যে স্পর্শ কবিতার, যে জ্যোতি আনন্দের

কবিতার স্পর্শ পেলে মানুষ শিহরিত হয়। ভালোবাসার কাছে ফিরতে চায়। চায় জীবনের কাছে ফিরতে। আমার নিশ্বাসের মাঝে আমি আমাকেই খুঁজি। হারিয়েছি কি কিছু! নাকি পেয়েছি!
আমি বুঝতে পারি কিছু কথা আমার মননে দানা বাঁধে। আমি বলতে চাই। লিখতে চাই। প্রকাশিত হতে চাই। কখনো ছন্দোবদ্ধ, কখনো মুক্ত নদীর মতো প্রবাহিত হয়ে যেতে চাই। মনে পড়ে যায় শামসুর রাহমানকে। তিনি বলতেন, আমি তো আর কোনো কাজ করতে পারি না, তাই লিখে যাই। কবির কথায় একধরনের আর্তনাদ লক্ষ করি। আর কী হতে পারলে শামসুর রাহমান কবিতা কিংবা গদ্য লিখতেন না সেসব বিষয়ে অনেক খোলামেলা কথাও বলেছেন তিনি।
তাহলে কি ‘আর কোনো কিছু করতে না পারা’ মানুষেরাই লেখক হয়ে যায়, কিংবা হয়ে যেতে পারে? নিউইয়র্কের পঞ্চম অ্যাভিনিউ আর সাঁইত্রিশ নম্বর সড়কের কোনা ধরে হাঁটতে হাঁটতে এসব কথা ভাবি। আর কয়েকটি সড়ক পরেই ব্রায়ান্ট পার্ক। হঠাৎ কে যেন আমার পিছু পিছু, কিছু বলতে থাকে, খুব নিচু স্বরে, ‘স্মোক’, ‘স্মোক’। আমি সংবিৎ ফিরে পাই। একজন মধ্যবয়সী কৃষ্ণাঙ্গ। গোপনে গাঁজা, আফিম ধরনের কিছু বিক্রি করছে। আমাকে দেখে তাই হাঁকছে, ‘স্মোক’!
স্মোক করার অভ্যাস নেই আমার। কোনো দিন চেষ্টা করেও দেখিনি। পঞ্চম অ্যাভিনিউ বাণিজ্য এলাকা বলেই পরিচিত। এখানে অবৈধ স্মোক কেউ বিক্রি করছে তা ভেবেই কিছুটা হোঁচট খাই। নিজ মনে পথ চলতে থাকি। এই উচ্চবিত্তের এলাকায় নেশা বিক্রি করা হচ্ছে! এর খদ্দের কারা? যাঁরা এখানে লাখ ডলার বেতন পান বছরে তাঁরাও এসব নেশা গ্রহণ করেন? মানুষ কেন নেশাগ্রস্ত হয়? লেখালেখিও কি এক ধরনের নেশা? লেখালেখি করে জীবনে কি কিছু পাওয়া যায়? এমন অনেক কথার জিজ্ঞাসা উড়িয়ে দিয়ে বাতাসের ওজন ভারী করি।
নিজেকে প্রকাশের প্রখরতা নিয়ে সেই কৈশোরকে ঢেলে দিয়েছিলাম উত্তাল বর্ষার শরীরে। বসন্তের কৃষ্ণচূড়া দেখে দেখে যখন পার হতাম সুরমার কিন ব্রিজ তখন মনে হতো এই শহরে ভোর হয় জীবনের স্বপ্ন নিয়ে। রিকশাঅলা ক্রিং ক্রিং আওয়াজ আর লাল ইট বহনকারী হলুদ ট্রাকগুলোর হর্ন যেন ফাটিয়ে দিতে চাইত কর্ণ যুগল।
