পুরোনো সাইকেল

এক
আজ দেরিতে ঘুম ভেঙেছে। আরও পরেই ভাঙত, যদি না কাজের মেয়েটার আর্তচিৎকার কানে আসত।
মেয়েটা প্রায় প্রতিদিন নিয়ম করে আমার মায়ের হাতে মার খায়। মার মানে বেদম প্রহার! কখনো দুধ জ্বাল দিতে গিয়ে পুড়িয়ে ফেলার অপরাধে, কোনো দিন ভাত চড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ার অপরাধে, কোনো দিন ভেজে রাখা মাছের ডিম খেয়ে ফেলার অপরাধে।
সে প্রথম দফা মার খায় অপরাধের শাস্তি হিসেবে। ব্যথায় চিৎকার করার অপরাধে দ্বিতীয় দফা, ‘চুপ! একদম চুপ!’ দরজার লাঠি, বিরান কাঠি, ঝাড়ু, খুন্তি—কিছুই বাদ যায়নি। এর পাশাপাশি সময়ে-সময়ে উপরি হিসেবে আছে আমার হাতের উত্তম-মধ্যমও।
আমি প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে বিকেলে মাঠে খেলতে যাই। সে তখন বেঘোরে ঘুমায়। রান্নাঘরের স্যাঁতসেঁতে কোণে শুয়ে থাকা ওর ছোট্ট শরীরটাতে সারা দিনের ক্লান্তি এসে ভর করে। ওর একমাত্র বিলাসিতা, ফ্যানের বাতাস। প্রতিদিন বিকেলে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সে যখন ডাইনিং রুমের ফ্যানের সুইচটা টিপে দেয়, তার মুখে তখন বিরল একটা হাসি খেলা করে। ডাইনিং রুমের বাতাস যতটুকু রান্নাঘরের কোণে পৌঁছায়—সারা দিনের পরিশ্রমের বিনিময়ে ওইটুকুই তার বৈধ অর্জন। ফ্যানটি বিকেলভর অনিচ্ছুক অলস ভঙ্গিতে ঘর্ঘর শব্দে ঘুরতে থাকে।
এই ঘুম অবশ্য ওর সুযোগ নয়, বরং বাধ্যতামূলক। আমার মায়ের আদেশ। এর পেছনে একটি কৌশলগত কারণ আছে। বিকেলে না ঘুমালে রাতে সে রুটি বেলার সময় পিঁড়ির ওপর ঘুমে ঢলে পড়ে যায়। সারা শরীর তখন আটায় মাখামাখি! শাস্তিস্বরূপ আরেকবার দুদফা মার খায়! কিন্তু সমস্যা হলো, রাতের বেলা কান্নার আওয়াজ অনেক দূর থেকে শোনা যায়, তখন প্রতিবেশী বাসা থেকে ছেলেমেয়েদের গলা ছেড়ে পড়ার আওয়াজ হঠাৎ থেমে যায়। এতে লোকে বলাবলি করে, এলাকায় সুনাম ক্ষুণ্ন হয়। তার চেয়ে বরং ভালো, ও বিকেলে ঘুমাবে—তাতে একটু রাত জেগে কাজ করতে পারবে।
কালেভদ্রে অচেনা ছুটির সুযোগ যদি সে পেয়েও যায়—অনভ্যস্ততাহেতু কলোনির সমবয়সী বাচ্চাদের সঙ্গে সেভাবে মিশতে পারে না। ওরাও তাকে খেলায় নেয় না। সে এক কোণে চুপ করে বসে থেকে অন্যদের এক্কা-দোক্কা দেখে আর মাঝে মাঝে ফিরে ফিরে তাকায়—কখন আবার ঘর থেকে ডাক আসে। এই হঠাৎ ছুটি তখন সাঙ্গ হয়!
