মনোনয়নপত্র বাতিল ২ প্রার্থীর ক্ষোভ, উত্তেজনা

আমেরিকাপ্রবাসী বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি ইনকের দ্বিবার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামী ২১ অক্টোবর। ইতিমধ্যে দুটি প্যানেল মনোনয়নপত্র দাখিল করেছে। এর বাইরে রয়েছেন কয়েকজন স্বতন্ত্রপ্রার্থী। নির্বাচন ঘিরে প্রচার-প্রচারণায়ও নেমে গেছেন প্রার্থীরা। এরই মধ্যে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ৪ সেপ্টেম্বর একটি প্যানেলের দুই প্রার্থীকে অযোগ্য ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এ নিয়ে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত দুজন হলেন নয়ন-আলী পরিষদের। এ দুজন হলেন জেড আর চৌধুরী ও আলি আকবর। তাঁরা ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। তবে নির্বাচন কমিশনের এমন সিদ্ধান্তে রব-রুহুল পরিষদের প্রার্থী ও সমর্থকেরা খুশি। কারণ অন্তত দুটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকলে তাদের প্যানেলের দুজনের জয় নিশ্চিত। 

বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি, সম্পাদক পদসহ ১৯টি পদে নির্বাচন হবে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য দুটি প্যানেল রব-রুহুল ও নয়ন-আলী প্যানেলসহ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। ৪ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে নয়ন-আলী পরিষদের দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত পড়ে শোনানো হয়। মনোনয়নপত্র বাতিলের কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে কমিশন জানায়, মনোনয়নপত্রে একজন প্রার্থীর প্রস্তাবকারীর সাক্ষর দেওয়া হয়নি। অন্য প্রার্থীর সমর্থনকারীর সাক্ষর না দেওয়ায় তাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়।
দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিলের ঘটনায় নয়ন-আলি পরিষদের সভাপতিপ্রার্থী কাজী আশরাফ হোসেন নয়ন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘সামান্য কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল করা নজিরবিহীন। যেখানে প্রার্থীর নির্বাচন করার ব্যাপার কাগজে নিজের সাক্ষর আছে, সেটাই যথেষ্ট। এটা আমাদের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র। আশা করি, নির্বাচন কমিশন প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করবেন।’
নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অনিয়ম ধরা পড়ায় দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তাঁদের পক্ষ থেকে এখনো কোনো লিখিত আপিল পাননি। তিনি বলেন, দুই প্রার্থীর আপিল পেলে সবকিছু বিবেচনা করে দেখা হবে।
সোসাইটির আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী নয়ন-আলী প্যানেলের প্রার্থীরা হলেন—সভাপতি পদে কাজী আশরাফ হোসেন (নয়ন); জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুর রহীম হাওলাদার; সহসভাপতি মোহাম্মদ আর করীম (সাগর); সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী; সহসাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ দুলাল মিয়া; কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ জেড খান (ডিউক); সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান হাবিব; সাংস্কৃতিক সম্পাদক মনিকা রায়; জনসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক শেখ হায়দার আলী; সমাজকল্যাণ সম্পাদক আবুল কাশেম চৌধুরী; সাহিত্য সম্পাদক মোহাম্মদ হাসান (জিলানী); ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক মোহাম্মদ এইচ রশীদ (রানা); স্কুল ও শিক্ষা সম্পাদক মোহাম্মদ এস মিয়া (সামাদ) এবং কার্যকরী সদস্য পদে মোহাম্মদ এম আলম; মোহাম্মদ এ সিদ্দিক; সাঈদুর আর খান (ডিউক); ও আহসান উল্লাহ (মামুন)।
রব-রুহুল প্যানেলের প্রার্থীরা হলেন—সভাপতি পদে আবদুর রব মিয়া; জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মহিউদ্দীন দেওয়ান; সহসভাপতি আবদুল খালেক খায়ের; সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী; সহসাধারণ সম্পাদক মো. আজাদ (বাকির); কোষাধ্যক্ষ নওশেদ হোসেন; সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম ভূঁইয়া; সাংস্কৃতিক সম্পাদক ডা. শাহনাজ লিপি; জনসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ; সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোহাম্মদ টিপু খান; সাহিত্য সম্পাদক ফয়সল আহমদ; ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক মাইনুল উদ্দিন মাহবুব; স্কুল ও শিক্ষা সম্পাদক প্রদীপ ভট্টাচার্য। আর কার্যকরী সদস্য পদে প্রার্থীরা হলেন, মো. সাদী মিন্টু, ফারহানা চৌধুরী, শাহ মিজান, আবুল বাশার, আক্তার হোসেন বাবুল ও সুশান্ত দত্ত।

