে বেশি অনুভব করলাম কৌতূহল। প্রশ্ন করলাম, ‘তুমি সোনালি চুলের সাদা চামড়ার সুইস মেয়ে। তোমার বাবা-মা বাংলা শব্দে মেয়ের নাম রাখলেন কেন?’
-এটা হিন্দি শব্দ
-ওই হলো। হিন্দি আর বাংলার অলমোস্ট একই রুট। সংস্কৃত। তো, তোমার বাবা কি ভারতীয়?
-না। আমার বাবা সুইস।
-মা?
-না। আমার মা সুইস।
-তো? তোমার দাদা?
-আমার দাদা-দাদি দুজনই ব্রিটিশ।

আমি অধৈর্য! মরিয়া হয়ে আমার বাঙালিসূলভ অভদ্রতা আর অনধিকারচর্চা চালিয়ে যেতে লাগলাম। উড়োজাহাজ উড্ডয়নের আগে-পরে সুরা-পানীয়, অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য আর সুইস চকলেটস কখন এসেছে কখন গেছে, খেয়েছি কি খাইনি তা টের পাইনি। আশপাশের অধিকাংশ যাত্রীই আসনকে বিছানায় কনভার্ট করে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়েছে। কিন্তু, আমি নাছোড়বান্দা। আর, আমার কৌতূহলে মেয়েটাও মজা পাচ্ছে মনে হলো। অনুমান করে বললাম, ‘আহ! আচ্ছা, তাহলে মনে হচ্ছে, তোমার বাবা-মা ভারতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শব্দটি ভালো লেগেছিল, তাই মেয়ের নাম রেখেছেন সন্ধ্যা। তাই না?’ সে শান্ত স্বরে বলল, ‘তুমি এভাবে মিলাতে পারবে না। আমি বা আমার বাবা-মা কোনো দিনও ভারতে যাইনি। কিন্তু আমি, আমার বাবা, আমার দাদা আমরা সবাই আসলে ভারতীয়।’

আমার মাথায় তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। বললাম, ‘আমি বুঝলাম না! একবার বলছ সুইস, একবার বলছ ব্রিটিশ। একবার বলছ ভারতীয় না, আবার বলছ ভারতীয়। ব্যাপারটা কী?’
বলল, ‘বলছি।’ তারপর শোনাল চরম রোমাঞ্চকর এক কাহিনি, মানুষের দাসত্বের, সংগ্রামের, হেরে গিয়ে আবার হার না মানার।

তরুণীটি বলতে থাকল, আমার দাদার জন্ম ব্রিটিশ ভারতের গুজরাটে। ব্রিটিশরা তাকে নিতান্ত বালক বয়সে কেনিয়ায় নিয়ে আসে রেল শ্রমিক হিসেবে। তিনি অনেকবার পালিয়ে যেতে চেয়েছেন, কিন্তু সাগর-মহাসাগর পাড়ি দিয়ে হারানো স্বদেশে ফিরে যাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। কেনিয়ায় অন্য ভারতীয় রেল শ্রমিকদের মতো তিনিও দুর্বিষহ কষ্ট সহ্য করেন। তবু, চোখে স্বপ্ন, সুযোগ পেলেই দেশে ফিরে যাবেন। গুজরাটি বলেই হয়তো কঠোর পরিশ্রম ছিল দাদার চরিত্রের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। শত কষ্টের মধ্যেও তিনি মিশনারিদের সাহায্যে লেখাপড়া চালিয়ে যান। তাদের অনুরাগভাজন হতে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন।

এর মধ্যে পৃথিবীব্যাপী বেজে ওঠে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের দামামা। তবুও তিনি দেশে ফিরে যেতে মরিয়া ছিলেন। এক সময় যুদ্ধ থামে, কিন্তু যুদ্ধের পর ভারতে তার পরিবারের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ১৯৪৭ সালে জানতে পারেন ব্রিটিশরা ভারতবর্ষ ত্যাগ করেছে। মাতৃভূমি ভারত স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু সেই মাটি তাঁর জন্য এখন বিদেশ বিভুঁই। গায়ের রং ছাড়া নিজের ভারতীয় পরিচয় প্রতিষ্ঠা করার মতো কোনো কাগজপত্র তাঁর কাছে ছিল না। প্রথমবারের মতো অনুভব করেন, তিনি একজন দেশহীন মানুষ!