আমি নতুন নতুন সাইকেল চালাতে শিখেছি। দুদিন আগে আমার অষ্টম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। বাবা পুরোনো একটা সাইকেল কিনে দিয়েছেন। নতুন সাইকেল চালাতে শেখা অনেকটা হাঁসের ছানাদের সাঁতার শেখা বা মানব শিশুদের প্রথম হাঁটতে শেখার মতো উৎফুল্ল নিয়ে আসে! আমাকে আর পায় কে! এখন দুটি পা যেন পাখির দুটি ডানা।
মুখে দুটো গুঁজে সাইকেল নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়ে পড়লাম।

দুই
সাইকেল আমাকে নিয়ে যায় যেখানে যেতে চাই সেখানে। কখনো নদীর ধারে, মসজিদের আমগাছের নিচে, খেলার মাঠে, আবাসিক এলাকার পার্কে, বড় রাস্তার ধারে...। পথে পরিচিত কাউকে দেখলে দূর থেকেই মুখে ব্যস্ততার মিছে ভান ফুটিয়ে সাইকেল চালাই, যেন আমি কোনো জরুরি কাজে কোথাও যাচ্ছি, উদ্দেশ্যবিহীন ফ্যা-ফ্যা করে ঘুরে বেড়াচ্ছি না। স্কুলের শিক্ষকদের কাউকে দেখলে অনেক দূর থেকেই সাইকেল থেকে নেমে মাথা নিচু করে রাস্তার মাঝখান থেকে সরে একদিক ধরে হাঁটি। তারপর কাছাকাছি এলে মাথা তুলে আসসালামু আলাইকুম স্যার! তাঁকে অতিক্রম করামাত্রই আবার সাইকেলে উঠে দে ছুট! আচমকা বিরতির ওই ক্ষতিটা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য বাড়তি গতি তখন সাইকেলে।
সহপাঠীদের কারও বাবাদের দেখলে সচরাচর সাইকেল থেকে নামি না। সাইকেলে বসে থেকেই সালাম দিই। তবে সহপাঠী যদি কোনো সুন্দরী মেয়ে হয়, তাহলে তাদের বাবাদের জন্য আছে শিক্ষকদের মতোই বিশেষ সম্মানের ব্যবস্থা। কেন জানি না তাদের কাছে নিজেকে ভালো ছেলে জাহির করার একটা চেষ্টা চলে। অথচ গত সাত বছরে স্কুলের তিনজন মেয়ের সঙ্গেও আমি কথা বলতে পারিনি। মেয়েদের দেখলে আমার বুক দুরু-দুরু করে। তবু মনটা যেন ঠিকই কেমন করে!

সাইকেলটা যে পুরোনো, তা দেখলেই বোঝা যায়। বন্ধুদের কারও কারও হাল ফ্যাশনের লাল রঙের হ্যান্ডেল বাঁকানো সাইকেল আছে। ওদেরগুলো কী সুন্দর, ঝকঝকে! বোঝাই যায় আমাদের বয়সী ছেলেদের জন্যই তৈরি। অত দামি সাইকেল কিনে দেওয়ার সাধ্য আমার বাবার নেই। আমার সাইকেলটাকে ওরা ‘আব্বা, আব্বা কিসিমে’র সাইকেল বলে বিদ্রূপ করে। কিন্তু রুনুর বাবা পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বন্ধুরা যখন আমাকে সাইকেল নিয়ে খেপায়, তখন লজ্জায় যেন মাটির সঙ্গে মিশে যাই। ভদ্রলোক না জানি কত কী ভাবেন।
