হঠাৎ আসা অতিথি আপ্যায়ন করবেন কীভাবে

অতিথি আপ্যায়নের কিছু প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন আগেভাগেই। মডেল: শর্মীলা ইতি
অতিথি আপ্যায়নের কিছু প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন আগেভাগেই। মডেল: শর্মীলা ইতি

‘সকাল থেকে সন্ধ্যা অব্দি কাজ করে যাচ্ছি, তবুও যেন কাজ ফুরোয় না’, এমন অভিযোগ হরহামেশাই শোনা যায় মেয়েদের মুখে। সত্যি, মেয়েদের দুটো হাতে কাজ করে কুলোয় না। তাদেরকে হতে হয় দেবী মা দুর্গার মতো দশভুজা, তা সেই মেয়েটি চাকরিজীবী বা গৃহিণী যা-ই হোক না কেন। যে মেয়েদের বাইরের কাজ আর ঘরের কাজ দুটোই সামাল দিতে হয়, তাদের সকাল শুরু হয় ঝড়ের বেগে। রাতে বিছানায় যেতে হয় ক্লান্ত বিধ্বস্ত অবস্থায়। অবশ্য যারা বাইরের কাজ করেন না, তারা একটু হলেও দম ফেলার ফুরসত পান।
একদিকে কাজের প্রচণ্ড চাপ, অন্যদিকে পরিবারের সবার সুখদুঃখের খোঁজখবর রাখা। পরিবারের এই প্রিয় মানুষগুলোর মন থেকে শুরু করে পেট ভরানোর সব দায়িত্ব কেমন করে যেন মেয়েদেরই দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়। সকাল, দুপুর আর রাতের এই বিরামহীন ছুটে চলার নামই জীবন। এই জীবনের জন্যই আমাদের এত আয়োজন।
অতিথি আপ্যায়নও আমাদের এই যাপিত জীবনেরই অঙ্গ। একে একধরনের সামাজিক
বিনোদনও বলা যায়। আমরা যেমন আত্মীয়, পরিজন, বন্ধু-বান্ধবের বাসায় সেজেগুজে বেড়াতে যেতে পছন্দ করি, তেমনি তারাও আবার আমাদের বাসায় আসেন। এটাই রীতি। সে সব আয়োজন কখনো হয় খুব ঘটা করে, দিন-তারিখ ধার্য করে। আবার কখনো কিছু অতিথি চলে আসেন হুটহাট। এই হঠাৎ আসা অতিথিদের আপ্যায়নে একটু পূর্ব-প্রস্তুতি থাকলে আর সমস্যায় পড়তে হয় না। তখন নিজেও একটু সুন্দর করে পরিপাটি হয়ে, মুখে মধুর হাসি টেনে, মুখরোচক খাবারে টেবিল সাজিয়ে অতিথি সৎকার করা যায়।
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে শেখা কিছু টিপস এখানে শেয়ার করব। নিউইয়র্কের মতো ব্যস্ত ও ব্যয়বহুল একটি শহরের বাসিন্দা আমি। এখানে জীবনধারণের জন্য বাইরের কাজের পাশাপাশি ঘরের কাজগুলোও নিজের হাতেই করতে হয়। কারণ দেশের মতো এখানে গৃহকর্মীর সাহায্য পাওয়ার সুযোগ খুবই সীমিত। তা ছাড়া নিজের কাজগুলো নিজের মতো করে করার মধ্যে একধরনের আনন্দ ও তৃপ্তিও রয়েছে।
সুন্দর পরিপাটি সাজানো ঘর অতিথি আপ্যায়নের একেবারে মূল কথা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সুন্দর করে সাজানো ঘর, সুন্দর করে টেবিলে খাবার সাজিয়ে পরিবেশন ও আন্তরিকতাই অতিথি আপ্যায়নের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। হাজার ব্যস্ততার মাঝেও বসার ঘরটা একটু নান্দনিকভাবে গুছিয়ে রাখলে প্রথম বিষয়টিতে কখনো অপ্রস্তুত হতে হয় না। যখন-তখন মেহমান এলেও তখন আর নার্ভাস হওয়ার কিছু নেই। সুন্দর আরামদায়ক পরিবেশে অতিথিকে বসিয়ে রেখে গল্প করার ফাঁকে ফাঁকেই কয়েক ধরনের নাশতা, দুপুর ও রাতের খাবার তৈরি করা যায়।

নিজেদের জন্য প্রতিদিনের খাবার তৈরির ফাঁকে একটু বাড়তি পদের রান্নার উপকরণ হাফডান করে ডিপফ্রিজে তুলে রাখতে পারলে হঠাৎ প্রয়োজনে সেগুলো খুব কাজে লাগে। তাতে সময় ও পরিশ্রম দুটোই বাঁচে। চটজলদি বের করেই রান্না করা যায় বলে এভাবে আধা-তৈরি খাবার প্রয়োজনের মুহূর্তে মুশকিল আসানকারী হতে পারে। মেহমানদের যথার্থ আপ্যায়ন করা যায় বলে মনে কোন খুঁতখুঁত ভাবও থাকে না।
আমি নিজেও সব সময়ই তা-ই করতে চেষ্টা করি। যেমন চিংড়ি। চিংড়িমাছ আমার কাছে খুব প্রিয় একটি চটজলদি রান্নার উপাদান। কিছু চিংড়ি পরিষ্কার করে মসলা দিয়ে মেরিনেট করে জিপলক প্যাকেটে পুরে ফ্রিজে তুলে রেখে দেওয়া যায়। ফ্রেঞ্চবিন, ফুলকপি, গাজর, মটরশুঁটি হালকা গরম পানিতে ভাঁপিয়ে, পানি ঝরিয়ে প্যাকেটজাত করে ফ্রিজে তুলে রাখলে এর রং বা স্বাদের তেমন কোনো পরিবর্তন হয় না। চিকেন ব্রেস্ট কিউব করে কেটে সয়া সস, টমেটো কেচাপ, হট সস, আর গোলমরিচের গুঁড়ো দিয়ে মেরিনেট করে তুলে রাখুন। এটিও হবে চটজলদি রান্নার একটি সুন্দর পদ। যখনই ঘরের জন্য গরুর মাংস রান্না হবে, তার থেকে ছোট ছোট করে দু-তিনটি বক্সে ভরে কিছু মাংস তুলে রাখলে, হঠাৎ প্রয়োজনে সেই রান্না করা গরুর মাংসের বক্সটি আপনাকে স্বস্তি এনে দেবে।
হয়তো ফ্রিজেই রয়ে গেছে আগের দিনের রান্না করা কোনো খাবার। যেমন, যেকোনো মাংস, সবজি, ভাজি বা ডাল। জলখাবার তৈরি করতে হবে? কুছ পরোয়া নেই। সেই রয়ে যাওয়া সবজি বা মাংসের সঙ্গে একটু ময়দা, পেঁয়াজকুচি, ধনে পাতা, দুই চিমটি কালোজিরা ছিটিয়ে দিয়ে মণ্ড তৈরি করুন। তারপর ডুবো তেলে ভেজে তুলুন মচমচে মজাদার ভেজিটেবল বা মিট কচুরি। পরিবেশন করুন হট সস বা টমেটো কেচাপ দিয়ে।
সোনালি করে বেরেস্তা বানিয়ে রাখতে পারেন; এ কাজটিতে সময় লেগে যায় প্রচুর। আর পেঁয়াজ ভাজার গন্ধটা অনেকক্ষণ ঘরে থেকে যায়। আপনি নিশ্চয় চাইবেন না, অতিথিরা আপনার গন্ধে ভরা ঘরে অস্বস্তি বোধ করুক। তাই বেশ খানিকটা পেঁয়াজের বেরেস্তা তৈরি ফ্রিজে রেখে দিন। প্রয়োজনে সেখান থেকে খানিকটা নিয়ে আপনি পোলাও, মাছের দোপেঁয়াজি, ডাল বা আলুভর্তায় ব্যবহার করতে পারেন।
এভাবে অনায়াসেই হঠাৎ আসা অতিথিকে সুন্দর করে হাসিমুখে আপ্যায়ন করতে পারি। এই আপ্যায়ন মনে বিরক্তি বা রাগ আনবে না। তখন অতিথি ঝামেলা না হয়ে সত্যিই নারায়ণ হয়ে উঠবে; আত্মীয়তা ও বন্ধুত্বের বন্ধনও হবে সুদৃঢ়।