‘পাবলিক কোরিয়ার সিলেট এরিয়া’ কিংবা ‘পাঁচশত গজ দূরে থাকুন’ সাইনগুলো পড়া হয়ে যেত হাঁটতে হাঁটতে। বেদের নৌকাগুলো বাঁধা পড়ত চৈত্রের খরায় যে নদীতে, সেই নদী সুরমায় খেয়া পার হতে হতেই দেখতাম নদীটির এক পাড় ভাঙছে। তবে কি খুব শিগগির গড়ে উঠবে অন্য পাড়? এমন প্রশ্নও জাগত মনে অনেকটা পশ্চিমে হেলে পড়া সূর্যের মতো। আমি সব সময় সূর্যাস্তকে মনের শেষ প্রশ্ন করতাম, কেন? একটি দিন কি তবে কয়েক টুকরো স্মৃতি নিয়েই ক্রমশ ডুবে যায়। আজ মনে পড়ছে সেই কবিতাটির কথা, যা লিখেছিলাম সতেরো বছর বয়সে।
আমার কোনো বাল্য ভাগ্য ছিল না
শিশির ঢেকে দিয়েছিল সবুজ সূর্যাস্তের স্মৃতি। তাই
বলেই বোধ হয় হারানো সূর্যকে আমি খুঁজি
অবিনাশী আত্মার ঘ্রাণে। বনে এবং বিমাহীন
জীবনে। যেখানে সূর্য এবং ভাগ্য হাঁটে ঈশানের
সমান্তরাল বিভায়।
‘বাল্য ভাগ্য’ কবিতাটি দীর্ঘদিন পর কাঁচা হাতে লেখা ডায়েরির পাতা থেকে কুড়িয়ে তুলি। সে সময় জীবনকে বিমাহীন ভেবেছিলাম। আজও কি জীবন হতে পেরেছে কবিতায় বিমাকৃত?

দুই.
কবিতা, চিত্রকলা, শিল্প চারুকে খুঁজে খুঁজে পথ চলতাম পিচঢালা কালো দাগগুলো গুনে গুনে। সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদে প্রথম যেদিন ঢুঁ মারি, সেদিন আমার গভীর দৃষ্টি কাড়েন একজন ত্যাগী পুরুষ। খুব প্রখর ধ্যানী মনে হয়েছিল তাঁকে প্রথম দেখায়। মুহম্মদ নুরুল হক। উপমহাদেশের এক অন্যতম গ্রন্থাগারিক। কথা বলে মনে হয়েছিল এক জীবন্ত গ্রন্থকোষ তিনি। তাঁর হাত ধরেই সাহিত্য সংসদে বসে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে আমার। তিনিই শিখিয়ে দেন গদ্যের, কবিতার ভেতরে কীভাবে ঢুকে যেতে হয়।
অনেক সময় কলেজের ক্লাস ফাঁকি দিয়েও তাই ছুটে যাওয়া হতো অসমাপ্ত গ্রন্থটির পাঠ শেষ করার জন্য। এতে লাভ ও ক্ষতি দুটোই যে হয়েছে তা এখন খুব ভালো করে বুঝতে পারি। কিন্তু সব লাভ-ক্ষতি কি জীবনকে তুষ্ট করতে পারে সমানভাবে? কোনো অতৃপ্ত আত্মার সঙ্গে কথা বলতে বলতে কিংবা উপন্যাসের কোনো চরিত্রের মধ্যে ডুবে যেতে যেতে মনে হয়েছে আমিই সেই চরিত্র। লেখক কিংবা লেখিকা যা বলতে চেয়েছেন, আমি যেন তারই প্রতিচ্ছায়া।
একজন কবি তাঁর ছায়া দেখা কখন শেখেন? কোন মূর্তপ্রতীক কবিকে নিয়ে যায় প্রেমের নিখিল বাগানে? জীবনানন্দ দাশের ‘কবিতার কথা’ পড়তে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছি অনেকবার। বোঝা হয়ে ওঠেনি। তাই পড়েছি, ভেবেছি, পড়েছি। রাতের আলোতে ডুবে গিয়ে সমৃদ্ধ করেছি নিজেকে। মনে মনে আওড়েছি:
এসো আজ কিছুক্ষণ স্বপ্ন দেখা যাক!