নদীর ধারে এসে সাইকেল থেকে নামলাম। নদীর একটা ঘ্রাণ আছে, আমার ভালো লাগে। অনেকগুলো নতুন কার্গো বোট থেকে মাল খালাস করছেন খালাসিরা। কী ভারী ভারী বস্তা একেকটা! আমি একদিন চেষ্টা করে দেখেছিলাম। ওগুলো যেন নড়তেই চায় না। অথচ এই কৃশকায় লোকগুলো কী অনায়াসে এই বস্তাগুলো শূন্যে তুলে ফেলে, কাঁধে বহন করে নিয়ে গিয়ে আছড়ে ফেলে! এদের শরীরের গঠন, হাঁটার ধরন—কিছুই আর দশজন স্বাভাবিক মানুষের মতো নয়। ধনুকের মতো টানটান তাদের শরীর হুকুম পরিপালনের অপেক্ষায় সদা প্রস্তুত।
নদীতে আজ তুমুল বাতাস, প্রবল ঢেউ। নীল সাদা পাল তুলে নৌকাগুলো ভাসছে। আজ রোদও খুব চড়া। তবু বাতাস থাকায় খারাপ লাগছে না সাইকেল চালাতে। অনেক আবদারের পর পাওয়া এই শখের সাইকেলের গতি আমাকে খুব আকৃষ্ট করে, আত্মবিশ্বাস জোগায়। মফস্বলের কাঁচা-পাকা শান্ত রাস্তায় ঝাঁকি খেতে খেতে এগিয়ে চলছে আমার সাইকেল।
দূরে দেখলাম রুনুর বাবা আসছেন। শরীরে হালকা শিহরণ বয়ে গেল। ভদ্রলোক যেন আমাকে ভালো ছেলে মনে করেন—বরাবর আমার এটুকুই চাওয়া। অথচ রুনুর সঙ্গে আজ পর্যন্ত কোনো দিন কথা বলার সাহস হয়নি।
উনি কাছে আসতেই সালাম দিতে হাত তুলেছি, অমনি তিনি পাল্টা হাত ইশারা করে থামতে বললেন। আমার বুকে ধুকপুক শুরু হলো! উনি কি এখন আমাকে ‘মাঝে মাঝে বাসায় এসো’ এজাতীয় কিছু বলবেন? আমার ক্লাসের সব ছেলের আরাধ্য, একবার যদি রুনু তাদের ডেকে কথা বলে, যদি একবার তাদের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসে। আজ কিনা আমার কপালেই সেই সুযোগ জুটল!


তিন
সাইকেল থেকে হন্তদন্ত হয়ে নামলাম।
রুনুর বাবা কঠিন চেহারায় অস্থির ভঙ্গিতে বললেন, ‘এই ছেলে! আমার একটা কাজ করে দাও। তোমার সাইকেলটা নিয়ে দ্রুত একটু নতুন রাস্তার কাছে যাও। আমার বাসার কাজের ছেলেটা পালাচ্ছে, ওকে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে থামাবে। ওর পরনে খাকি হাফপ্যান্ট। মনে হয় না সে এখনো নদী পার হতে পেরেছে। তুমি দ্রুত গেলে ওকে ধরতে পারবে। আমি অন্যদিকে যাচ্ছি। ওকে পেলেই যেভাবেই পারো নিয়ে আসবে। বলবে, ওকে কখনো আর মারব না!’
এই প্রথম আমি রুনুর বাবাকে কাছ থেকে ভালোভাবে দেখলাম। সিগারেট খাওয়া রুক্ষ ঠোঁট, চেহারার কঠোরতা সহজেই চোখে পড়ে, যা দূর থেকে অতটা বোঝা যায় না। এমন রুক্ষ একটা লোকের এমন সুন্দর একটা মেয়ে কীভাবে হতে পারে ভেবে পাই না! আমার সঙ্গে কথায়ও তাঁর আদেশের ঢং! তিনি যেন ধরেই নিয়েছেন, আমি তার আদেশ পালন করবই।
