ইমাজিন কাপে চ্যাম্পিয়ন সামিনের দল

মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সত্য নাদেলা ও  অলিম্পিক স্বর্ণপদকজয়ী ক্লোয়ি কিমের সঙ্গে স্মার্ট আর্ম দলের দুই সদস্য। ছবি: সংগৃহীত
মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সত্য নাদেলা ও অলিম্পিক স্বর্ণপদকজয়ী ক্লোয়ি কিমের সঙ্গে স্মার্ট আর্ম দলের দুই সদস্য। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল। মাইক্রোসফটের প্রধান কার্যালয়। গত ২৩-২৫ জুলাই সেখানে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল তরুণদের প্রযুক্তিগত ভাবনা বাস্তবায়নের প্রতিযোগিতা ইমাজিন কাপের ষোড়শ আসর। চলতি বছরের ইমাজিন কাপে চ্যাম্পিয়ন দল কানাডার ‘স্মার্ট আর্ম’। আর এই রোবট বাহু দিয়ে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সামিন খানের হাতে উঠেছে ইমাজিন কাপের শিরোপা। তাঁর দলের আরেক সদস্য কানাডীয় নাগরিক হেমাল চৌধুরী।
৩১ আগস্ট টরন্টো ফেরেন সামিন। পরদিন টিমহর্টন কফি শপে বসে শোনালেন তাঁর সাফল্যগাথা।

গল্পের শুরু পরিবার থেকেই
আলাপচারিতার শুরুতেই সামিন খান বললেন, ‘আমার বাবা শাহ জুবায়ের খান ও মা গুলশান সাদিয়া—দুজনই আমাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন পড়াশোনায় নিজের ভালো লাগার, আগ্রহের বিষয়টি বেছে নিতে। তাঁরা কখনো আমাকে কিছু চাপিয়ে দেননি। বাবা কম্পিউটার প্রযুক্তি ও সিস্টেম নেটওয়ার্কিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। ছোটবেলায় তাঁর কাছেই আমার হাতেখড়ি। খুব বেশি গেম খেলতাম আর গেম তৈরির বিষয়ে জানতে চেয়ে বেশি বেশি প্রশ্ন করতাম। গণিতে বরাবরই ভালো ছিলাম, যেটি পরে কাজে লেগেছে।’
১৯৯৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কাজীপাড়া থেকে সামিনের বাবা-মা কানাডায় স্থায়ী অভিবাসী হন। ঠিক পরের বছর সামিনের জন্ম। বড় বোন নাবিলা খান পেশায় ব্যারিস্টার, ছোট বোন আরিয়ার হাইস্কুলে পড়ছে।

সামিন খান
সামিন খান



প্রসঙ্গ স্মার্ট আর্ম
সামিন জানালেন, টরন্টো চার্চিল হাইটস স্কুলে গ্রেড-৮ পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন সামিন খান ও হেমাল চৌধুরী। পড়াশোনায় মেধাবী হওয়ায় দুজনেই অন্তর্ভুক্ত ছিলেন স্কুলের গিফটেড চাইল্ড প্রোগ্রামে। সেই থেকে দুজনের জানাশোনা। একটা সময় হেমাল পড়তে গেলেন অন্টারিও ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে কম্পিউটার ও রোবটবিজ্ঞান বিষয়ে আর সামিন বেছে নিলেন ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগ।
চলতি বছরে শুরুর দিকে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যাকাথন ইউএফটি হ্যাকস প্রতিযোগিতায় তাঁদের দুজনের দেখা হয়। সামিন বললেন, ‘প্রযুক্তির সহায়তায় জন্মগতভাবে অঙ্গহীন কিংবা দুর্ঘটনায় হাত হারানো মানুষের অসহায়ত্ব কাটানোর সহজলভ্য সমাধানের এই চিন্তাটি আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। আমি জানতাম, হেমালের রোবটিকস, কম্পিউটার ডিভাইস নিয়ে ভালো দখল আছে। ভাবনাটি বাস্তবায়নের জন্য দুজনে মিলে এগোনোর চিন্তা করি। হেমাল আমার প্রস্তাবে সম্মত হয়—সেই থেকে শুরু। প্রেরণা পেয়েছি বাংলাদেশি গবেষক টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইশতিয়াক আহমেদের কাছ থেকে। সহপাঠীর কাছ থেকে প্রথমে জানতে পাই মাইক্রোসফট কানাডায় ইমাজিন কাপের প্রকল্প জমা চলছে। দুই সপ্তাহে আমরা তৈরি হই।’
২৬ মে কানাডার ভ্যাঙ্কুভার শহরে ইমাজিন কাপের দেশীয় আসরে চূড়ান্ত পর্বের জন্য নির্বাচিত হয় স্মার্ট আর্ম। ইশতিয়াক আহমেদ বললেন, ‘সামিন, হেমাল দুজনই খুব মেধাবী। ইমাজিন কাপ জেতার মতো সক্ষম ছিল ওরা। ওদের প্রকল্পের ভাবনাটিও মানবিক। আমার বিশ্বাস, প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাবে সামিন।’

কেমন হবে স্মার্ট আর্ম
বিশ্ববাজারে কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপন অনেক ব্যয়সাধ্য। স্মার্ট আর্মে সামিনরা চেয়েছেন ব্যক্তির মনের ভাষা যন্ত্র বুঝবে, প্রতিটি আঙুল নিজের মতো করে নাড়াতে পারবেন, স্বাভাবিক মানুষের মতো শক্ত হাতে ধরতে পারবেন।’
সামিন বলেন, ‘হাতের কবজির নিচের অংশ নিয়ে আমরা কাজটা শুরু করেছিলাম। আমরা সফল হয়েছি। সামনে আরও বড় পরিসরে কাজটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আশা করছি, বাণিজ্যিকভাবে ১০০ ডলারের নিচে সরবরাহ করা যাবে।’