ব্রঙ্কসে অপরাধ বেশি নজরদারি কম

নিউইয়র্ক নগরে গুরুতর অপরাধের দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে ব্রঙ্কস। কিন্তু ব্রঙ্কসে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন নজরদারি ক্যামেরার সংখ্যা অনেক কম। নিউইয়র্ক নগরীতে ব্রঙ্কসের চেয়ে কম নজরদারি ক্যামেরা রয়েছে শুধু স্ট্যাটেন আইল্যান্ডে।
নিউইয়র্ক নগরীর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিরবচ্ছিন্নভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য ২০০৭ সালে নগরীতে প্রচুরসংখ্যক নজরদারি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। বিভিন্ন অ্যাপার্টমেন্ট ভবন ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বাইরে, পাতালরেল স্টেশনের ভেতরে-বাইরেসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপন করা হয় প্রায় ১৮ হাজার ক্যামেরা। এসব ক্যামেরা আবার পরস্পর সংযুক্ত। এসব ক্যামেরার সঙ্গে আবার যুক্ত করা হয় আইন-শৃঙ্খলা বিভাগের তথ্যভান্ডারকেও। এই পুরো ব্যবস্থাটির মাধ্যমে নিউইয়র্ক নগরীর বিভিন্ন অঞ্চলের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিরবচ্ছিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিউইয়র্ক পুলিশ।
নিউইয়র্ক ডেইলির খবরে বলা হয়, সাবওয়েসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনার বাইরে শুধু নগরীর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য স্থাপন করা হয়েছিল ২ হাজার ৬২৬টি ক্যামেরা। এর মধ্যে মাত্র ৩৮৮টি ক্যামেরা রয়েছে ব্রঙ্কসে, যা মোট স্থাপন করা ক্যামেরার মাত্র ১৫ শতাংশ। কুইন্সে রয়েছে ৭৬৬টি নজরদারি ক্যামেরা। এ ছাড়া ম্যানহাটন, ব্রুকলিন ও স্ট্যাটেন আইল্যান্ডে রয়েছে যথাক্রমে ৬৯০, ৬১৪ ও ১৬৮টি ক্যামেরা। ক্যামেরার সংখ্যার দিক থেকে একমাত্র স্ট্যাটেন আইল্যান্ডের চেয়ে এগিয়ে আছে ব্রঙ্কস। যদিও গুরুতর অপরাধের হার অন্য অঞ্চলগুলোর থেকে ব্রঙ্কসে বেশি।
অপরাধ প্রবণতার দিক থেকে ব্রঙ্কস অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এ অঞ্চলে পুলিশের নজরদারি তুলনামূলক কম। নিউইয়র্ক পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরে ১ জানুয়ারি থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত ব্রঙ্কসে মোট ৬০টি খুন হয়েছে। গোলাগুলিতে আহত হয়েছে ১৬৮ জন। ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৯৮৬টি। এ ছাড়া ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২৪২টি, যা অঞ্চল হিসেবে নগরীতে তৃতীয় সর্বোচ্চ। আর শারীরিক নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে ৩ হাজার ৭৩৪টি। বিপরীতে কুইন্সে একই সময়ের মধ্যে ৩৯টি খুন, ২৪২টি ধর্ষণ, ১০১টি গোলাগুলি, ১ হাজার ৫৯৯টি ডাকাতি ও ২ হাজার ৪১৪টি শারীরিক নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে।
গুরুতর অপরাধের উচ্চহার সত্ত্বেও ব্রঙ্কসে নজরদারি ক্যামেরা কম থাকার কারণ হিসেবে নিউইয়র্ক পুলিশ নিউইয়র্ক ডেইলিকে জানিয়েছে, মূলত ২০০৭ সালে সন্ত্রাসবাদবিরোধী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ম্যানহাটন অঞ্চলে বেশি নজর দেওয়া হয়েছিল। এ কারণে অন্য বরোগুলোতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক ক্যামেরা স্থাপন করা যায়নি। তবে এই অসাম্য দূর করতে দ্রুত গতিতে কাজ করা হচ্ছে। যেসব অঞ্চলে নজরদারি ক্যামেরা কম রয়েছে, সেসব অঞ্চলে এখন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে।