এবং করলামও।
কোনো কথা ব্যয় না করেই সঙ্গে সঙ্গে সাইকেল নিয়ে তাঁর সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলাম। যে করেই হোক, ওই ছেলেটাকে বের করে ফিরিয়ে আনতে হবে। রুনুর বাবা আর সঙ্গে ওদের সবার প্রশংসা কুড়াবার এ এক বিরল সুযোগ আমার সামনে।
ভাবতে ভাবতে নতুন রাস্তায় উঠলাম। এ পর্যন্ত আসতেই দশ মিনিট লেগে গেল কিন্তু ছেলেটাকে দেখছি না। নতুন রাস্তা নদীতে গিয়ে মিশেছে। খালাসিরা কার্গো থেকে মাল ট্রাকে তুলে দেয়। ট্রাক নতুন রাস্তার ওপর দিয়ে সেই মাল শহরে নিয়ে যায়। রাস্তায় মালবাহী ট্রাকগুলো ভারী গমগমে আওয়াজ করে আমার কানের পাশে বাতাসের ধাক্কা দিয়ে দ্রুত চলে যাচ্ছে।
হঠাৎ দূরে দেখতে পেলাম, একটা শিশু ছোট ছোট পা ফেলে দ্রুতলয়ে হেঁটে যাচ্ছে। হাতে ঝুলছে একটা পলিথিন ব্যাগ। আরও কাছে আসতে বুঝলাম, এই শিশুটিই সম্ভবত যে রুনুদের বাসা থেকে পালিয়েছে। দ্রুত সাইকেলে ছুটলাম যেন নদীর ঘাটে নৌকায় ওঠার আগেই তাকে ধরে ফেলতে পারি। ওর হাঁটা যেন একটু এলোমেলো। দীর্ঘক্ষণ এত দূর পথ হেঁটে আসার ক্লান্তি তার হাঁটার ভঙ্গিমায় সুস্পষ্ট। কাছে গিয়ে সাইকেল থেকে নেমে ওকে থামালাম।
পরনে খাকি একটা হাফপ্যান্ট আর গায়ে কোঁচকানো একটা মলিন সাদা শার্ট। হাতে নীল একটা পলিথিন ব্যাগ, তাতে দু-একটা দলা পাকানো কাপড়, তারই শার্ট-গেঞ্জি হবে। জানলাম ওর নাম সবুজ।
বললাম, কেন চলে যাচ্ছিস?
সবুজ: আমারে হেরা মারে, তাই।
—আর মারবে না, তুই ফিরে চল।
সবুজ: হেরা আগেও এমন কইছে। তারপরেও মারে।
—তুই আগেও পালিয়েছিলি?
সবুজ: আমার মা আমারে আনতে গেলে হেরা কইতো, আমারে আর মারবে না।
—কেন মারে?
সবুজ: ভাতের মাড় গালতে গেলে ভাত পড়ে যায়। ভাতের হাঁড়িটা এত ভারী আর গরম যে আমি ঠিকমতো ধরতে পারি না। একবার গরম মাড় পড়ে আমার পা পুইড়া গিয়েছিল।
বলেই পা দেখাল। এখনো ঊরুর কাছে চামড়া পোড়া। তারপর বলতে থাকল, আমি কাপড়ও নাড়তে পারি না। দড়িটা এত উঁচু যে নাগাল পাই না। আমারে হেরা শুধু শুধু মারে!
একনিশ্বাসে অভিযোগের মতো করে আমার কাছে কথাগুলো বলতে বলতে ওর চোখের কোণে অশ্রু এসে ভিড় করল।
—এখন কই যাবি?
সবুজ: ওই পাড়ে। ওই খালাসি পাড়ায় আমার মা থাকে।
—ও! তোর বাবা খালাসি?
সবুজ: হ্যাঁ।
—আচ্ছা, শোন সবুজ। তুই এবারের মতো চল। আমি ওদের বুঝিয়ে বলব যেন তোকে আর না মারে।
সবুজের চোখেমুখে আতঙ্ক আর অবিশ্বাস!