পথে ঘাটে মাঠে বনে কেমন জোনাক
জোনাকি, তোমার হাতে কাজ থাকে যদি,
পুরোনো সে নদী
খানিক পেরিয়ে এসো; এইটুকু পথ—
পাঁচিলের এপাশেই সোনালি শপথ!
(জোনাকি/আহসান হাবীব)
জীবনে কতবার শপথ ভঙ্গ করেছি এর হিসাব নিজের কাছ থেকে নিতে গেলে হাসিই পায়। কারণ, শপথ কেবল উন্মাদেরাই করে! তবে কি আমি উন্মাদ ছিলাম কবিতার জন্য? সুরের জন্য? ছন্দের বিদীর্ণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমি কি প্রকাশ করতে চেয়েছিলাম যৌবনের প্রথম উন্মাদনা! এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বাসিয়া নদীর তীরে বসে থেকেছি অনেক বিকেল। মাথায় দীর্ঘ চুলের ঢেউ। পাছে কেউ ফিসফিসিয়ে বলেছে, ‘হবে না কিছুই’। কেউ বলেছে, ‘ও তারে আবার নতুন সমাজতন্ত্রে পেয়েছে।’ কবিতা, সমাজতন্ত্রের সাক্ষী হয়ে থাকে কি না সে প্রশ্নের জবাব আমি খুঁজিনি কখনো। তবে কবিতা মানবতাবাদের দোসর এবং হাতিয়ার দুটোই হয়, তা আমি জেনেছি বহু আগেই।
তুমি পর্বতের পাশে বসে আছ:
তোমাকে পর্বত থেকে আরও যেনে উঁচু মনে হয়,
তুমি মেঘে উড়ে যাও, তোমাকে উড়িয়ে
দ্রুত বাতাস বইতে থাকে লোকালয়ে,
তুমি স্তনের কাছে কোমল হরিণ পোষ,
সে হরিণ একটি হৃদয়।
(হরিণ/আবুল হাসান)
কবিতাকে ভালোবেসে আমি তাহলে আজীবন কী পুষেছি? সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজলেই ফিরে যাই প্রাণে ঘেরা সিলেট শহরে। জেলা শিল্পকলা একাডেমি ভবনটি সুরমার তীরেই অবস্থিত। সেখানে বসে আপন মনে গান শেখাচ্ছেন কবি-গীতিকার সৈয়দ মুফাজ্জিল আলী। ভরাট কণ্ঠ তাঁর। আমি একজন বিবাগি কিশোর। কবি গেয়েই চলেছেন;
আমি যাইমুরে যাইমু, আল্লার সঙ্গে
হাসন রাজায় আল্লা বিনে কিছু নাহি মাঙ্গে...
তাঁর সঙ্গে কোরাস গাইছেন একদল ছাত্রছাত্রী। শিল্পকলা একাডেমির পাশেই সারদা স্মৃতিভবন। সেখানে চলছে হয়তো কোনো রাজনৈতিক সেমিনার। কিন্তু শিক্ষানবিশ শিল্পীদের রেওয়াজ থামছে না। এই না থামার দৃশ্য দেখতে দেখতেই চোখ রেখেছি শ্রাবণের সুরমা নদীতে।

তিন.