ভারতে গেলেও এত বছর পরে সবকিছু আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। এ চিন্তা থেকে কেনিয়াতেই স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়ার কথা একসময় তিনি ভাবতে আরম্ভ করেন। কিন্তু, বিধি বাম। ১৯৬৩ সালে ব্রিটিশ রাজত্ব থেকে বের হয়ে কেনিয়া স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু, স্বাধীন কেনিয়ার জনগণ আমার দাদাসহ অন্য ভারতীয়দের ‘ব্রিটিশ দালাল’ বা ‘বিদেশি’ উপাধি দেয়, তাঁদের কেনিয়ান হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়, বহিষ্কারের দাবি জানায়। জীবনের এতগুলো বছর কেনিয়াতে থেকেও এবার তিনি হয়ে পড়লেন চূড়ান্তভাবে এক ভাগ্যবিড়ম্বিত, দেশহীন, ঠিকানাবিহীন মানুষ!

এ অবস্থায় কেনিয়ায় বাস করা তার মতো ভারতীয়দের জন্য ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি তাহলে কোথায় যাবেন? কোথায় মিলবে ঠাঁই? অবশেষে কোম্পানির প্রচেষ্টায় ব্রিটিশ সরকার ব্রিটেনে বসবাস করার সুযোগ করে দিতে ব্রিটিশ পাসপোর্ট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ব্রিটেনে গিয়ে তিনি নতুন করে জীবন শুরু করেন। এক ব্রিটিশ নারীকে বিয়ে করেন এবং পরের বছর লন্ডনে আমার বাবার জন্ম হয়। তারপরের ইতিহাস খুব সরল। আমার বাবা কলেজে পড়ার সময় তার সঙ্গে আমার মায়ের পরিচয় হয়। আমার মা ছিলেন জুরিখের মেয়ে, জার্মানভাষী খাঁটি সুইস। একটা স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে যোগ দিয়ে তিনি এক গ্রীষ্ম লন্ডনে কাটান, যেখানে আমার বাবার সঙ্গে তার পরিচয় এবং প্রেম হয়। তারা পরের বছর বিয়ে করেন এবং আমার বাবা আমার মায়ের সঙ্গে জুরিখে চলে আসেন। সেখানেই আমার জন্ম।

আমি এতক্ষণ তন্ময় হয়ে সুইস তরুণীর কথা শুনছিলাম। কিন্তু, ভাবছিলাম তার দাদার কথা, ভাগ্যবিড়ম্বিত দেশহীন মানুষটার কথা। বোকার মতো প্রশ্ন করলাম, ‘তোমার দাদা কি বেঁচে আছেন?’
তরুণী বলল, ‘ব্রিটেনে আসার কয়েক বছর পরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমার বাবাকে কিশোর বয়সে রেখে মারা যান। কিন্তু, মরার আগে ছেলেকে বলে গিয়েছিলেন, গুজরাটে গিয়ে যদি কখনো আমার পিতৃভূমিটা খুঁজে বের করতে পার, তবে সেই গ্রামের একটা ছবি আমার কবরের ওপর লাগিয়ে দিয়ো!’

সন্ধ্যার দুচোখে অশ্রু টলমল করছে! আমি আর কথা বাড়ালাম না। শুধু থ হয়ে ভাবছিলাম, হারানো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার স্বপ্নটাকে ক্ষয়িষ্ণু নিশ্বাসের মতো যিনি আমৃত্যু আগলে রেখেছিলেন, তাঁর জীবনটা কেমন জীবন? হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গানটি দেশহারা মানুষের কান্না হয়ে আমার কানে আবারও যন্ত্রণাদায়ক সুরে ভন্‌ভন্‌ করতে লাগল—
‘হাওরের পানি নাইরে হেথায়,
নাইরে তাজা মাছ
বিলের বুকে ডালা মেইলা
নাইরে হিজল গাছ বন্ধু নাইরে তাজা মাছ...
তবু, নিদহারা নগরের পথে
রাইতের দুপুরে,
মরমিয়া ভাটিয়ালি
আমার গলায় জুড়ে তোমরা
আমায় চিন নি?
তোমরা আমায় চিন নি?
তোমরা আমার চিন নি?
ডানা ভাইঙ্গা পড়লাম আমি...’