নিউইয়র্ক পুলিশের উপকমিশনার ফিল ওয়ালজাক বলেন, ‘আমরা দ্রুত গতিতে নজরদারি ক্যামেরা স্থাপন করছি, যাতে বরোগুলোর মধ্যে একটি সমতা বিধান করা যায়। পুরো নগরীর নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নয়নে আমাদের বিভাগ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’
ব্রঙ্কসে ক্যামেরার সংখ্যা কম থাকার কারণ হিসেবে পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কোন অঞ্চলে কতগুলো ক্যামেরা বসবে, তা নির্ধারণের ক্ষেত্রে জনসংখ্যাও বিবেচনায় নেওয়া হয়। ব্রঙ্কসের জনসংখ্যা ১৫ লাখ। এদিকে কুইন্স, ব্রুকলিন ও ম্যানহাটনে যথাক্রমে ২৩, ২৬ ও ৩৯ লাখ মানুষের বাস।
তবে ব্রঙ্কসের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় নেতৃত্ব পুলিশ বিভাগের এ যুক্তি মানতে নারাজ। ব্রঙ্কসের কাউন্সিলম্যান রিচি টোরেস নিউইয়র্ক ডেইলিকে বলেন, ‘নগর প্রশাসন যে বাজেট করে, তার বড় অংশটিই চলে যায় ম্যানহাটনে। অন্য বরোগুলো বিশেষত ব্রঙ্কসের ভাগে পড়ে কম।’
এ ক্ষেত্রে বড় সংকট হিসেবে মনে করা হচ্ছে নজরদারি ক্যামেরা বরাদ্দ দেওয়ার পন্থাকে। এটি অনেকটাই নির্দিষ্ট একটি বরোর নির্বাচিত প্রতিনিধি ও ওই বরোর বাজেটের ওপর নির্ভরশীল। কারণ আঞ্চলিক বাজেট থেকেই এই ক্যামেরা কিনে নিতে হয়। আরগাস নামে পরিচিত প্রতিটি নজরদারি ইউনিটে রয়েছে দুটি করে ক্যামেরা, যার দাম ৪০ হাজার ডলার। এই পুরো অর্থটি জোগান দিতে হয় সংশ্লিষ্ট বরোর বাজেট থেকে। পাশাপাশি নিউইয়র্ক পুলিশের স্থানীয় কমান্ডের সঙ্গে মিলে নির্ধারণ করতে হয় ক্যামেরা বসানোর স্থানটি। এই প্রক্রিয়াটিকেই অযৌক্তিক বলছেন ব্রঙ্কস ও কুইন্সের কাউন্সিলম্যান রিচি টোরেস ও ডোনোভান রিচার্ডস। তাঁদের মতে, কোন অঞ্চলে কতগুলো ক্যামেরা বসানো প্রয়োজন, তা নির্ধারণ করা উচিত অপরাধ প্রবণতার ওপর ভিত্তি করে। স্থানীয় কর্মকর্তা বা বাজেট নয় বরং নিরাপত্তার প্রয়োজনে যতগুলো ক্যামেরা দরকার, ততগুলোই বসানো উচিত।
চলতি বছরের শেষ নাগাদ নগরীতে নতুন আড়াই শ আরগাস ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। এর মধ্যে ব্রঙ্কস পাচ্ছে ৫০টি। এ ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে ম্যানহাটন। ম্যানহাটনে বসছে ৭৫টি ইউনিট। কুইন্সে বসবে ৪৭টি, ব্রুকলিনে ৪৬ ও স্ট্যাটেন আইল্যান্ডে ৩২টি ইউনিট। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও বৈষম্য হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ব্রঙ্কসের বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দা আর্জেন্টিনা গার্সিয়া বলেন, ‘এই নগরে আমরা যারা আছি, তারা সবাই একই সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা। কিন্তু তা হচ্ছে না। ম্যানহাটনের বাসিন্দাদের মতো আমাদেরও সমান নিরাপত্তার অধিকার থাকলেও তা পাচ্ছি না আমরা। এখানে অপরাধ বেশি হচ্ছে। অথচ ম্যানহাটনে নজরদারি বেশি। সেখানে ধনী ও ক্ষমতাবানরা থাকে বলেই এমনটা হচ্ছে। এটা অন্যায়।’