বানের পানিতে কলাগাছের ভেলা ভাসিয়ে ভাদ্রের পাকা ধান তুলে আনছে কৃষক। সে দৃশ্য দেখে আমি আপ্লুত হয়েছি বারবার। বন্যা এসেছে তো কী হয়েছে, বানের পানি নেমে গেলে আবার শুকাবে ধান। ফসলের ঘ্রাণ মাতোয়ারা করবে কিষানির মন। একজন বাউল দার্শনিক কবি আমার পিতামহ ফকির ওমর শাহ সে কথা লিখে গেছেন শত বছর আগে।
বানের পানি ধান নিল মোর
সুখ নিতে তো পারল না
তোমার লাগি রাখছি সখী
বাঁশের বাক্সে ছয় আনা।
মানুষ একসময় প্রেমের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হিসেবে বাঁশের বাক্সে ছয় আনা জমা রেখেছে তার প্রেমিকার জন্য। তাতেই সুখ ছিল। তৃপ্তি ছিল। এখন হিরের আংটিও সুখ এনে দিতে পারছে না। এর কারণ কী? কারণ হচ্ছে, অনেক কৃত্রিম মুখোশ পরে আছে বর্তমান সমাজ। এখানে কবিও প্রাণখুলে লিখতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হন। কবিতার নায়িকার জন্য কবিকে ত্যাগ করে যায় তার ব্যক্তিগত জীবনের ঐশ্বর্য।
বিভিন্ন ভাষাভাষী কবির কথা, জীবনধারা আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখে। তাঁদের কথা শুনি। মিলাই বাংলার সবুজ সীমানার সঙ্গে অন্য কোনো ভূখণ্ডের সবুজের সজীবতা। নিউইয়র্কের কবিদের আড্ডাভূমি গ্রিনিচ ভিলেজের ‘গ্রিনিচ ক্যাফেতে’ বসে শুনে যাই কোনো তরুণ কবির সদ্য রচিত পঙ্‌ক্তিমালা। সেখানে লব্ধ অভিজ্ঞতার অনেক আলোই আমাকে ঝলক দিয়ে যায় মাঝে মাঝে। আমার পরিচিত এক কবি রিয়েন রব্স। একদিন দেখি তিনি খুব বেদনাগ্রস্ত মনে বসে আছেন ক্যাফের এককোণে। জিজ্ঞাসা করি, কী হয়েছে! রিয়েন খুব দুঃখ করে বলেন, গতকাল চার মেয়েবান্ধবী তাঁকে ত্যাগ করে গেছেন। কারণ জানতে চাই আমি। কবি বলেন, ‘টানাপোড়েন চলছিল আমার কবিতা লেখাকে কেন্দ্র করে। আমার কবিতার এক নাম নায়িকা নিয়ে ঘটে বিপত্তি। আমার মেয়ে বান্ধবী মনে করছিলেন আমি ওই নামের মেয়েটির প্রেমে পড়েই তাকে নিয়ে কবিতা লিখছি।
কবিরা লিখতে গিয়ে মাঝে মাঝে এভাবেই ফেরারি হয়ে যান। কে খোঁজ রাখে কার? এই বিশাল বিশ্বে কার এত সময় আছে খোঁজ করার। তন্ন তন্ন করে তাকিয়ে দেখার।
এখানে সূর্য ওঠে
সহসা বৃষ্টি পড়ে
এখানে ফসল ফলে
শিশুরা ক্ষুধায় মরে।
এখানে অনেক নদী
মেঘেরা রঙিন শাড়ি
এখানে ফুলের পাখি
ফেরারি কবির খোঁজে।
এখানে নবীন সবি
শিশুরা ক্ষুধায় কাঁদে
এখানে শোভন সবি
কবিরা দ্বীপান্তরে।
(ফেরারি কবির খোঁজে/আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ)
যে শব্দলগ্ন মন বিচ্ছিন্নতার সঙ্গে ঘর বাঁধে, সেই মন কি প্রকৃত ঘরের দেখা পায় কোনো দিন? বিভিন্ন ভাষাভাষী অনেক কবির আত্মদহনের ঘটনাবলি আমাকে কাতর করে তোলে। একজন প্রতিভাবান কবি তাঁর পঙ্‌ক্তিমালা নিয়ে প্রকাশকের পিছু ছুটছেন। প্রকাশক কবিকে পাত্তাই দিচ্ছেন না। কিংবা ‘আরও লিখুন লিখে যান’ মার্কা উপদেশমালা প্রকাশক ঝুলিয়ে দিচ্ছেন কবির গলায়। ভেবে অবাক হই বাংলা সাহিত্যপ্রেমিকেরা, বাংলা কবিতামোদীরা জীবনানন্দ দাশের মতো তেজি কবিকে তাঁর জীবদ্দশায় যথার্থ সম্মান দেখাতে পারেনি। কেন পারেনি?
