সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মিলনমেলা ১ সেপ্টেম্বর টরন্টোয় শুরু

বিশ্ব সিলেট সম্মেলনের ৪র্থ আসর বসছে কানাডার টরন্টো শহরে। ‘সিলেট আমার অহংকার’ শিরোনামে ১ ও ২ সেপ্টেম্বর টরন্টোর স্থানীয় গ্র্যান্ড প্যালেস সম্মেলন কেন্দ্রে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনে সিলেটের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে বর্ণিল আয়োজনের ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব টরন্টো, কানাডা। আয়োজন সহযোগী হিসেবে রয়েছে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা।
আয়োজক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ প্রথম আলোকে বলেন, এই দুই দিনে বিভিন্ন পর্বে বৃহত্তর সিলেটের ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, পর্যটন, পরিবেশ, মহান মুক্তিযুদ্ধে সিলেটের অবদান, বাংলাদেশের উন্নয়নে সিলেটী প্রবাসীদের ভূমিকাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে সিলেটের ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরার পাশাপাশি এই অঞ্চলের উন্নয়নে অংশীদার হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে বরাবরের মতো বিশ্ব সিলেট সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে। 

দুদিনব্যাপী এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হয়ে হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী সাংসদ আবুল মাল আবদুল মুহিতের। প্রধান বক্তা হিসেবে থাকছেন অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে আসছেন জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী, ঢাকাস্থ জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তোফায়েল সামি, সাবেক রাষ্ট্রদূত ড. এ কে আবদুল মোমেন, গ্রীন ডেলটা ইনস্যুরেন্সের উপদেষ্টা নাসির এ চৌধুরী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ডেইজি সারওয়ারসহ বিশিষ্টজনেরা।
টরন্টো বিশ্ব সিলেট সম্মেলনকে স্বাগত জানিয়ে শুভেচ্ছাবার্তা জানিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। কানাডা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, রাজনীতিক, সমাজকর্মীরা পৃথক বার্তায় এই আয়োজনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
জানা যায়, আয়োজনের নানা পর্বে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অতিথিরা যোগ দেবেন। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান অমলেন্দু চ্যাটার্জি, দৈনিক যুগশঙ্খের মুখ্য সাংবাদিক রক্তিম দাশ, আমেরিকা থেকে ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ, ড. ফাতেমা আহমেদ, রানা ফেরদৌস চৌধুরী, জুয়েল চৌধুরী, সালাউদ্দিন আহমেদ, রাজিয়া আহমেদ, আহমেদ মাহমুদুর রেজা চৌধুরী, শাকিল আহমেদ চৌধুরী, ড. কাজী রুশদি আহমেদ, মাসওয়ান এন আর চৌধুরী, সাপ্তাহিক ঠিকানার সম্পাদক এম এম শাহীন, টাইম টেলিভিশনের কর্ণধার আবু তাহের, সাংবাদিক মাহবুব আহমেদ, সাংবাদিক ও লেখক শামসাদ হুসাম, কবি কাজী আতিক, কবি তমিজ উদ্দিন লোদী যোগ দিচ্ছেন।
যুক্তরাজ্য থেকে চ্যানেল এস-এর চেয়ারম্যান আহমেদ উস সামাদ চৌধুরী, সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক এমদাদ চৌধুরী আসছেন।
টরন্টো বিশ্ব সিলেট সম্মেলনের সদস্যসচিব মিজানুর রহমান চৌধুরী প্রাক প্রস্তুতি সম্পর্কে বলেন, ‘দেশের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন বাংলাদেশিরা। নানা ক্ষেত্রে দেশের সঙ্গে নিজ অঞ্চলের সুনাম বৃদ্ধি করছেন। মাতৃভূমির টান থেকেই আমরা একত্রিত হয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে চাই। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিশিষ্ট অতিথিরা আসছেন। সবার অংশগ্রহণে আমরা সফল একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের চেষ্টা করছি।’
জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব টরন্টোর সাধারণ সম্পাদক মাহবুব চৌধুরী রনি বলেন, ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি থাকছে সেমিনার, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা, কাব্য জলসা, সিলেট নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজন। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মণিপুরী নৃত্য, বাউল সংগীত, মালজুড়া গান, ধামাইল নাচ ও সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিয়ের গান নিয়ে আয়োজন থাকছে। থাকছে নৃত্য পরিচালক তাপস দেবের পরিচালনায় নৃত্য আলেখ্য দিয়ে নান্দনিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ।
