ওবামাকে প্রচারে নামিয়ে আশাবাদী ডেমোক্র্যাটরা

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় আরবানা-শ্যাম্পেইনে ভাষণ দিচ্ছেন। ৭ সেপ্টেম্বর। ছবি: রয়টার্স
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় আরবানা-শ্যাম্পেইনে ভাষণ দিচ্ছেন। ৭ সেপ্টেম্বর। ছবি: রয়টার্স

ডেমোক্র্যাটরা আশা করছেন, আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া মধ্যবর্তী নির্বাচনে মার্কিন কংগ্রেস বা প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ তাঁরা ফিরে পাবেন। যদি সত্যি সত্যি ট্রাম্পবিরোধী একটি ‘নীল ঢেউ’ ওঠে, তার প্রভাবে কংগ্রেসের উচ্চতর কক্ষ বা সিনেটেও তাঁরা নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাবেন বলে আশাবাদী। তবে এর সবই নির্ভর করছে আগামী নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক সমর্থক ও স্বতন্ত্র ভোটাররা কতটা উৎসাহ নিয়ে ভোট দিতে আসেন তার ওপর।

এই কাজে তাদের সাহায্য করতে এবার মাঠে নেমেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি এখনো এই দলের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক। এত দিন তিনি নির্বাচনী রাজনীতি এড়িয়ে গেছেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যাপারের কোনো কটু মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছেন। সব বদলে গেল গতকাল শুক্রবার। এদিন তিনি ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় আরবানা শ্যাম্পেইনে ছাত্র-শিক্ষকদের উদ্দেশে এক দীর্ঘ ভাষণে ট্রাম্পের ক্ষতিকর রাজনীতির কঠোর সমালোচনার মাধ্যমে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় সরাসরি প্রবেশ করলেন।

ওবামা ছাত্র-শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়, একজন উদ্বিগ্ন ও সচেতন নাগরিক হিসেবে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন আর নীরবে বসে থাকা সম্ভব নয়। ‘এটা এমন এক সময়, যখন আমেরিকার প্রতিটি নাগরিককে ঠিক করতে হবে, সে কে, কোন আদর্শের পক্ষে সে।’

ওবামা বলেন, এটি একটি বিপজ্জনক সময়, আমেরিকার গণতন্ত্র এখন হুমকি মুখে। দেশ ও দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে রক্ষা করতে হলে এখন প্রত্যেককে সঠিক দল ও প্রার্থীর পক্ষে ভোট দিতে হবে। তাঁর ডেমোক্রেটিক সহকর্মীদের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করে ওবামা বলেন, রিপাবলিকান কংগ্রেস একজন নিয়ন্ত্রণহীন প্রেসিডেন্টের কার্যাবলির ওপর নজরদারি করতে ব্যর্থ হয়েছে। সেই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্যই প্রয়োজন একটি ডেমোক্রেটিক কংগ্রেস।

অবসর গ্রহণের পর গত ১৮ মাস ওবামা সযত্নে ট্রাম্পের প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেছেন, একবারও তাঁর নাম উচ্চারণ করেননি। কিন্তু এদিন তিনি শুধু ট্রাম্পের নাম ধরে নয়, এক এক করে তাঁর অনুসৃত ভ্রান্ত রাজনৈতিক নীতির সমালোচনা করে গেলেন। ট্রাম্পকে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে ওবামা বলেন, ট্রাম্প যেভাবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শাস্তি দিতে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করতে আগ্রহী অথবা তথ্যমাধ্যমকে ঢালাওভাবে ‘গণশত্রু’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, তার কোনোটাই গ্রহণযোগ্য নয়। আমেরিকান হিসেবে প্রত্যেকের দায়িত্ব বৈষম্য ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। ট্রাম্প সেই অবস্থান নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। ট্রাম্পের প্রতি বিদ্রূপ করে তিনি প্রশ্ন করেন, বর্ণবাদ গ্রহণযোগ্য নয়, এ কথা বলা কতটা কঠিন?

ওবামার ভাষণের সময় ট্রাম্প তাঁর সরকারি বিমানে ছিলেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই ভাষণের অংশবিশেষ তিনি শুনেছেন, তবে বেশি শুনতে পারেননি, কারণ তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।

ডেমোক্র্যাটরা আশা করছেন, নির্বাচনী প্রচারণায় ওবামার অংশগ্রহণের ফলে তাঁদের সমর্থকদের মধ্যে নতুন উৎসাহের সঞ্চার হবে। আগামী কয়েক সপ্তাহ তিনি ক্যালিফোর্নিয়া, ওহাইও ও অন্যান্য রাজ্যে ডেমোক্রেটিক প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী র‍্যালি ও চাঁদা সংগ্রহে অংশ নেবেন।

তবে ওবামার আগমনের ফলে উল্টো বিপদও ঘটতে পারে। রক্ষণশীল রিপাবলিকানদের কাছে ওবামা এখনো একটি বিতর্কিত নাম। তাঁর সরাসরি রাজনৈতিক প্রচারণায় প্রবেশের ফলে ট্রাম্পের ‘বেইস’ নতুনভাবে সংঘটিত হওয়ার রসদ পেতে পারে। ট্রাম্প নিজেই মন্তব্য করেছেন, ওবামার কারণে তাঁর সমর্থকেরা মধ্যবর্তী নির্বাচনে দল বেঁধে ভোট দিতে অনুপ্রাণিত হবেন।