নির্বাচনী প্রচারণা
নির্বাচন নিয়ে বাংলাদশি জনসমাজের নানা মহলে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, সচেতন মানুষ সোসাইটিকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পক্ষে কল্যাণকর একটি সত্যিকারের সামাজিক সংগঠন হিসেবে দেখতে চায়। তাঁরা মনে করেন, কয়েকটি নির্দিষ্ট অনুষ্ঠানের মধ্যে সোসাইটির কার্যক্রম সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। সোসাইটিকে ভালোভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য তাঁরা যোগ্য নেতৃত্ব চান। তাঁরা চান প্রার্থীদের অর্থে সদস্য/ভোটার সংগ্রহ প্রক্রিয়া বন্ধ করতে। নির্বাচনে তাঁরা প্যানেল নয়, ব্যক্তির যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রার্থী নির্বাচিত করতে চান। এ জন্যই প্রার্থীদের ভাবমূর্তিকে ভোটাররা গুরুত্ব দিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কোন কোন মহল মনে করছেন, সোসাইটিকে কার্যকর সংগঠনে পরিণত করতে সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রার্থীরা একই প্যানেল থেকে নির্বাচিত হলে কাজ করতে সুবিধা, সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে।
নির্বাচনের প্রার্থীরা বিশেষ করে ‘রব-রুহুল’ ও ‘নয়ন-আলী’ প্যানেলের প্রার্থীরা প্যানেল প্রচারণা ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে জোরেশোরে প্রচারণায় নেমেছেন। রং-বেরঙের পোস্টার শোভা পাচ্ছে বাংলাদেশি অধ্যুষিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়। আবার অনেকে বেছে নিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। চলছে প্রচারণার পাশাপাশি দোয়া প্রার্থনা।
‘রব-রুহুল’ ও ‘নয়ন-আলী’ প্যানেলের পাশাপাশি স্বতন্ত্র সভাপতি পদপ্রার্থী জয়নাল আবেদীন ও স্বতন্ত্র সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী আবদুল মোমেন (সোহেল) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু না করলেও বিভিন্ন সভা-সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন, দোয়া চাচ্ছেন। চলছে বিভিন্ন প্যানেল ও প্রার্থীদের অফিসসহ নির্বাচন পরিচালনার জন্য কমিটি গঠন প্রক্রিয়া। ইতিমধ্যেই ‘নয়ন-আলী’ প্যানেল ব্রুকলিনে অফিস নিয়েছে। ব্রঙ্কসে নির্বাচন পরিচালনা কমিটিও গঠন করেছেন তাঁরা।
সোসাইটির এবারের নির্বাচনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ ছাড়াও জনসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক পদে লড়াই জমে উঠবে বলে মনে হচ্ছে। সভাপতি পদে দুজন নতুন মুখ রয়েছেন। সোসাইটির একজন সাবেক কর্মকর্তা ও সাধারণ সম্পাদক পদে সোসাইটির দুজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছাড়াও একটি নতুন মুখ নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন। অন্যদিকে জনসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক পদে লড়ছেন জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির দুই কর্মকর্তা। অন্যান্য পদের লড়াইও বেশ জমবে বলেও অনেকে মনে করছেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার জামাল ইউ আহমেদসহ ছয় সদস্যের নির্বাচন কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন—মোহাম্মদ আবদুল হাকিম, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, রুহুল আমিন সরকার, কায়সার জামান কয়েস ও খোকন মোশারফ। নির্বাচন আয়োজনে তাঁরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ২৭ হাজার ৫১৩ জন যা সোসাইটির ইতিহাসে রেকর্ড। এর মধ্যে ৪৮৮ জন আজীবন সদস্য/ভোটার রয়েছেন। সাধারণ ভোটার হচ্ছে ২৭ হাজার ২৫ জন। সোসাইটির ইতিহাসে এত সংখ্যক সদস্য/ভোটার হওয়ার নজির নেই।