দুই প্যানেলের মনোনয়নপত্র দাখিল

নিউইয়র্কে বসবাসরত অভিবাসী বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি ইন্‌কের দ্বিবার্ষিক (২০১৯-২০২০) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২১ অক্টোবর। এরই মধ্যে সোসাইটির কার্যকরী পরিষদের ১৯টি পদে ৪০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দুই প্যানেল থেকে ১৯ জন করে এবং সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আরও দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা থেকে নির্বাচন কমিশনের আয় হয়েছে ৯৪ হাজার ৫০০ ডলার। ইসি ঘোষিত নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী ২৭ আগস্ট সন্ধ্যায় উৎসবমুখর পরিবেশে প্রার্থীরা তাঁদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। 

বাংলাদেশ সোসাইটির আগামী দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে দুই প্যানেল রব-রুহুল ও নয়ন-আলী প্যানেলের বাইরে সভাপতি পদে সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে আবদুল মোমেন সোহেল মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তবে সভাপতি পদের জন্য সোসাইটির সাবেক কর্মকর্তা ওসমান চৌধুরী মনোনয়নপত্র কিনলেও শেষ পর্যন্ত তিনি জমা দেননি।

এর আগে প্রার্থীরা ১৯টি পদের জন্য ৪৩টি মনোনয়নপত্র কেনেন। নয়ন-আলী ও রব-রুহুল প্যানেলের পক্ষ থেকে ২০টি মনোনয়নপত্র কেনা হয়। অন্যদিকে স্বতন্ত্র সভাপতি পদপ্রার্থী জয়নাল আবেদীন এবং ওসমান চৌধুরী একটি করে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী হিসেবে আবদুল মোমেন সোহেল একটি মনোনয়নপত্র কেনেন বলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে জানা যায়। প্রতিটি মনোনয়ন বিক্রি (প্যাকেজ) হয়েছে ৫০০ ডলার করে। ফলে মনোনয়নপত্র বিক্রি করে ইসির মোট আয় হয়েছে আরও ২১ হাজার ৫০০ ডলার।
সোসাইটি সূত্রে জানা গেছে, রব-রুহুল প্যানেল থেকে সভাপতি পদে বৃহত্তর নোয়াখালী অ্যাসোসিয়েশন ইউএসএর সভাপতি আবদুর রব মিয়া এবং সাধারণ সম্পাদক পদে সোসাইটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অন্যদিকে নয়ন-আলী প্যানেল থেকে সভাপতি পদে চট্টগ্রামের মিরসরাই সমিতি ইউএসএর সভাপতি কাজী আশরাফ হোসেন নয়ন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে সোসাইটির বর্তমান কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল গতকাল ৩০ আগস্ট। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে ৪ সেপ্টেম্বর। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২১ অক্টোবর।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাঁদের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কর্মকর্তা আর সদস্যদের নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে সোসাইটি কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার জামাল ইউ আহমেদ নির্বাচন কমিশনের অন্য সদস্যদের সহযোগিতা নিয়ে মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেন। নির্বাচন কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন মোহাম্মদ আবদুল হাকিম, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, রুহুল আমিন সরকার, কায়সার জামান কয়েস ও খোকন মোশারফ।
মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় রব-রুহুল প্যানেলের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশি জনসমাজের নেতৃস্থানীয় আজিমুর রহমান বুরহান, তাজু মিয়া, আবদুল হাসিম হাসনু, আবদুল মান্নান প্রমুখ। অন্যদিকে নয়ন-আলী প্যানেলের নেতৃত্ব দেন কমিউনিটি নেতা আবু নাসের, আলী ইমাম শিকদার, ওয়াসী চৌধুরী, বাবুল চৌধুরী প্রমুখ। মনোনয়নপত্র জমাদানের সময় প্রার্থী, সমর্থক আর কর্মকর্তাদের পদচারনা, হইচই আর ব্যাপক হই-হুল্লোড়ে সোসাইটি কার্যালয় আঙিনা মুখরিত হয়ে উঠে। প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকদের ভিড় সামাল দিতে ইসি সদস্যদের বেশ বেগ পেতে হয়। এর আগে জামাল আহমেদ জনি সবাইকে শৃঙ্খলার সঙ্গে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আহ্বান জানান এবং সবার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। এ সময় সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদসহ সোসাইটির অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ড. আবদুল বাতেন, শরাফ সরকার, সাইফুল্লাহ ভূঁইয়া, সাইকুল ইসলাম প্রমুখকে সঙ্গে নিয়ে সভাপতি পদপ্রার্থী জয়নাল আবেদীন তার মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। সাধারণ সম্পাদক পদের আরেক প্রার্থী আবদুল মোমেন সোহেল তার সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।
সোসাইটির আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী নয়ন-আলী প্যানেলের প্রার্থীরা হলেন—সভাপতি পদে কাজী আশরাফ হোসেন (নয়ন); জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুর রহীম হাওলাদার; সহসভাপতি মোহাম্মদ আর করীম (সাগর); সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী; সহসাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ দুলাল মিয়া; কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ জেড খান (ডিউক); সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান হাবিব; সাংস্কৃতিক সম্পাদক মনিকা রায়; জনসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক শেখ হায়দার আলী; সমাজকল্যাণ সম্পাদক আবুল কাশেম চৌধুরী; সাহিত্য সম্পাদক মোহাম্মদ হাসান (জিলানী); ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক মোহাম্মদ এইচ রশীদ (রানা); স্কুল ও শিক্ষা সম্পাদক মোহাম্মদ এস মিয়া (সামাদ) এবং কার্যকরী সদস্য জেড আর চৌধুরী; মোহাম্মদ এম আলম; মোহাম্মদ এ সিদ্দিক; সাঈদুর আর খান (ডিউক); আহসান উল্লাহ (মামুন) ও আলী আকবর।
রব-রুহুল প্যানেলের প্রার্থীরা হলেন—সভাপতি পদে আবদুর রব মিয়া; জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মহিউদ্দীন দেওয়ান; সহসভাপতি আবদুল খালেক খায়ের; সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী; সহসাধারণ সম্পাদক মো. আজাদ (বাকির); কোষাধ্যক্ষ নওশেদ হোসেন; সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম ভূঁইয়া; সাংস্কৃতিক সম্পাদক ডা. শাহনাজ লিপি; জনসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ; সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোহাম্মদ টিপু খান; সাহিত্য সম্পাদক ফয়সল আহমদ; ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক মাইনুল উদ্দিন মাহবুব; স্কুল ও শিক্ষা সম্পাদক প্রদীপ ভট্টাচার্য। আর কার্যকরী সদস্য পদে প্রার্থীরা হলেন মো. সাদী মিন্টু, ফারহানা চৌধুরী, শাহ মিজান, আবুল বাশার, আক্তার হোসেন বাবুল ও সুশান্ত দত্ত।
এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ২৭ হাজার ৫১৩ যা সোসাইটির ইতিহাসে একটি রেকর্ড। এর মধ্যে ৪৮৮ জন আজীবন সদস্য/ভোটার রয়েছেন। সাধারণ ভোটার হচ্ছে ২৭ হাজার ২৫ জন। সোসাইটির ইতিহাসে এত সংখ্যক সদস্য/ভোটার হওয়ার নজির নেই।
সোসাইটির সাবেক সভাপতি ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম এ আজিজ এবারের নির্বাচনে এখনো কাউকে বা কোনো প্যানেলকে সমর্থন করেননি বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে। তিনি বলেছেন, নিরপেক্ষ হিসেবে সবকিছু বিবেচনার পর ভবিষ্যতে নিজের সিদ্ধান্ত জানাবেন।