বিশ্ব সিলেট সম্মেলন ১-২ সেপ্টেম্বর

বিশ্বের নানা দেশে বসবাসরত সিলেট অঞ্চলের অধিবাসীদের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পেশাগত সাফল্য উদ্‌যাপন করতে বিভিন্ন দেশের পর এবার কানাডায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চতুর্থ বিশ্ব সিলেট সম্মেলন। জালালাবা অ্যাসোসিয়েশন অব কানাডার আয়োজনে ও জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন ঢাকার সহযোগিতায় কানাডার টরন্টো সিটির গ্র্যান্ড প্যালেস কনভেনশন সেন্টারে ১ ও ২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে এ সম্মেলন।

টরন্টোতে অনুষ্ঠিতব্য চতুর্থ বিশ্ব সিলেট সম্মেলন মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক, সিলেটের কৃতি সন্তান জেনারেল ওসমানীর স্মৃতির প্রতি উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ বছর বঙ্গবীর মোহাম্মদ আতাউল গণি (এমএজি) ওসমানীর শততম জন্মবার্ষিকী (জন্ম: ১ সেপ্টেম্বর ১৯১৮)। মূলত সিলেটের ইতিহাস, ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা এবং একই সঙ্গে সিলেটের উন্নয়নে অংশীদার হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এ আয়োজন। এবারের সম্মেলনের স্লোগান ‘সিলেট আমার অহংকার’।
অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। আয়োজকেরা জানান, প্রাচীনকাল থেকে সিলেটি মানুষের আতিথেয়তা ও সহনশীলতা বেশ প্রশংসা পেয়েছে। পাশাপাশি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিবেশে অনেক জ্ঞানী, গুণী, কবি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠেছেন। তদুপরি হজরত শাহজালাল (রা.) ইসলামিক সুফি আদর্শে ভালোবাসা ও সহনশীলতার পরিবেশ এবং সিলেটের সন্তান মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যের প্রভাবে হিন্দুদের মধ্যে বৈষ্ণব ধর্মের মানবিক গুণগুলো প্রসার লাভ করে। সে কারণে সিলেটের বিভিন্ন পল্লী কবির সুরে ও ছন্দে সব ধর্মের মানুষকে একই সুতায় গাঁথে। আজ সিলেট একটি শুধু মানচিত্র নয়, আজ সিলেটের বিশ্বায়ন হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত সিলেটবাসীদের মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বাড়ানোর জন্য বিশ্ব সিলেট সম্মেলন আহ্বান জানাচ্ছে।
জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব টরন্টোর সভাপতি দেবব্রত দে তমাল বলেন, ভারতের দক্ষিণ কলকাতা সিলেটি অ্যাসোসিয়েশন সিলেটি সম্মেলন শুরু করে অভূতপূর্ব এক সাড়া জাগিয়েছে। ঢাকা জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন এই বছর বাংলাদেশের ঢাকায় ও সিলেটে সুন্দরভাবে তার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সিলেট থেকে অনেক দূরে থেকেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যারা সিলেটি ঐতিহ্য ও ভালোবাসাকে জাগিয়ে রেখেছেন, তাঁদের জন্য প্রয়োজন একটা মিলনমেলার। সেটা হবে কানাডার টরন্টোয়। এ সম্মেলনে বাংলাদেশ, ভারত, কানাডা, যুক্তরাজ্য, জাপান, জার্মানি, মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া ও অন্য দেশ থেকে অনেকেই অংশ নেবেন।
সম্মেলনের আয়োজক সংগঠন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব টরন্টো, কানাডার সাধারণ সম্পাদক মাহবুব চৌধুরী রনি বলেন, সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী, সিলেটের কৃতি সন্তান ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল মাল আবদুল মুহিত। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান। বিশেষ অতিথি হয়ে আসছেন, জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, সাবেক উপদেষ্টা এনাম আহমেদ চৌধুরী, ঢাকার জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তোফায়েল সামি, সাবেক সভাপতি একেএ মুবিন, সহসভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, জাতিসংঘে নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত একে আবদুল মোমেন, গ্রিন ডেলটা ইনস্যুরেন্স কোম্পানির উপদেষ্টা নাসির এ চৌধুরী, আরডিএম ইন্টারন্যাশনালের প্রধান উপদেষ্টা ড. আহমেদ আল কবির, পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ হালিম চৌধুরী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ডেইজি সারওয়ার, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমেদ চৌধুরী, বাপার যুক্ত সম্পাদক শরিফ জামিল, মাল্টিপ্ল্যান লি. ঢাকার কর্ণধার ইঞ্জিনিয়ার মুন্সেফ আলী, ইষ্ট-কষ্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানজিল চৌধুরী, গ্রিন ডেলটা ইনস্যুরেন্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা চৌধুরী প্রমুখ।
ভারত থেকে বিশেষ অতিথি হয়ে আসছেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান অমলেন্দু চ্যাটার্জি, কলকাতায় নিযুক্ত সমকাল পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি ও ভারতের প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক যুগশঙ্খের মুখ্য সাংবাদিক রক্তিম দাশ।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিশেষ অতিথি হয়ে আসছেন ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ, ড. ফাতেমা আহমেদ, রানা ফেরদৌস চৌধুরী, জুয়েল চৌধুরী, সালাউদ্দিন আহমেদ, রাজিয়া আহমেদ, আহমেদ মাহমুদুর রেজা চৌধুরী, শাকিল আহমেদ চৌধুরী, ড. কাজী রুশদি আহমেদ, মাসওয়ন এন আর চৌধুরী, টাইম টেলিভিশনের কর্ণধার আবু তাহের, বিশিষ্ট সাংবাদিক মাহবুব আহমেদ, সাংবাদিক ও লেখক শামসাদ হুসাম, কবি কাজী আতিক, কবি তমিজ উদ্দিন লোদী প্রমুখ।
যুক্তরাজ্য থেকে বিশেষ অতিথি হয়ে আসছেন, চ্যানেল এস-এর চেয়ারম্যান আহমেদ উস সামাদ চৌধুরী, সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক এমদাদ চৌধুরী প্রমুখ।
সম্মেলনে থাকবে সংগীত, নৃত্য, আত্মকথা, পরিচিতি, শুভেচ্ছা বিনিময়, প্রজন্মের অনুভূতি, শিকড়ের সন্ধানে, সিলেটী খাবার ও অন্যান্য স্টল। এ ছাড়া থাকবে প্রস্তাবিত বিভিন্ন বাস্তব প্রকল্প; যাতে সিলেট অঞ্চলের ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভাষা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিশেষত্ব সংরক্ষণ করা যায়।
দুদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানে সেমিনারে আলোচ্য বিষয় হিসেবে থাকবে মুক্তিযুদ্ধে সিলেট, ভাষা আন্দোলনে সিলেট, সাংবাদিকতায় সিলেট, শিল্প-সংস্কৃতিতে সিলেট, শিল্প-বাণিজ্যে সিলেট, পর্যটনে সিলেট, সিলেটের নাগরি লিপি, সুফি-দরবেশদের পুণ্যভূমি সিলেট, বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রবাসী সিলেটবাসীর ভূমিকা প্রভৃতি। এসব বিষয়ে আলোচনায় প্রতিষ্ঠিত গবেষক, লেখক, শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও পরিবেশবিদেরা অংশ নেবেন।
আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মণিপুরী নৃত্য, মালজোরা গান, বাউল সংগীত, ধামাইল নাচ, বিয়ের গান, হাসন। আরকুম আর করিমের গান থাকবে সম্মেলনের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে।
বিশ্ব সিলেট সম্মেলনে সংগীত পরিবেশন করতে আসছেন যুক্তরাজ্য থেকে প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী হিমাংশু গোস্বামী, গৌরি চৌধুরী। বাংলাদেশ থেকে আসছেন, আঁখি আলমগীর, টুটুল ও কালা মিয়া। কলকাতা থেকে আসছেন প্রখ্যাত গানের দল দোহারের সদস্যরা। এ ছাড়া কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় শিল্পীরা থাকবেন বিভিন্ন পরিবেশনায়।
স্বাগতিক সংগঠন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেবব্রত দে তমাল জানিয়েছেন, সম্মেলনে সিলেটের ঐতিহাসিক আলী আমজদের ঘড়ির (সিলেটের ল্যান্ডমার্ক হিসেবে পরিচিত) একটি রেপ্লিকা স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া বিশ্ব সিলেট সম্মেলন উপলক্ষে সৈয়দ আফসার আহমেদের সম্পাদনায় একটি স্মরণিকা প্রকাশিত হবে। এ জন্য ইতিমধ্যে কানাডার প্রধানমন্ত্রী ও অন্টারিওর মুখ্যমন্ত্রী তাদের বাণী পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে।