আত্মবিশ্বাস সৌন্দর্যের জাদুকাঠি

মুখশ্রী নয়, আত্মবিশ্বাসই মূলত একজনকে সুন্দর করে তোলে। মডেল: অায়েশা তাহমিনা
মুখশ্রী নয়, আত্মবিশ্বাসই মূলত একজনকে সুন্দর করে তোলে। মডেল: অায়েশা তাহমিনা

নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে কে না চায়? আর তাই নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপনের চেষ্টায় কোনো ত্রুটি রাখতে চায় না কেউই। প্রশ্ন হচ্ছে সৌন্দর্যের প্রকৃত সংজ্ঞা আসলে কী? সুন্দর বলতে সমাজ ও পারিপার্শ্বিকতার মাধ্যমে আমরা যা দেখছি ও জানছি, তা-ই কী মূলত সত্য?
কথায় বলে ‘আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী’। অর্থাৎ প্রথম দেখায় বাহ্যিক রূপটুকুই সম্পূর্ণ মনোযোগ কেড়ে নেয়। তারপর ধীরে ধীরে বাকি গুণাবলি নজর কাড়ে। এই বাহ্যিক রূপকে নিপুণভাবে উপস্থাপনের জন্যই রয়েছে অজস্র বিউটি পার্লার, ইউটিউব ও ইনস্টাগ্রাম টিউটোরিয়াল, বিউটি ব্লগসহ আরও নানা কিছু। এগুলো থেকে মুখের জন্য ফেসিয়াল, হাতের জন্য মেনিকিউর, পায়ের জন্য পেডিকিওর, চুলের জন্য প্রোটিন ট্রিটমেন্টের টিপস দেওয়া হচ্ছে। এত কিছুর পরও ডিএসএলআর-এ তোলা ছবিতে লাগছে ফটোশপের ছোঁয়া; আশ মিটছে না কিছুতেই।

আত্মবিশ্বাসী মুখই নজর কাড়ে সবার। মডেল: অায়েশা তাহমিনা
আত্মবিশ্বাসী মুখই নজর কাড়ে সবার। মডেল: অায়েশা তাহমিনা

কিন্তু এসব করেও কি সৌন্দর্যের সব প্রচলিত প্রকরণ অর্জন করা যাচ্ছে? এক কথায় উত্তর, ‘না’। সৌন্দর্যকে যুগ যুগ ধরে উচ্চতা, গায়ের রং, শারীরিক গঠনসহ নানাভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তবু আজও কেউ সৌন্দর্যের সংজ্ঞা শতভাগ নিশ্চিত করে বলতে পারে না। কারণটি খুব সহজ, অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যের পাশাপাশি বাহ্যিক সৌন্দর্যটুকুও সৃষ্টি হয় মানুষের ভেতর থেকেই। ভেতরের সৌন্দর্যই আসল জাদুকাঠি; আর সেটি তৈরি হয় আত্মবিশ্বাস থেকে।

মডেল: অায়েশা তাহমিনা
মডেল: অায়েশা তাহমিনা

অনেকেই বিশ্বাস করেন সুন্দর মুখশ্রী মানেই আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। সমাজ, পরিবার ও কর্মক্ষেত্রে তারাই বেশি প্রাধান্য পায়। অনেকে বলেন সৌন্দর্য থেকেই আত্মবিশ্বাস আসে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো আত্মবিশ্বাস থেকেই আসে সৌন্দর্য। ওপরাহ গেইল উইনফ্রে একজন জনপ্রিয় মার্কিন টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব। ‘টক শো’-এর সঞ্চালক হিসেবে তিনি অর্জন করেছেন বিপুল জনপ্রিয়তা। কী এমন আছে তাঁর মাঝে, যার কারণে সবাই এ অনুষ্ঠান এত মুগ্ধ হয়ে দেখে? মূলত তাঁর আত্মবিশ্বাসই তাঁকে করে তুলেছে অনন্য। আত্মবিশ্বাসই তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে, সাহস জুগিয়েছে বিশ্বের সামনে কথা বলার।

মডেল: অায়েশা তাহমিনা
মডেল: অায়েশা তাহমিনা

এ আত্মবিশ্বাস চেহারা থেকে নয় বরং আসে কাজ থেকে; জ্ঞান থেকে। অনেক দামি ও হাল ফ্যাশনের পোশাকেও কাউকে ম্রিয়মাণ লাগতে পারে শুধু আত্মবিশ্বাসের অভাবের কারণে। আবার খুব সাদামাটা ও আটপৌরে কেউ হয়ে উঠতে পারে ভীষণ সুন্দর। অনেকে মনে করেন সুন্দর মুখশ্রী সাফল্যের চাবিকাঠি। অথচ নিজের প্রতি বিশ্বাস ও পরিশ্রম একজন মানুষকে সফল করে তোলে। সুন্দর দেহসৌষ্ঠব দিয়ে শুরুতে মোহিত করা গেলেও সম্মান বা সত্যিকারের গ্রহণযোগ্যতা তখনই তৈরি হয়, যখন রূপটুকু ফুটে ওঠে ব্যক্তিত্বর মাধ্যমে। যখন কেউ মন থেকে নিজের ওপর আস্থা রাখে, নিজেকে ভালোবাসে এবং আত্মবিশ্বাসী হয়, তখন সে বিশ্বাসই সৌন্দর্যের মূলমন্ত্র হয়ে তার চোখে-মুখে ধরা দেয়, হয়ে ওঠে প্রকৃত সুন্দর।
এর অর্থ এই নয় যে, রূপচর্চা মূল্যহীন। রূপচর্চা আপনাকে নিজের প্রতি যত্নশীল করবে। কিন্তু আত্মবিশ্বাস আপনাকে পরিণত করবে সাহসী ও সেরায়। একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ অন্যদের চেয়ে খুব সহজেই যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে পারে। তাই রূপচর্চার পাশাপাশি নিজের মনকে প্রফুল্ল রাখুন; হাসুন। দৈনন্দিন জীবনে নতুন কিছু করুন। বই পড়ে নিজের জ্ঞানের পরিসর বাড়ান। জ্ঞান, নিজের প্রতি ভালোবাসা ও ইতিবাচক চিন্তাই আপনার ভেতরে দারুণ এক শক্তির জন্ম দেবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন ও জীবনকে উপভোগ করুন; অন্যরা আপনাকে ভালোবাসতে বাধ্য হবে।