দুই দিনব্যাপী এই জাঁকজমকপূর্ণ সম্মেলনে অতিথিদের স্বাগত জানাতে দুটি তোরণ নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সব অনুষ্ঠান সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করার জন্য তিনটি মঞ্চ করা হয়েছে, গ্র্যান্ড প্যালেসের ইনডোরের দুটি মঞ্চ ছাড়াও বাইরের খোলা জায়গায় একটি বিশাল মঞ্চ বানানো হচ্ছে। মঞ্চগুলোর নাম রাখা হয়েছে ওসামানী মঞ্চ, সুরমা মঞ্চ ও বরাক মঞ্চ।
সম্মেলনে বিষয়ভিত্তিক সেমিনার থাকছে।
ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে সিলেট: স্থান—ওসমানী মঞ্চ। অংশগ্রহণে: এম এ মুহিত (বাংলাদেশ), তাজুল মোহাম্মদ(কানাডা), গোপেশ মালাকার (কানাডা), অমলেন্দু চ্যাটার্জি (ভারত), শামসাদ হুসাম (আমেরিকা)। এই পর্ব সঞ্চালনা করবেন ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ (আমেরিকা।
সাংবাদিকতায় সিলেট: স্থান—সুরমা অডিটোরিয়াম। অংশগ্রহণে যুগভেরীর সাবেক সম্পাদক নিউইয়র্কপ্রবাসী মাহবুব উর রহমান, সাপ্তাহিক ঠিকানা পত্রিকার সম্পাদক এম এম শাহীন, টাইম টেলিভিশনের মালিক আবু তাহের, সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক এমদাদ চৌধুরী, ভোরের আলো সম্পাদক খন্দকার আহাদ প্রমুখ। সঞ্চালনায় থাকছেন দেশে বিদেশে-এর সম্পাদক নজরুল মিন্টো।
স্বাস্থ্য সেবায় সিলেট: স্থান—সুরমা অডিটোরিয়াম। অংশগ্রহণে থাকছেন ড. এহতেশামুল চৌধুরী (বাংলাদেশ), ড. মুরাদ বখত (কানাডা), ড. শাহান জায়গীরদার (কানাডা)। সঞ্চালনায় থাকছেন ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ (আমেরিকা)।
সিলেটের পর্যটন ও পরিবেশ: স্থান—সুরমা অডিটোরিয়াম। আলোচনায় অংশ নেবেন শরিফ জামিল (বাংলাদেশ), রানা ফেরদৌস (আমেরিকা)। সঞ্চালনায়—মিনহাজ আহমেদ সাম্মু (আমেরিকা)।
সিলেটের প্রবাদ-প্রবচন ও নাগরিলিপি: স্থান—সুরমা অডিটোরিয়াম। অংশগ্রহণে থাকছেন ইনাম আহমেদ চৌধুরী (বাংলাদেশ), অমলেন্দু চ্যাটার্জি (ভারত) সালাউদ্দিন আহমেদ (আমেরিকা), মহসিন বখত (কানাডা)।
বিশ্ব সিলেট সম্মেলন ও এর ভবিষ্যৎ: স্থান—সুরমা অডিটোরিয়াম। অংশগ্রহণে সি এম তোফায়েল সামি (বাংলাদেশ), নাসির চৌধুরী (বাংলাদেশ), জুয়েল চৌধুরী (আমেরিকা)।
বাংলাদেশের উন্নয়নে সিলেটী প্রবাসীদের ভূমিকা: স্থান—সুরমা অডিটোরিয়াম। অংশগ্রহণে থাকছেন ড. এ কে আবদুল মোমেন (বাংলাদেশ), আহমেদ উস সামাদ চৌধুরী (যুক্তরাজ্য), এম এম শাহীন (আমেরিকা), আবু তাহের (আমেরিকা)।
তারুণ্যের নেতৃত্ব: স্থান—সুরমা অডিটোরিয়াম। অংশগ্রহণে থাকছেন কানাডার প্রথম বাংলাদেশি পার্লামেন্ট সদস্য ডলি বেগম, ড. কাজী রুশদী আহমেদ (আমেরিকা), মাহসান এ আর চৌধুরী, বাংলাদেশের ইষ্ট কোস্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানজিল চৌধুরী, গ্রীণডেল্টা ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা চৌধুরী, যুক্তরাজ্যের সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী আ স ম মাসুম প্রমুখ।
আয়োজক কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা ইন্তেখাব চৌধুরী তুহিন বলেন, দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা চলাকালে বিভিন্ন সময় স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী হবে বরাক মঞ্চে। তথ্যচিত্রগুলোর মধ্যে থাকবে ইকবাল বাহার চৌধুরীর ‘আ হিরো অব লিবারেশন ওয়ার: এম এ জি ওসমানী’, চাবাগানের জীবন নিয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী নির্মাতা মকবুল চৌধুরী ‘ব্ল্যাক লিফ ও নট এ পেনি, নট এ গ্যান’, আমেরিকাপ্রবাসী নজরুল কবীর পরিচালিত ‘সিলেটের পাঁচালি’ ইত্যাদি।
টরন্টোতে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব সিলেট সম্মেলন সিলেটের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন টরন্টো বিশ্ব সিলেট সম্মেলনের আয়োজন সহযোগী সংগঠন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন ঢাকার সভাপতি সি এম তোফায়েল সামি।
দুই দিনব্যাপী এই বর্ণাঢ্য আয়োজনে সবার প্রাণবন্ত উপস্থিতি কামনা করে টরন্টোর বিশ্ব সিলেট সম্মেলনের আহ্বায়ক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ৪র্থ সিলেট সম্মেলন উপলক্ষে মিলনমেলার বর্ণাঢ্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বৈচিত্র্যময় আয়োজন, বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় উঠে আসবে আগামীর সিলেটের সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা। অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে আমরা ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে এগিয়ে যাব।’