এই জিজ্ঞাসা এখনো আমার পাঁজর ভাঙে মাঝে মাঝে। পিঁপড়ারা সারিবদ্ধ হয়ে খুদদানা সংগ্রহ করার জন্য এগিয়ে যায়। পাখিরা ঝাঁক বেঁধে একে অপরের ডানায় ডানা মিলিয়ে উড়ে যায় আকাশে। মানুষ তেমনটি পারে না কেন? মানুষ তো শ্রেষ্ঠ জীবের দাবিদার। তবে কেন এই রক্তের ফোয়ারায় দাঁড়িয়ে মানুষ বারবার বলে—আরও আধিপত্য চাই!
এ এক ভারী অদ্ভুত সময়
কে কার আস্তিনের তলায় কার জন্যে
কোন হিংস্রতা লুকিয়ে রেখেছে
আমরা জানি না।
কাঁধে হাত রাখতেও এখন আমাদের ভয়।
(অদ্ভুত সময়/সুভাষ মুখোপাধ্যায়)
সে সময় ঘিরে ধরছে আমাদের চারপাশ। আমরা ভেসে যাচ্ছি। ঠাঁই পাচ্ছি না।

চার.
প্রতিদিনই আমরা ভিন্ন কবিতার ছায়া মাত্রা মাড়িয়ে পথ চলি। কেউ চলে গেল বলে আমরা যতটা শোকগ্রস্ত হই না, তার চেয়ে অনেক বেশি আনন্দিত হই কারও আগমনে। বিস্মৃত প্রায় নদীদের কঙ্কাল খুঁজে আমরা খুব কমই ফিরি গ্রামীণ প্রান্তরে।
আমলকী গাছে ঠেস দিয়ে আসে শীত
উড়ে গেল তিনটে প্রজাপতি
একটি কিশোরী তার করমচা রঙের হাত মেলে দিল বিকেলের দিকে
সূর্য খুশী হয়ে উঠলেন তাঁর পুনরায় যুবা হতে সাধ হলো।
(নিসর্গ/সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়)
জীবনের রূপান্তর হয়। রূপান্তর হয় কবিতারও। সেই সত্যকে মেনে নিয়ে এগিয়ে যায় প্রজন্ম। কলম হচ্ছে একটি চেতনার প্রতীক। শক্তির উৎস। কলমই পারে তার নিজের সুষম সাম্রাজ্যবাদ সৃষ্টি করে যেতে। পারে নির্মাণ করে যেতে আঁচড়ের সৌর ভূগোল।
পড়তে পড়তে আমি তন্ময় হয়ে থাকি। পড়ি—
আর কী চাও তুমি?
সংকোচিত দিনে রাতের সম্প্রসারিত হস্ত
এখন দিনেই রাতের সঙ্গম শুরু হয়।
উলঙ্গ নৃত্যে লোকালয় উন্মত্ত
লজ্জাহীন সভ্যতার পদলেহন মস্তকে
মৃত্যুর গ্যারান্টিতেও উচ্চকিত জীবনাচার
জীবন্মৃত মোহে বেড়ে ওঠে জীবাশ্ময়।
পরম তুষ্ট চিত্তে তোমার চাওয়ার পূর্ণতায় কি
এসব যথেষ্ট নয়? তবে আর কী চাও তুমি?
(আর কী চাও তুমি/বদরুজ্জামান জামান)
মনের সঞ্চিত দানা ভেঙে পলি সৃষ্টির মানসেই কলম হাতে তুলে নিয়েছিলাম। যারা ভাবতে জানে, তারা বিরহেও ভাসতে জানে। এখন বুঝি কবিতার সহাবস্থান বিশ্বের সমকালকে সমানভাবেই আলোকিত করে যায়। কারণ, একটি সূর্যই আলো দেয় সবাইকে। দেশে দেশে শুধু পরিবেশ-প্রতিবেশ ভিন্ন। কিন্তু প্রকাশের প্রাণরসায়ন সবারই এক। কবিতা যে সব আত্মকথন লিখে যায় তা জীবনেরই প্রবচন পথ। ভাষা ও চিন্তাভেদে এতে বিশেষ কোনো পার্থক্য আছে বলে এখন আমার আর মনে হয় না।