সুদিন ফেরার আশা ক্যাবচালকদের

নিউইয়র্ক নগরীতে উবার, লিফটের মতো প্রযুক্তিনির্ভর ট্যাক্সির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার ফলে কিছুটা স্বস্তি এসেছে ক্যাবচালকদের মধ্যে। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হতে সময় লাগবে বলে মনে করছেন তাঁরা।
নিয়ন্ত্রণ আরোপের ফলে নগরীর ইয়েলো ক্যাবের চাহিদা বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি উবার, লিফটও তাদের চলকদের এখন সমীহ করতে শুরু করেছে।
নগরীতে আগামী এক বছরের জন্য উবার বা অন্য কোনো প্রযুক্তিনির্ভর নতুন গাড়ি নামানোর লাইসেন্স দেওয়া আইন করে বন্ধ করা হয়েছে। আগেই নগরীর ইয়েলো ট্যাক্সির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান ট্যাক্সি ও লিমোজিন কমিশন নতুন করে ইয়েলো ট্যাক্সির মেডেলিয়ন বিক্রি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।

নিউইয়র্কে সংগ্রামী পেশাজীবী হিসেবে উত্থান ঘটেছে ক্যাবচালকদের। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ এ নগরীর অধিকাংশ ক্যাব চালক অভিবাসী। এদের মধ্যে আবার মুসলমানের সংখ্যা বেশি। গত পাঁচ বছরে নিউইয়র্কের ক্যাবচালকেরা মূল্য দিয়েছেন অনেক। ট্যাক্সি অ্যালায়েন্সের মাধ্যমে তাঁরা অর্ধশতাধিক সভা, সমাবেশ করেছেন। পেশাগত ‘সংকটের চাপে জীবন দিয়েছেন’ ছয়জন ক্যাবচালক। শুধু নিজেদের পেশার জন্য লড়াই করে নয়, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মুসলমানদের আমেরিকায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার প্রথম নির্বাহী আদেশ জারি করলে নিউইয়র্কের ক্যাব চালকেরা জে এফ কে বিমানবন্দর থেকে যাত্রী পরিবহনে অনাগ্রহ দেখান। তাঁরা নাগরিক আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য। নিউইয়র্ক নগরীর আইনপ্রণেতারা, এমনকি মেয়র ডি ব্লাজিও ক্যাবচালকদের যৌথ শক্তিকে উপেক্ষা করতে পারেননি। অভিবাসী এ চালকদের ওপর নির্ভরশীল নিউইয়র্কের লাখো মানুষ। নিজেদের ঐক্য আর টানা আন্দোলনের কারণেই সংকট উত্তরণের প্রাথমিক লড়াইয়ে জয়ী হয়েছেন বলে মনে করেন ক্যাবচালকেরা। এ ক্ষেত্রে ট্যাক্সি অ্যালায়েন্সের নেতা ভৈরবী দেশাই বলেছেন, ভাড়া ও ক্যাবচালকদের ন্যূনতম মজুরিতে সমতা এলে নগরীর ক্যাবচালকদের পেশাগত সংকট অনেকটাই লাঘব হবে। যারা এ নগরীর চাকা সচল রাখেন, তাদের অধিকারে ট্যাক্সি অ্যালায়েন্স কোনো আপস করবে না এবং সদা সোচ্চার থাকবে বলে মন্তব্য করেন ভৈরবী দেশাই।
প্রথমবারের মতো ক্যাব চালকদের ন্যূনতম মজুরি ঘণ্টায় ১৭.২২ ডলারের ওপরে নিশ্চিত করার আইন করা হয়েছে। ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করার জন্য আসছে অক্টোবর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত উবার বা অন্য প্রযুক্তি নির্ভর ক্যাবচালকদের অনেকেই ন্যূনতম মজুরি, কর্মঘণ্টা প্রতি ১৭ ডলার আয় করতে পারেন না বলে জানা গেছে। ক্যাব চালক এম হক বলেন, উবার আগে চালকদের প্রতি নানা বৈরী আচরণ করত। নানা ফি আরোপ করে চালকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের নজিরও আছে। এখন ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করতে হলে ক্যাব চালকদের ওপর অন্য মাশুলের চাপ কমাতে হবে।
ইয়েলো ক্যাবচালক বশীর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নিলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তিনি বলেন, ভাড়া আদায়ে সমতা না আসা পর্যন্ত নতুন আইনের ফলাফল দেখা যাবে না। নতুন করে গাড়ি নগরীতে না নামলে পেশায় দীর্ঘদিন থেকে থাকা ক্যাবচালকেরা যাত্রী পাবেন বেশি। এ ক্ষত্রে ধসে পড়া মেডেলিয়নের মূল্যও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
ক্যাবচালক আহমেদ বাবু বলেন, উবারের জন্য অনেক যাত্রী অপেক্ষা করেন। এখন উবার তাদের যাত্রীপ্রতি ভাড়া বাড়াতে বাধ্য হবে নিজদের প্রয়োজনে। এর ফলে সমতা ফিরে আসবে। ফলে যাত্রীরা কম ভাড়ার জন্য উবারের অপেক্ষা না করে নির্ধারিত ভাড়ায় ইয়েলো ক্যাবের যাত্রী হবে। আসছে ছুটির মৌসুমের আগেই ক্যাবচালকেরা তাদের আয়ের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখবেন বলে চালকেরা মনে করছেন।
ট্যাক্সি অ্যালায়েন্সের নেতা ভৈরবী দেশাই বলেছেন, নিউইয়র্কের ক্যাবচালকেরা লড়াই করে জয়ী হয়েছেন। তাদের লড়তে হয়েছে কঠিন সময়ে। নিজেদের কাজ রেখে তাঁরা প্রতিবাদ-বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। হাজার হাজার নির্ভরশীল পরিবার এ আন্দোলনের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এ ত্যাগের ফসল হিসেবেই অর্জিত বিজয়ের জন্য ক্যাবচালক ও তাঁদের পরিবারের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানান।