আমেরিকা-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ

কোনো যুদ্ধ শুরু করা যতটা সহজ, ইতি টানা ততটাই কঠিন। আমেরিকা-চীন সাম্প্রতিক বাণিজ্যযুদ্ধের সর্বশেষ রূপ দেখে প্রয়াত সাংবাদিক ও সাহিত্যিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের এই উক্তি মনে আসে। বিশ্বের দুই সর্ববৃহৎ অর্থনীতি যেভাবে যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, তাতে অচিরেই কোনো সমাধান পাওয়া যাবে এমন চিন্তা করাও কঠিন।
নির্বাচনী প্রচারকালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সমতা প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য তিনি ক্ষমতায় বসার প্রথম দিন থেকে সক্রিয়। মেক্সিকো-কানাডা-আমেরিকার মধ্যকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে তাঁর একটুও সময় লাগেনি। প্রতিবেশী কানাডার ইস্পাতসহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক আরোপ করতে তিনি পিছপা হন না। ইউরোপকে সবক দিয়েছেন, (ন্যাটোর মাধ্যমে) নিরাপত্তা চাইলে প্রতিরক্ষায় বরাদ্দ বাড়াও। ফেল কড়ি মাখো তেল। ফ্রি খাওয়ার দিন শেষ। ট্রাম্প যে ব্যবস্থা নিয়েছেন তাতে সাদা চোখে তা আমেরিকার পক্ষে মনে হলেও আসলেই সেটা ঠিক কি না, তা লাখ টাকার প্রশ্ন।
কারণ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিশ্বে আমেরিকার নেতৃত্বে ইউরোপ ও অন্য পশ্চিমা সহযোগীদের সমন্বয়ে যে জোট গড়ে উঠেছিল, তার প্রয়োজনীয়তা হারিয়েছে; এ কথা বলা কঠিন। বরং ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও পূর্ব ইউরোপে কমিউনিস্ট শাসনের বিদায়ের পর যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল, তা আজ আর নেই। বলা যায়, পুতিনের জমানায় আবার শীতল যুদ্ধের সেই দিন ফিরে এসেছে। ফলে দীর্ঘদিনের বন্ধুদেশগুলোকে চটিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আসলেই কী অর্জন করতে চাইছেন, তা অনুমান করা শক্ত।
এর মধ্যে ট্রাম্প নেমে পড়েছেন চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক যুদ্ধে। চীনে উৎপাদিত পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে তিনি মার্কিন উদ্যোক্তাদের দেশে পণ্য উৎপাদনে উৎসাহিত করছেন। এর থেকে বোঝা যায়, অর্থনীতির বিষয়াবলিকে অতিসরলীকরণ করে ফেলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। শুল্ক আরোপ করলেই মার্কিন উদ্যোক্তারা দেশে ফিরবেন এমন কোনো গ্যারান্টি নেই। দুই. আমেরিকায় পণ্য উৎপাদিত হলে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে, ফলে মার্কিন ভোক্তাদের বেশি দাম দিয়ে জিনিস কিনতে হবে, যা কিনা তাঁরা আগে কম দামে পেতেন।
আবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে চীন পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে। এতে মার্কিন পণ্য চীনে ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে। ফলে পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের ঘটনায় বিচ্যুত হবে মুক্ত বাণিজ্যের মূল উদ্দেশ্য। অথচ এই তত্ত্বের রূপকার আমেরিকা নিজেই। এখন তাহলে হঠাৎ করে কেনই-বা নিজেকে রুদ্ধ করার প্রয়োজন পড়ল, সেই ব্যাখ্যা ট্রাম্প প্রশাসনকেই দিতে হবে।
আলিবাবার প্রধান জ্যাক মা মনে করেন, ট্রাম্প যে সমস্যা সৃষ্টি করেছেন, তা আগামী ২০ বছরের আগে তার সমাধান কঠিন। কিন্তু এই সময়কালে কাকে কত মূল্য দিতে হবে, তা কি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বা তাঁর সহযোগীরা হিসাব করেছেন?