চার
বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ওকে রাজি করালাম আমার সঙ্গে যেতে। আমাকে যে ওকে নিয়ে যেতে পারতেই হবে! তবে যতটা কঠিন হবে ভেবেছিলাম, অতটা কঠিন হয়নি। বড়জোর আট-নয় বছর বয়স হবে। খুবই শান্ত নরম গোছের একটা ছেলে। একরকম অনায়াসেই ধরা দিল।
জীবনে প্রথম রুনুদের বাসার কলবেলে চাপ দিলাম। বুকটা ভীষণ ধুকপুক করছে! যদি রুনু দরজা খোলে! আমার আরেক হাতে ধরা সবুজের হাত। রুনু এসে আমাকে ভেতরে নিয়ে বসালে সাইকেলটা আবার চুরি হয়ে যেতে পারে। সাইকেলটা তাই ওদের গেটের কাছেই তালা দিয়ে এসেছি।
রুনুর বাবা দরজা খুললেন। কিন্তু, আমার সঙ্গে সবুজকে দেখেই আশ্চর্য ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন! মোটা রোমশ হাত বাড়িয়ে সবুজের কানে ধরলেন আর আরেক হাতে দিলেন বিশাল এক চড়! সবুজ আর্তচিৎকার করে উঠল, ‘মা গো’ ‘মা গো’ করে হাউমাউ কান্না জুড়ে দিল। সবুজ করুণ চোখে একবার আমার দিকে তাকাল।
আমি মিনমিন করে বললাম, ‘আমি বলে এনেছি, ওকে আপনারা মারবেন না!’ নিজের কান অব্দিই যেন কথাটা পৌঁছাল না।
ইতিমধ্যে রুনুর মাও এসে দরজায় হাজির। হাঁপাচ্ছেন! ভারী শরীরের কারণে অথবা রোষে! তিনি কান্নারত সবুজের হাত ধরে টানতে টানতে তাকে ভেতরে নিয়ে গেলেন। ছেলেটা যেতে যেতে অসহায় কান্নাভেজা চোখে আমার দিকে ফিরে তাকাল!
একঝলক রুনুকে দেখলাম, নিজের ঘর থেকে একবার বের হয়ে কোলাহল দেখে আবার ভেতরে চলে গেল। আমার দিকে ফিরেও তাকাল না।

পাঁচ
পা টানতে টানতে ওই বাসা থেকে বের হয়ে এলাম। আমার কেন জানি ভীষণ কান্না পাচ্ছে! নিজেকে একাধারে প্রতারিত ও প্রতারক মনে হতে লাগল। শিশুটাকে নিজ হাতে এমন জালিমের হাতে তুলে দিয়ে এলাম!
বাসায় ফিরতে ফিরতে সবকিছু কেমন যেন ওলট-পালট মনে হতে লাগল। দুপুরে খেতে বসে গলা দিয়ে খাবার নামল না! বারবার সবুজের ওই কচিমুখটা আমার চোখে ভাসছে। ও এখন কী অবস্থায় আছে? ওর মা নিশ্চয়ই অন্য কোনো বাসাবাড়িতে অথবা ধানের চাতালে কাজ করছেন। ওর বাবা হয়তো কোনো নতুন কার্গো বোট থেকে বিরামহীনভাবে মাল খালাস করে চলেছেন। তাঁরা জানেনও না আজ তাঁদের ছেলে চুরি হয়েছে!

ছয়
পরদিন সকালেও ঘুম ভাঙল কাজের মেয়েটার আর্তচিৎকার শুনে। কিন্তু, আজ কান্নাটা যেন অন্য রকম শোনাল আমার কাছে।
দুপুরে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে মাটির ব্যাংকটা ভেঙে দুই শ টাকা জড়ো করলাম। মেয়েটাকে ডেকে ওর হাতে দিলাম। বললাম, ‘পালিয়ে যা!’ বড় রাস্তায় গিয়ে বাসে উঠলেই ঘণ্টা দেড়েকের পথ। তারপর ওদের গ্রাম। সে নিশ্চয়ই যেতে পারবে।
মেয়েটা হতভম্ব চোখে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিল। তারপর দ্রুত হাতে একটা ব্যাগে অল্প কিছু কাপড় ঢুকিয়ে দরজা খুলে বের হয়ে গেল।
আমার ভীষণ আনন্দ হলো। এই প্রশান্তির সুখ আমার অপরিচিত।

সাত
আবাসিক কলোনির দারোয়ান গেটেই মেয়েটাকে আটকে ফেলেছে। তারা তাকে বাসায় নিয়ে এলে একটা তুমুল হইচই বেঁধে গেল! দুই শ টাকা চুরি করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার অমার্জনীয় অপরাধে গৃহকর্ত্রী যখন তাকে বেদম পেটাচ্ছিলেন, প্রতিবেশীরাও এবার তাতে উৎসাহ দিচ্ছিল—যাতে তাদের কাজের মেয়েরাও একটা শিক্ষা পায়!
আমি তখন সাইকেলে। ছুটছি আর ছুটছি...